রূপগঞ্জে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট
Published: 2nd, March 2025 GMT
রূপগঞ্জের মিঠাবতে মসজিদ কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে বিএনপি ও নিষিদ্ধ ঘোষিত নামধারী ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতা রোমান, অংকন, সৈকত, সোহেল, সাদ্দাম, অঞ্জন, রঞ্জন, সজিবসহ আরো ২০-২৫ জন ভাড়াটে লোকজন নিয়ে হামলা চালায়। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ভুলতা ইউনিয়নের মিঠাবো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার মিঠাবো জামে মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে এলাকায় অসন্তোষ বিরাজ করছিল। দীর্ঘদিন ধরে মসজিদ কমিটির সভাপতির পদ কুক্ষিগত করে রাখায় মিঠাবো এলাকার বিএনপি নেতা শুক্কুল আলী মোল্লা বাঁধ সাধে।
এ নিয়ে সমাজের লোকজনের মধ্যে গত দুই সপ্তাহ ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এলাকাবাসী শুক্কুর আলী মোল্লার পক্ষে থাকলেও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ নেতা ছাত্রলীগ নেতা রোমান, অংকন, সৈকত, সোহেল, সাদ্দাম, অঞ্জন, রঞ্জন, সজিবের নেতৃত্বে একটি পক্ষ বিরোধীতা করে আসছিল।
এদিকে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর একপক্ষ শুক্কুর আলীকে সভাপতি ঘোষণা দেন। এ নিয়ে শুক্কুর আলী ও তার লোকজনের সাথে অপরপক্ষ তর্কে জড়ায়। এ ঘটনায় শুক্কুর আলী বাদি হয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এদিকে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর শুক্কুর আলীকে মামলার কারণ জানতে চাইলে উভয়পক্ষের মধ্যে পুনরায় কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এর জের ধরে বিকাল সাড়ে ৩ টার দিকে শুক্কুর আলীর দোকানপাটে হামলা চালিয়ে ছাত্রলীগ নেতা অংকন ও তার লোকজন দেশীয় অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় উভয় পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। আহতদের রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য আওয়ামী লীগের দোসররা ছাত্রলীগ নেতাদের ছাত্রদল নেতা বানানোর চেষ্টা করছেন। ছাত্রলীগ নেতা রোমান, অংকন, সৈকত, সোহেল, সাদ্দাম, অঞ্জন, রঞ্জন, সজিব ও তাদের লোকজন ৫ আগস্টের আগেও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা রোমান, অংকন, সৈকত, সোহেল, সাদ্দাম, অঞ্জন, রঞ্জন, সজিব, অংকনের চাচা মুরাদ ও সৈকতসহ অন্তত ২৫/৩০জন হামলা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, মসজিদের সভাপতির পদ নিয়ে সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র পগঞ জ ন র য়ণগঞ জ শ ক ক র আল র পগঞ জ র ল কজন এল ক য় এ ঘটন মসজ দ
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।