সদ্য আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিয়েছিলেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। এনসিপির আত্মপ্রকাশের এক সপ্তাহের মাথায় ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে নতুন দল থেকে পদত্যাগ কর গণ অধিকার পরিষদের আগের পদে ফিরে গেছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার ইফতারের পর এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তরে সংযুক্ত) সালেহ উদ্দিন সিফাতের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন আবু হানিফ। বিষয়টি নিশ্চিত করে সিফাত প্রথম আলোকে বলেছেন, পদত্যাগের জন্য আবু হানিফ ব্যক্তিগত কারণের কথা বলেছেন। তাঁর পদত্যাগপত্রটি বিবেচনাধীন আছে।

পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগ করে আমি গণ অধিকার পরিষদে স্বপদে (উচ্চতর পরিষদের সদস্য) ফিরেছি।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করে এনসিপি। এই দলে নুরুল হকের দলের অন্তত ২০ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতা যোগ দেন। তাঁরা নতুন দলের বিভিন্ন পদে আসীন হয়েছেন। এ বিষয়ে গত বুধবার নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেছিলেন, এনসিপিতে যোগ দিতে তাঁর দলের অনেককে ১০ কোটি টাকা ও সংসদ সদস্য করার প্রস্তাব দিয়েছেন। নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কোনো কোনো উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও এ ধরনের প্রলোভন দেখানো হয়েছে।

নুরুল হকের দাবি, আবু হানিফসহ তাঁর দলের উচ্চতর পরিষদের কয়েকজন সদস্যকে এভাবে বিভ্রান্ত ও ‘ব্ল্যাকমেল’ করে এনসিপিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তাঁরা ভুল বুঝতে পেরে গণ অধিকার পরিষদে ফিরে এসেছেন।

নুরুলের এ দাবির বিষয়ে আবু হানিফ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এনসিপি বেটার কিছু হবে মনে করে আমি এই দলে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, গণ অধিকার পরিষদে থেকেই ভালো কাজ করতে পারব। তাই আমি গণ অধিকারে ফিরে যাচ্ছি। শিগগিরই আমি এনসিপি থেকে পদত্যাগ করব।’

অবশ্য এনসিপিতে যোগ দেওয়ার জন্য ১০ কোটি টাকা ও সংসদ সদস্য করার প্রস্তাবের বিষয়টি অস্বীকার করেন হানিফ।

হানিফ আজ পদত্যাগ করলেও গণ অধিকার পরিষদ থেকে এনসিপিতে যোগ দেওয়া অন্য কেউ পদত্যাগ করেননি। এনসিপির দপ্তরে সংযুক্ত যুগ্ম সদস্যসচিব সালেহ উদ্দিন সিফাত আজ সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, আবু হানিফ ছাড়া আর কেউ পদত্যাগপত্র জমা দেননি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক এনস প ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ