ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বিরুদ্ধে বাসচালককে লাঠিপেটার অভিযোগ এনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পরিবহনশ্রমিকেরা। আজ সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দেড় ঘণ্টা তাঁরা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ও সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল সড়কের মুক্তাগাছা পৌর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ জন্য থানার সামনের এলাকার রাস্তার ওপর থেকে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে পৌর বাস টার্মিনালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও রাস্তার ওপর বাস দাঁড়িয়ে থাকে এবং যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট রোধে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইউএনও আতিকুল ইসলাম পৌরসভার পুরোনো বাসস্ট্যান্ড মোড় এলাকায় যান। ওই সময় সড়কের ওপর ইসলাম পরিবহনের একটি বাস দাঁড়িয়ে ছিল। ইউএনও বাসটিকে সরিয়ে নিতে বলেন। ওই ঘটনা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। তখন পরিবহনশ্রমিকেরা চালককে মারধর করার অভিযোগ এনে ইউএনওর বিচার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।

বাসটির চালক মো.

আকাশ ওরফে ভুলু (৪৬) প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনিরামবাড়ি থেকে বাস নিয়ে বাস স্টপেজে দাঁড়ানোর আগেই ইউএনও স্যার আমার বাসে উঠে পড়েন। তিনি নিজের গাড়ির চালককে লাঠি আনতে বলতে থাকেন। আমি তখন বলি, রোজা রেখেছি, আমাকে মাফ করে দেন। কিন্তু তিনি কোনো কথা না শুনে আমার হাতে লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।’

লাঠিপেটার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাসগুলো পৌর বাস টার্মিনালে সরিয়ে নেওয়া হবে। তারপরও রাস্তার ওপর বাস দাঁড়াচ্ছিল। আজ সকালে রাস্তার ওপর বাস দাঁড় করিয়ে রাখায় কারণ জানতে চেয়েছিলাম। এ কারণে চালকেরা ইস্যু সৃষ্টির চেষ্টা করছেন।’

মুক্তাগাছা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের আহ্বায়ক বাবুল মিয়া বলেন, ‘ভুল–বোঝাবুঝি থেকে এ ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। আজ বিকেলে আমরা আলোচনায় বসে বিষয়টি মিটমাট করে নেব। ইউএনও রাস্তার যানজট কমাতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আজ হয়তো ইউএনও রাগের মাথায় ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছেন।’

মুক্তাগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, বাসের চালককে ইউএনও মারধর করেছেন—এমন অভিযোগে শ্রমিকেরা সড়ক আটকে দিয়েছিলেন। পরে সেনাবাহিনী বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স ত র ওপর চ লকক য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি

ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।

শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।

ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।

ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।

কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলা

শিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।

শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’

শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি