কুষ্টিয়া অঞ্চলে আবার মাথা তুলছে চরমপন্থিরা
Published: 2nd, March 2025 GMT
অপারেশন ডেভিল হান্ট চলার মধ্যে চরমপন্থিরা তৎপরতা বাড়িয়েছে। বিশেষ করে কুষ্টিয়াসহ আশপাশের অন্তত ছয়টি জেলায় নতুন করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে। এসব জেলায় হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি গুলি ও বোমা ফাটিয়ে অবস্থান জানান দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা ও চরমপন্থি বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কুষ্টিয়াসহ আশপাশের তিন জেলার পলাতক আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিএনপি-জামায়াত নেতাদের কারও কারও সঙ্গে যোগযোগ আছে চরমপন্থিদের। ঠিকাদারি কাজ, হাট-ঘাট, বাঁওড়-বিল দখলে নিতে এখন মরিয়া তারা। একই সঙ্গে বালুমহালগুলোতে ভাগ বসাতে চায়। চরমপন্থিদের সঙ্গে দেনদরবার না করে দরপত্র, হাট-ঘাট ও বড় জলাশয় ইজারা নেওয়া কঠিন বলে মনে করছেন ঠিকাদাররা। চরমপন্থিদের চোখ এখন সরকারি কাজে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কথিত বন্দুকযুদ্ধে টিকতে না পেরে বেশির ভাগ চরমপন্থি পালিয়ে যান। যারা দেশে ছিলেন, ঘাপটি মেরে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানে চরমপন্থি সংগঠনগুলোর কাঠামো ভেঙে গিয়েছিল। গত ৫ আগস্টের পর পুলিশের পরিচালন দুর্বলতাসহ নানা কারণে চরমপন্থিরা সুযোগ নিচ্ছে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত পালিয়ে থাকা অনেক চরমপন্থি এখন নিরাপদে থেকে কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছেন। গত ৫ আগস্ট থানা থেকে খোয়া যাওয়া অস্ত্র চরমপন্থিদের হাতে। বিশেষ করে শটগানের মতো অস্ত্র নিয়েছে তারা।
মাঠ পর্যায় থেকে চরমপন্থিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন এমন একজন গোয়েন্দার সঙ্গে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক। তিনি সমকালকে বলেন, ‘কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রাজবাড়ী, পাবনা ও মেহেরপুরে চরমপন্থিদের তৎপরতা যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। বিশেষ করে চর ও নদী এলাকায় তাদের অবস্থান শক্ত। খুব সহজে তারা ট্রলার ও নৌযান ব্যবহার করে অভিযান পরিচালনা করছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় গত কয়েক মাসে অন্তত ৪-৫টি ঘটনা ঘটিয়েছে। বেশির ভাগ ঘটনাই নদীপথে।’
ওই কর্মকর্তা জানান, পদ্মায় বালুমহালের দখল নিতে কুমারখালীর কয়া, হরিপুর ও ভেড়ামারায় বেশ কয়েকটি হামলা হয়েছে। সেখানে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যালয় লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে। সর্বশেষ কয়া এলাকার একটি বালুঘাটে রাতে সশস্ত্র সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে এসে হামলা করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। এসব ঘটনার পেছনে চরমপন্থি সংগঠনের সদস্যরা জড়িত।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, আগে কুষ্টিয়া এলাকায় জাসদ গণবাহিনীর (লাল) প্রভাব ছিল। লাল নিহত হওয়ার পর সংগঠনের বাকি নেতাদের কয়েকজন পলাতক অবস্থায় ভারতে মারা যান। তবে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা এখনও বেঁচে আছেন। এর মধ্যে কালু, ফারুকসহ আরও কয়েকজন শীর্ষ নেতা আত্মগোপনে থেকে এখন দল পরিচালনা করছেন। কালুর দলে ৭০-৮০ জন সদস্য। তাদের হাতে আধুনিক অস্ত্র। সম্প্রতি কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ থেকে এমন তথ্য মিলেছে। কালুর অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তিনি দেশে, না দেশের বাইরে সেটি জানা যাচ্ছে না। তবে সোর্স জানিয়েছেন, কালু দেশে আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনা, নাটোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে কালুর লোকজন রয়েছে। জাসদ গণবাহিনীর নামে তারা সংগঠন পরিচালনা করছে। কয়েক দিন আগে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার রামচন্দ্রপুরে একটি শ্মশান ঘাটে তিনজনকে হত্যা করা হয়। একই জায়গায় দেড় যুগে হত্যা করা হয় আটজনকে। কুষ্টিয়ার সীমানায় অবস্থিত জায়গাটি। সর্বশেষ নিহত তিনজনের মধ্যে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ চরমপন্থি হানিফ ছিল। সে এক সময় ডাকাতি, হাট-ঘাট, দরপত্র নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপকর্ম করত। সম্প্রতি আবার দল গোছানোর কাজ করছিল গোপনে।
এ হত্যাকাণ্ডের আধা ঘণ্টার মধ্যে দায় স্বীকার করে কালুর নামে ঝিনাইদহের সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হয়। হানিফের সহযোগীদের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় ওই বার্তায়।
হানিফের বাড়ি হরিণাকুণ্ডু উপজেলায়। ওই উপজেলায় অনেক বিল-বাঁওড় আছে। এসব দখলে নিতে বেশ কয়েকটি পক্ষ তৎপর। পাশাপাশি নতুন বছরে হাটগুলো ইজারা দেওয়া হবে। এসব হাট-বিল এবং বাঁওড়ের দখল নিতে কাজ করছে চরমপন্থিরা। বিএনপির অনেক নেতা এসব নিয়ন্ত্রণে নিতে এখন সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।
জাসদ গণবাহিনীর পাশাপাশি, গণমুক্তিফৌজ ও বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির গোপন সদস্যরা তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে। যেসব অস্ত্র মাটির নিচে পুঁতে রাখা ও গোপন স্থানে রাখা ছিল, সেগুলোর ব্যবহার শুরু করেছেন সদস্যরা। তবে জাসদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘জাসদ গণবাহিনী নামে কোনো সংগঠন নেই। গোপন কোনো সংগঠনের সঙ্গে জাসদের সম্পৃক্ততা নেই।’
কুষ্টিয়া অঞ্চলে চরমপন্থি সংগঠনগুলোর গতিবিধির খোঁজখবর রাখেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন একজন ব্যক্তি বলেন, ‘৫ আগস্টের পর চরমপন্থিদের তৎপরতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে জাসদ গণবাহিনীর (কালু) তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। তাদের দলে এ মুহূর্তে সদস্য সংখ্যা অনেক। এ ছাড়া বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির বেশ কয়েকটি ছোট গ্রুপ সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তারা সাবধানতা অবলম্বন করছে। জাসদ গণবাহিনীর চলাফেরা এখন অনেক বেশি। এ ছাড়া ব্যক্তিকেন্দ্রিক আরও কিছু ছোট গ্রুপ আছে, তারাও নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে।’
নতুন করে তৎপরতা বাড়ায় ভাবিয়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে। সরকারের নির্দেশে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি সংস্থা সংগঠনগুলোর হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করছে। তাদের কাছে খবর আছে, এসব সংগঠন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। গত ১৫ বছর কোণঠাসা এসব সংগঠন আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে। ঠিকাদারি কাজ, হাট-ঘাট ও বিল-বাঁওড়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইতোমধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। অনেকে ভয়ে দরপত্র কিনতে ভয় পাচ্ছেন।ঠিকাদারদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। নতুন করে হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যেখানে সারাদেশে ডেভিল হান্ট অপারেশন চলছে তার মধ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া ও তিনজনকে হত্যা করে দায় শিকার করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। সামনে এ ধরনের আরও ঘটনা ঘটবে বলে আশঙ্কা তাদের। হঠাৎ করে চরমপন্থিদের উত্থান হওয়ার পেছনে পুলিশ বাহিনীর দুর্বলতা, সোর্স না থাকা, থানাগুলোতে নতুন কর্মকর্তা পদায়নকে দায়ী করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘চরমপন্থি সংগঠনগুলোর বিষয়ে কাজ চলছে। হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। শিগগির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চরমপন থ দ র স গঠনগ ল র চরমপন থ র অবস থ ন ন সদস য ঝ ন ইদহ স গঠন র হওয় র
এছাড়াও পড়ুন:
নাইজেরিয়ায় কেন হামলা চালানোর হুমকি দিলেন ট্রাম্প
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া যদি সেখানে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, তবে দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার ট্রাম্প বলেন, তিনি তাঁর প্রতিরক্ষা বিভাগকে দ্রুত সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল ও প্রধান তেল উত্তোলনকারী দেশ নাইজেরিয়া। ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে নাইজেরিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের সহায়তাও অবিলম্বে বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন।
ট্রাম্প লেখেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী পাঠায়, তবে তারা পূর্ণ সামরিক শক্তি নিয়ে অভিযান চালাবে এবং যারা এ নৃশংস ঘটনা ঘটাচ্ছে, সেই “ইসলামপন্থী” সশস্ত্র দলকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলবে।
তবে নাইজেরিয়ায় খ্রিষ্টানদের সঙ্গে কোন ধরনের নৃশংস আচরণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে ট্রাম্প নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ বা বিবরণ দেননি। নাইজেরিয়াকে তিনি ‘নিন্দিত রাষ্ট্র’ বলে বর্ণনা করেন এবং দেশটির সরকারকে হুঁশিয়ার করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেন।
নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আশা করছে, এ লড়াইয়ে ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে থাকবে।ট্রাম্প লেখেন, ‘যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত ও ভয়ানক; ঠিক যেমন অস্ত্রধারীরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর আক্রমণ করছে।’
ট্রাম্পের সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণের হুমকির বিষয়ে আবুজা থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে হোয়াইট হাউসও কিছু জানায়নি।
যদি আমরা আক্রমণ করি, তা হবে দ্রুত, ভয়ানক; ঠিক যেমন অস্ত্রধারীরা আমাদের প্রিয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করছে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টট্রাম্পের এ হুঁশিয়ারি দেওয়া বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য বার্তা সংস্থা রয়টার্স থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তারা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে কথা বলতে বলেছে।
তবে রয়টার্সের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা না বললেও মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘মার্কিন ওয়ার ডিপার্টমেন্ট (পেন্টাগন) সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হয় নাইজেরিয়া সরকার খ্রিষ্টানদের রক্ষা করবে, না হয় আমরা ওই সব অস্ত্রধারীকে হত্যা করব, যারা ভয়াবহ নির্যাতন চলাচ্ছে।’
ট্রাম্পের ওই পোস্টের এক দিন আগে তাঁর প্রশাসন নাইজেরিয়াকে আবারও ‘কান্ট্রিজ অব পার্টিকুলার কনসার্ন’ (বিশেষ উদ্বেগের দেশ)–এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এ তালিকায় এমন দেশগুলোকে রাখে, যেখানে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নেই বলে তারা মনে করে। তালিকায় অন্য দেশগুলোর মধ্যে আছে চীন, মিয়ানমার, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া ও পাকিস্তান।
আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় সম্প্রদায়গত দ্বন্দ্ব নিরসনে গিয়ে ১৬ সেনা নিহত ১৭ মার্চ ২০২৪সামরিক পদক্ষেপের হুমকি দিয়ে ট্রাম্পের ওই পোস্টের আগে গতকাল শনিবার ভোরে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা আহমেদ তিনুবু তাঁর দেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা–সংক্রান্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি ধর্ম পালনের স্বাধীনতার সুরক্ষায় তাঁর দেশের প্রচেষ্টার পক্ষেও কথা বলেন।
তিনুবু বলেন, ‘নাইজেরিয়াকে ধর্মীয়ভাবে অসহিষ্ণু দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা আমাদের জাতীয় বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না এবং এটি সরকারের সব নাইজেরীয়র ধর্ম পালনের স্বাধীনতা রক্ষা করার ধারাবাহিক ও আন্তরিক প্রচেষ্টাকেও বিবেচনায় আনে না।’
গত বছর নাইজার থেকে প্রায় এক হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ায় পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।নাইজেরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও এ নিয়ে আলাদা বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে জোর দিয়ে বলা হয়, তারা সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবে এবং আশা করছে, এ লড়াইয়ে ওয়াশিংটন তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে থাকবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আমরা জাতি, ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিককে রক্ষা করব। যুক্তরাষ্ট্রের মতো নাইজেরিয়াতেও (নানা ধর্মের মানুষের) বৈচিত্র্য উদ্যাপন করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। কারণ, এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।’
গত বছর নাইজার থেকে প্রায় এক হাজার সেনা প্রত্যাহার করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে পশ্চিম আফ্রিকায় মার্কিন সামরিক উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় অংশ নিতে আফ্রিকায় ছোট ছোট সেনা দল পাঠায়। বর্তমানে আফ্রিকা মহাদেশে সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে। সেখানে পাঁচ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা অবস্থান করছেন। ওই অঞ্চলে সামরিক অভিযান চালাতে এ সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করা হয়।
আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় বন্দুকধারীদের হামলায় নিহত ৬০৭ মে ২০২৫নাইজেরিয়াকে ‘উদ্বেগের তালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত করাট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে নাইজেরিয়াকে ‘উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরে জো বাইডেন ক্ষমতায় এসে ২০২১ সালে নাইজেরিয়াকে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের এ তালিকা থেকে সরিয়ে নেন।
তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানরাই বোকো হারামের নৃশংসতার শিকার হন।নাইজেরিয়ায় প্রায় ২০০ জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। তাঁরা ইসলাম, খ্রিষ্টান ও স্থানীয় প্রথাগত ধর্ম পালন করেন। দেশটিতে সব ধর্মের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। তবে কখনো কখনো বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা বেড়ে যায়।
চরমপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী বোকো হারাম উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়াতে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গত ১৫ বছরে এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বহু মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মুসলমানরাই বোকো হারামের নৃশংসতার শিকার হন।
আরও পড়ুননাইজেরিয়ায় পশুপালক ও কৃষকদের সংঘর্ষে নিহত ৮৫১৮ মে ২০২৩