রোগনির্ণয়ের সুযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে দেশে স্তন ক্যানসার বেশি শনাক্ত হচ্ছে। ৩০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা হলে স্তন ক্যানসার পুরোপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এর জন্য আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে হালনাগাদ জ্ঞান থাকা দরকার।

আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত পঞ্চম বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ব্রেস্ট ক্যানসার স্টাডি (বিএসবিসিএস) এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। দুই শতাধিক দেশি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত থেকে ১৮ জন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফস্প্যান ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মেডিসিন ও সার্জারির অধ্যাপক ডন এস ডিজন বলেন, ক্যানসার পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। চিকিৎসকদের রোগীর প্রতি ভালোবাসা-দরদ রোগী ভালো হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাজ করে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের একে অন্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া জরুরি।

স্বাগত বক্তব্যে আয়োজক সংগঠন বিএসবিসিএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক মো.

সেলিম রেজা বলেন, স্তন ক্যানসারবিষয়ক বৈশ্বিক জ্ঞান আদান-প্রদানের উদ্দশ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে মেডিকেল অনকোলজি, মেডিকেল ফিজিকস সম্পর্কে সর্বসাম্প্রতিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাবেন এ দেশের চিকিৎসক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের জ্যেষ্ঠ ক্যানসার চিকিৎসক অধ্যাপক এম এ হাই বলেন, শরীরের চিকিৎসাই একমাত্র চিকিৎসা নয়। ক্যানসার রোগীদের আত্মার চিকিৎসা সমানভাবে জরুরি। চিকিৎসককে রোগীর শরীর ও আত্মাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এতে ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।

সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক সানোয়ের হোসেন বলেন, পুরো বিশ্বের ও বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ব্যাপকতা বেশি। ৩০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। এই বয়সী ১ লাখ নারীর মধ্যে ১৯ জনের স্তন ক্যানসার দেখা দিচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ও আয়োজক সংগঠন বিএসবিসিএসের প্রসিডেন্ট অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ক্যানসার হলেই মানুষ মারা যাবে, এমন ধারণা থেকে মানুষ সরে আসছে। স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও ক্যানসার হলেই স্তন পুরোটা, এমনকি বগোলের এক অংশবিশেষ কেটে ফেলে দেওয়া হতো। এখন তা করা হয় না। চিকিৎসাপদ্ধতি ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে স্তন ক্যানসার চিকিৎসার সময় অনেক কমে আসছে।

সকালে একটি প্লানারি অধিবেশনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় বিকিরণ চিকিৎসা (রেডিয়েশন থেরেপি) ভালো কাজে আসে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন চ ক ৎসক

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন

কর্দোভার সংকীর্ণ গলিতে এক নারী দ্রুত পা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর হাতে একটি কাঠের বাক্স, ভেতরে হাতে তৈরি মলম ও ঔষধি গাছ। তিনি আল-জাহরাভির কন্যা, একজন ধাত্রী, যিনি প্রসূতি মায়েদের সেবা করছেন। তাঁর কাজ শুধু শারীরিক নিরাময় নয়, বরং একটি সম্প্রদায়ের আস্থা ও আশার প্রতীক।

মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বে মুসলিম নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা এমন অগণিত গল্প রচনা করেছেন, যা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সমাজের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলেছে। তৃতীয় ও শেষ পর্বে আমরা তাঁদের প্রভাব, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে তুলনা এবং তাদের ঐতিহাসিক স্বীকৃতির চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করব।

চিকিৎসাবিজ্ঞানে নারীদের ছাপ

মুসলিম নারী চিকিৎসকদের কাজ মুসলিম বিশ্বের চিকিৎসাব্যবস্থাকে একটা কাঠামো দিয়েছে। রুফায়দা আল-আসলামিয়া (রা.)-এর মোবাইল হাসপাতালের ধারণা আধুনিক ফিল্ড হাসপাতালের পূর্বসূরি। তাঁর তাঁবু যা মদিনার মসজিদে নববিতে স্থাপিত হয়েছিল, স্বাস্থ্যসেবার মডেল হিসেবে কাজ করেছে।

২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারিতে মসজিদগুলো চিকিৎসা ও টিকাকরণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা রুফায়দার মসজিদভিত্তিক তাঁবুর সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।

এই মডেল পরবর্তী সময়ে আব্বাসীয় যুগের বিমারিস্তানে (হাসপাতাল) প্রতিফলিত হয়, যেখানে শিহাবুদ্দিন আল-সায়িগের (মৃ. ১৬২৭ খ্রি.) কন্যার মতো নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। (আল-সাঈদ, আত-তিব ওয়া রায়িদাতুহু আল-মুসলিমাত, পৃ. ১৮৯, আম্মান: দারুল ফিকর, ১৯৮৫)

নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আল-জাহরাভির (৯৩৬-১০১৩ খ্রি.) গ্রন্থ আত-তাসরিফ নারী চিকিৎসকদের জন্য শিক্ষার ভিত্তি ছিল, বিশেষ করে প্রসূতি ও গাইনোকোলজিতে। এই গ্রন্থ ইউরোপে অনূদিত হয়ে রেনেসাঁসের চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রভাব ফেলেছে। ১৯০৮ সালে গ্রন্থটির আধুনিক সংস্করণ প্রকাশ পেয়েছে কায়রো ‘দারুল কুতুব’ থেকে।

আন্দালুসে উম্ম হাসান বিনত কাজি তানজালি (১৪ শতক) চিকিৎসাশিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম তৈরি করেন, যা শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। (আবু বকর ও আল-সাদি, আন-নিসা ওয়া মিহনাত আল-তিব, পৃ. ২১২, কায়রো: দারুল কুতুব, ১৯৯৯)

এই কাজগুলো আধুনিক পাবলিক হেলথ সিস্টেমের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুনযে নারী সাহাবির বিয়ের পরামর্শদাতা ছিলেন রাসুল (সা.)২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩নারীদের ওষুধ তৈরি ও শল্যচিকিৎসার কাজ চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন দফা দাবিতে সিলেটের ওসমানী হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির ডাক
  • উদ্ধার হলো এয়ার ইন্ডিয়ার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ব্ল্যাক বক্স
  • মুসলিম নারী চিকিৎসকেরা হারিয়ে গেলেন কেন