৩০-৪৪ বছর বয়সীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি
Published: 28th, February 2025 GMT
রোগনির্ণয়ের সুযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে দেশে স্তন ক্যানসার বেশি শনাক্ত হচ্ছে। ৩০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। ঠিক সময়ে ঠিক চিকিৎসা হলে স্তন ক্যানসার পুরোপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। এর জন্য আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে হালনাগাদ জ্ঞান থাকা দরকার।
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত পঞ্চম বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সোসাইটি ফর ব্রেস্ট ক্যানসার স্টাডি (বিএসবিসিএস) এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে। দুই শতাধিক দেশি ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত থেকে ১৮ জন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফস্প্যান ক্যানসার ইনস্টিটিউটের মেডিসিন ও সার্জারির অধ্যাপক ডন এস ডিজন বলেন, ক্যানসার পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। চিকিৎসকদের রোগীর প্রতি ভালোবাসা-দরদ রোগী ভালো হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাজ করে। একই সঙ্গে চিকিৎসকদের একে অন্যের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া জরুরি।
স্বাগত বক্তব্যে আয়োজক সংগঠন বিএসবিসিএসের ভাইস প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক মো.
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের জ্যেষ্ঠ ক্যানসার চিকিৎসক অধ্যাপক এম এ হাই বলেন, শরীরের চিকিৎসাই একমাত্র চিকিৎসা নয়। ক্যানসার রোগীদের আত্মার চিকিৎসা সমানভাবে জরুরি। চিকিৎসককে রোগীর শরীর ও আত্মাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। এতে ভালো ফল পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক অধ্যাপক সানোয়ের হোসেন বলেন, পুরো বিশ্বের ও বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ব্যাপকতা বেশি। ৩০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি। এই বয়সী ১ লাখ নারীর মধ্যে ১৯ জনের স্তন ক্যানসার দেখা দিচ্ছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি ও আয়োজক সংগঠন বিএসবিসিএসের প্রসিডেন্ট অধ্যাপক কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ক্যানসার হলেই মানুষ মারা যাবে, এমন ধারণা থেকে মানুষ সরে আসছে। স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় বাংলাদেশের বেশ অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। কিছুদিন আগেও ক্যানসার হলেই স্তন পুরোটা, এমনকি বগোলের এক অংশবিশেষ কেটে ফেলে দেওয়া হতো। এখন তা করা হয় না। চিকিৎসাপদ্ধতি ও প্রযুক্তির উন্নতির কারণে স্তন ক্যানসার চিকিৎসার সময় অনেক কমে আসছে।
সকালে একটি প্লানারি অধিবেশনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে এক গবেষণায় দেখা গেছে বেশি বয়সী নারীদের স্তন ক্যানসার চিকিৎসায় বিকিরণ চিকিৎসা (রেডিয়েশন থেরেপি) ভালো কাজে আসে না।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানালেন ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সর্বশেষ অবস্থা জানিয়েছেন তাঁর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই চিকিৎসকের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ–সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠান।
‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের সর্বশেষ আপডেট’ শীর্ষক ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত কয়েক দিনের বিভিন্ন পরীক্ষা–নিরীক্ষায় তাঁর স্বাস্থ্যে বেশ কিছু জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়া এবং কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা এবং বিআইপিএপি মেশিনের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাঁর ফুসফুস ও অন্যান্য অর্গানকে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য তাঁকে ইলেক্টিভ ভেন্টিলেটর সাপোর্টে নেওয়া হয়।’
গত ২৭ নভেম্বর খালেদা জিয়ার ‘অ্যাকিউট প্যানক্রিয়েটাইটিস’ ধরা পড়ে, যেগুলোর নিবিড় চিকিৎসা এখনো চলছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়, ‘শরীরে গুরুতর ইনফেকশনের (ব্যাকটেরিয়া অ্যান্ড ফাঙ্গাল ইনফেকশন) কারণে তাঁকে উন্নত অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
পাশাপাশি কিডনির কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর ডায়ালাইসিস শুরু করা হয়। এখনো নিয়মিত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে বলেও জানানো হয় বিবৃতিতে। এ ছাড়া পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ ও ‘ডিআইসি’র ফলস্বরূপ তাঁকে রক্ত ও রক্তের বিভিন্ন উপাদান (ব্লাড অ্যান্ড ব্লাড প্রোডাকশন) ট্রানফিউশন দিতে হচ্ছে।
সব চিকিৎসার পরও জ্বর না কমার কারণে এবং পাশাপাশি রেগুলার ইকোকার্ডিওগ্রাফিতে অরটিক ভাল্ভে কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হওয়ায় টিইই (ট্রান্স অয়েসোপিগাল ইকো) করা হয় এবং সেখানে ইনফেক্টিভ এন্ডোকার্ডাইটিস ধরা পরে। সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ডের দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের পরামর্শে এ রোগের চিকিৎসা গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করা হয়।
সাবেক এই সরকারপ্রধান দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এর মধ্যে রয়েছে লিভারসংক্রান্ত জটিলতা, কিডনিসংক্রান্ত জটিলতা, হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও ইনফেকশন–জনিত সমস্যা। এগুলোর চিকিৎসা তিনি দীর্ঘদিন ধরে পেয়ে আসছেন।
নিজ বাসভবনে অবস্থানকালে তাঁর শ্বাসকষ্ট, কাশি, জ্বর ও শারীরিক দুর্বলতা দেখা যায়। কিন্তু ক্রমান্বয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি-পরবর্তী পরীক্ষা–নিরীক্ষায় তাঁর ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র ও কিডনির অবস্থার দ্রুত অবনতি পরিলক্ষিত হওয়ায় তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে কেবিন থেকে উন্নত চিকিৎসা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়।
চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণখালেদা জিয়ার চিকিৎসাসংক্রান্ত এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি বিবৃতিতে তুলে ধরা হয় চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণও। তাতে বলা হয়, ‘দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাঁর চিকিৎসা দিয়ে আসছেন।’ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসা নিয়ে কোনো অনুমান বা ভুল তথ্য প্রচার না করে মেডিকেল বোর্ডের প্রতি আস্থা রাখার আহ্বানও জানানো হয় তাতে।
গত ২৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকে অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।
আরও পড়ুনচিকিৎসায় ‘সাড়া দিচ্ছেন’ খালেদা জিয়া১০ ডিসেম্বর ২০২৫আরও পড়ুনআপাতত ঢাকায় রেখে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলবে ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫