৭ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা, পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরল শিশুটি
Published: 11th, December 2025 GMT
চট্টগ্রামে অপহরণ মামলায় আইনের সংস্পর্শে নেওয়া সাত বছরের শিশুটি পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরে গেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়। শিশুটির মা কারাগারে আর বাবা সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ায় মুক্তি পেলেও কোনো অভিভাবক না থাকায় শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দেন আদালত।
‘চট্টগ্রামে ৭ বছরের শিশুর নামে মামলা নিল পুলিশ, তিন দিনেও মেলেনি মুক্তি’ শিরোনামে গত রোববার প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আদালতপাড়া ও নগর পুলিশে আলোচিত হয় বিষয়টি। এর আগে গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) শিশুটিকে অপহরণ মামলায় গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে সোমবার হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রবেশন কর্মকর্তা মনজুর মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে শিশুটিকে হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জাহাজে ছিলাম। সেখান থেকে আসার পর ছেলেকে জিম্মায় নিয়েছি।’
এদিকে আইনে না থাকলেও মামলাটি গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফের মহাসচিব আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিপূর্বেও সাত বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়। এখনকার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাঁদের গাফিলতি রয়েছে, সবার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। এটি ভুলে নয়, কাজে অবহেলার কারণে হয়েছে।’
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ৭ বছরের শিশুর নামে অপহরণের মামলা নিল পুলিশ, তিন দিনেও মেলেনি মুক্তি০৭ ডিসেম্বর ২০২৫যেভাবে শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা
ঘটনার শুরু চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল। চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় বসবাসরত আনোয়ারা বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান অসুস্থ হলে সেদিন চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সঙ্গে নিয়ে যান চার বছরের ছোট সন্তান মো.
এ ঘটনায় সাত বছরের শিশু ও তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী জানতে পারেন, তাঁর ছেলেকে হাসপাতালের বারান্দা থেকে সাত বছরের ওই শিশু ও তার মা খেলার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যান। মামলা হওয়ার পর ওই দিনই পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক ষোলশহর এলাকা থেকে সাত বছরের শিশুর মাকে গ্রেপ্তার করেন। আইনের সংস্পর্শে নেওয়া হয় শিশুটিকেও। মা যান কারাগারে, শিশুটি টঙ্গীতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জামিনে মুক্তির পর সোমবার সেখান থেকে হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে এনে রাখা হয়।
জানতে চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিউল মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, শিশু আইন ও দণ্ডবিধিতে ৯ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া কিংবা আইনের সংস্পর্শে নেওয়ার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুনমা কারাগারে, বাবা সাগরে, মুক্তি পেয়েও ঠাঁই হলো না পরিবারে০৮ ডিসেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র শ শ র প রথম আল ক স ত বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তার অব্যাহতির আবেদন
গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ আসামির অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই আবেদন করা হয়।
মামলাটির ১৩ আসামির মধ্যে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সিটিআইবির সাবেক তিন পরিচালক গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
গ্রেপ্তার এই তিন আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরে তিনি ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অব্যাহতির আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আইনজীবী আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মাহবুবুর ও মাজাহারের বিরুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরওয়ারের বিরুদ্ধে ১২ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়নি।
আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, তাঁর তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) চারটি অপরাধের অভিযোগ এনেছে। সেগুলো হলো আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন। এর মধ্যে তিনটি অপরাধ (আটক, অপহরণ ও নির্যাতন) তাঁর আসামিরা ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগেই সংঘটিত হয়েছে। ডিজিএফআইয়ের পদায়নের আগের ঘটনার দায় দেওয়া হয়েছে, যার সুযোগ আইনে নেই।
এ ছাড়া সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে গুমের ভুক্তভোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী যে ঘরে ছিলেন, সেটি ২১ ফুট বাই ১৭ ফুটের ছিল বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সেই ঘরে জানালা পাঁচটি, দুটি দরজা, ওয়ার্ডরোব, রিডিং টেবিল, পরে এয়ারকন্ডিশনও লাগানো হয়েছিল। অর্থাৎ আযমীকে গুম করে রাখার ঘর আয়নাঘর ছিল না, অন্য কোনো জায়গা ছিল। এ কারণে আযমীকে গুম করে রাখার অভিযোগও এই আসামিদের ওপর বর্তায় না।
এসব কারণে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুম—এই চারটি অভিযোগ থেকে তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) অব্যাহতি প্রার্থনা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন আজিজুর রহমান।
এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ডিজিএফআই পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার বা জেআইসিতে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। জেআইসির অবস্থান ঢাকা সেনানিবাসের ডিজিএফআই সদর দপ্তরের পেছনে। এটি ‘আয়নাঘর’ নামেও পরিচিত। জেআইসি বা আয়নাঘরের দায়িত্বে ছিল ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবি।
এ মামলার ১০ আসামি পলাতক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
পলাতক আসামিদের মধ্যে আরও আছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক। এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকও এ মামলার পলাতক আসামি। তাঁদের পক্ষেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা অব্যাহতির আবেদন করেছেন।