সুশাসন-ন্যায়বিচারের অভাবে মুক্তি মিলছে না নারীর
Published: 7th, March 2025 GMT
ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমাজে নারী ও পুরুষের বৈষম্যের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও নারীদের প্রতি বৈষম্য চলছেই। নারী-পুরুষ সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় নারীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। দেশে দেশে সুশাসন ও ন্যায়বিচারের অভাবের কারণে নারীদেরমুক্তি মিলছে না।
নারীর জন্য প্রচলিত ক্ষতিকর প্রথা, পারিবারিক আইনসহ বৈষম্যমূলক অন্য আইন, ধর্মের নামে নানা বিধিনিষেধ ও নারীবিদ্বেষী প্রচার-প্রচারণায় প্রতিনিয়ত নারীর মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদা লঙ্ঘিত হ”েছ। ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্যের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত করা গেছে।
তবে দেশে যে গণতন্ত্রের চর্চা চলছে এখন তাতে করে কোনো রাজনৈতিক শক্তিই বিকশিত হতে পারছে না। সমাজে সুশাসন-ন্যায়বিচারের অভাব রয়েছে। এতে নারী সমাজের মুক্তি মিলছে না।
নারীর প্রাপ্য, নারীর অধিকার : পুরুষের তুলনায় নারী নিম্নতর ভুল ভাবনার অবসান শুরু হয় মাত্র শ খানেক বছর আগে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগেও নারীদের শারীরিক, মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে নিম্নতর ভাবা হতো পৃথিবীর বহু দেশে। এই যুদ্ধে তাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এমন ধারণা কিছুটা দূর করে। দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে তাই ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোয় নারীদের সর্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃত হতে থাকে; তবে তা পুরুষদের তুলনায় অনেক পরে।
যেমন ফ্রান্সে পুরুষেরা প্রথম সর্বজনীনভাবে ভোটাধিকার পান ১৭৯২ সালে, অথচ সেখানে নারীরা সর্বজনীন ভোটাধিকার পান ১৯৪৪ সালে।
সর্বশেষ ইউরোপীয় দেশে (লিখটেনস্টেইন) নারীদের এই ভোটাধিকার দেওয়া হয় ১৯৮৪ সালে, স্বাধীন বাংলাদেশের ১২ বছর পরে। ভোটাধিকার একটি নাগরিক অধিকার। এ রকম নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারগুলোর ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে নারী-পুরুষের সমানাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালের বৈশ্বিক চুক্তির পর।
এসব অধিকার নারীদের দিলে রাষ্ট্রের তেমন কোনো অর্থসম্পদের প্রয়োজন হয় না, সমাজে বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিকতাও খুব একটা হোঁচট খায় না। যেমন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় নারীদের ভোটাধিকার, এমনকি নেতৃত্ব, নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে খুব একটা ভূমিকা রাখেনি। তুলনায় কর্মসং¯’ান, উপযুক্ত পারিশ্রমিক, স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ ও সামাজিক নিরাপত্তা—এসব অর্থনৈতিক অধিকার নারীদের সমানভাবে দিলে রাষ্ট্রের অর্থসংস্থানের প্রয়োজন হয়।
পুরুষতান্ত্রিকতা ও নারীর বিকাশবিরোধী সমাজের ভিত নড়ে ওঠে। কারণ, স্বাবলম্বী নারীর স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদাবোধ থাকে অনেক বেশি। হয়তো এসব কারণে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশে ভোটাধিকার এবং অন্য নাগরিক-রাজনৈতিক অধিকারগুলো (যেমন সমাবেশ, ধর্ম পালন ও বাক্ধসঢ়;স্বাধীনতা, গ্রেপ্তার ও বিচারকালীন অধিকার) নারীদের জন্য প্রায় অবারিত করে দেওয়া হলেও অর্থনৈতিক অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাস্তব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে অনেক বেশি।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর সমান সুযোগ, অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথে অন্যতম বাধা হ”েছ অর্থসং¯’ান। জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে হলে বছরে ৩৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, কিš‘ এতে লাভ হবে বহুগুণে বেশি। অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি বিভিন্ন বৈষম্য তুলে ধরা হ”েছ নারী দিবসের এই আহ্বানের মধ্যে।
একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকারের সর্বশেষ জরিপ বলছে, ৭২ দশমিক ৭ শতাংশ নারী তাদের নির্যাতনের কথা কখনই অন্যদের জানায় না। কথা হলো কি করে জানাবে?। আর কেনইবা জানাবে?। যেখানে মেয়েদের নিয়ে বছরের পর বছর শুধু জরিপ কওে সংবাদের শিরোনাম বানিয়ে কিছু কর্মসূচির মাধ্যমেই দায়িত্ববোধ শেষ করা হয়। কারণ আমাদের মেয়েদের চোখে, মনে অনেক স্বপ্ন আছে, আছে এগিয়ে যাওয়ার দুর্বার ই”ছাশক্তি।
তবুও আমরা মার খাই, মরে যাই এবং বারবার জেগে উঠি। আমাদের দেশের মেয়েদের সর্বপ্রথম সমস্যা আর্থিক দুর্বলতা। আমাদের দরকার সহজভাবে শিক্ষাগ্রহণের অধিকার। যে মেয়েরা সন্তানের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামীর নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করে, আমাদের দরকার সেসব মেয়ের সন্তানদের দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতে তুলে দিয়ে সহজভাবে কাজ করার একটি সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য অধিকার। তবেই মেয়েরা শঙ্কা কাটিয়ে বলতে পারবে তার প্রতি অত্যাচার এবং অন্যায়ের কথা।
লেখক : নারী কল্যাণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
২৩৭ জনের তালিকায় নেই রুমিন ফারহানা
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এ তালিকায় নেই দলটির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল, আশুগঞ্জ এবং বিজয়নগর আংশিক) আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল রুমিন ফারহানার। তবে এই আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।
আরো পড়ুন:
টাঙ্গাইলের ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা
কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন
সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্ভব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।
রুমিন ফারহানা একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন পেতে যাচ্ছি। সেই নির্বাচনে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব আসনে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে, সেটি বিএনপি সমন্বয় করে নেবে।’’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লড়বেন বগুড়া-৬ আসন থেকে।’’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এটা প্রাথমিক তালিকা। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি মনে করলে যে কোনো সংশোধনী আসতে পারে।’’
ঢাকা/বকুল