প্রেমিকার সাবেক স্বামীর ফাঁদে প্রাণ গেছে তাজকীরের
Published: 3rd, March 2025 GMT
প্রেমিকা সুরাইয়া আক্তার সীমার সাবেক স্বামী ইসমাইল হোসেন অভির পাতানো ফাঁদে প্রাণ গেছে রাজধানীর ইম্পেরিয়াল এশিয়ান ইউনিভার্সিটির ছাত্র তাজকীর আহমেদের। সীমার সঙ্গে দেখা করতে খুলনায় এলে হত্যা করা হয় তাঁকে। হত্যার ১০ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল হোতা অভিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান তাজকীরের বাবা-মা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তাজকীর লেখাপড়ার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করতেন। সীমার সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে গত ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি ধানমন্ডির বাসা থেকে খুলনা নগরীর গোয়ালখালী এলাকায় মামার বাড়িতে আসেন। সেখান থেকে খালিশপুরে নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকার উদ্দেশে বের হন সীমার সঙ্গে দেখা করতে। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন। তাজকীরের বাবা মুরাদ হোসেন গত ২২ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানায় জিডি করেন। ২৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচজনকে আসামি করে অপহরণের অভিযোগে মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ তাজকীরের প্রেমিকা সীমা ও অভির মা লাবণী বেগমসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খানজাহান আলী থানার গিলাতলা বালুর ঘাট এলাকায় ভৈরব নদ থেকে পুলিশ বস্তাবন্দি একটি লাশ উদ্ধার করে। তাজকীরের মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদ পরনে থাকা শার্ট-প্যান্ট দেখে অর্ধগলিত লাশটি তাজকীরের বলে শনাক্ত করেন। তাজকীরের বুকসহ একাধিক স্থানে জখমের চিহ্ন ছিল। তাঁকে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যার পর বস্তায় ভরে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি মরদেহ পরিবারে হস্তান্তর করা হয়।
খালিশপুর থানার ওসি মো.
পুলিশ জানায়, প্রায় তিন বছর আগে খালিশপুর হাউজিং এলাকার বখাটে ও মাদকাসক্ত অভি দুই পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সীমাকে বিয়ে করেন। কিছুদিন পর তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এর পর অভি বিদেশে চলে যান। সম্প্রতি তিনি এলাকায় ফিরে এসে আবার সীমার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তবে এর আগেই সীমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক হয় তাজকীরের, যা অব্যাহত ছিল দেড় বছর। তাজকীরের চাচাতো ভাই একলাছুর রহমান রনির শ্যালিকা সীমা। রনির মাধ্যমে সীমার সঙ্গে তাজকীরের সম্পর্ক হয়েছিল।
পুলিশ জানায়, সীমা একই সঙ্গে অভি ও তাজকীরের সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যান। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে অভি বিষয়টি জানতে পেরে সীমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে যান। এর পর সীমার ফোন থেকে তাজকীরকে মেসেঞ্জারে মেসেজ দিয়ে অভি জানান, সীমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে দ্রুত দেখা করতে বলা হয়। তাজকীর সীমার সঙ্গে দেখা করতে এসে প্রাণ হারান।
তাজকীর নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার নওখোলা গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে। মুরাদ হোসেন বলেন, তাজকীর জানত না, সীমার আগে বিয়ে হয়েছিল। খালিশপুর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তাজকীরকে কোথায় কীভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং কীভাবে লাশ গুম করে, তা এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ