ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ও বুলডোজার বিক্রি
Published: 1st, March 2025 GMT
সানবিডি২৪ এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন
যুক্তরাষ্ট্র দখলদার ইসরায়েলের কাছে ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের যুদ্ধাস্ত্র, বুলডোজার এবং সংশ্লিষ্ট সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদনের ঘোষণা দিয়েছে। স্থানীয় সময় শুক্রবার এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ইসরায়েল ঘনবসতিপূর্ণ গাজায় আমেরিকার তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলেছিল।
এ বিষয়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ২.
ডিএসসিএ বলেছে, ‘রুবিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইসরায়েল সরকারের কাছে উপরোক্ত প্রতিরক্ষাসামগ্রী এবং প্রতিরক্ষা পরিষেবা অবিলম্বে বিক্রি করা জরুরি বলে জানিয়েছেন।’ এর ফলে কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত এ ধরনের বিক্রয়ের স্বাভাবিক প্রয়োজনীয়তা থেকে অব্যাহতি পাওয়া যায় বলে ডিএসসিএ জানিয়েছে।
ডিএসসিএ আরো বলেছে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ এই মাসের শুরুতে ওয়াশিংটন ইসরায়েলের কাছে ৭.৪ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র এবং সম্পর্কিত সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দেওয়ার পর সর্বশেষ অস্ত্র লেনদেন শুরু হয়েছে।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর অভূতপূর্ব আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে একটি বিশাল ধ্বংসাত্মক আক্রমণ শুরু করে।
যুদ্ধে ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী সংকীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল গাজার বেশির ভাগ অংশ ধ্বংস হয়ে যায়। এর ফলে ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার বেশির ভাগই বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে। তবে গত মাস থেকে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে।
বেসামরিক মৃত্যুর উদ্বেগের প্রতিক্রিয়ায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের প্রশাসন গত বছর ইসরায়েলে দুই হাজার পাউন্ড বোমার চালান আটকে দেয়। কিন্তু তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন এবং শুক্রবার ঘোষিত বিক্রিতে সেই আকারের অস্ত্র অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সূত্র : এএফপি
এনজে
উৎস: SunBD 24
এছাড়াও পড়ুন:
লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়
“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।”
এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক।
উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”
তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।
আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।”
চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।
লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।”
চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”
মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।