বিশেষ ঘরানার চ্যাটবট প্রকাশ করে সারাবিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে ওপেনএআই। উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানের বহু প্রতীক্ষিত চ্যাটবট ৪ও সংস্করণ।
যা উন্মোচনের বিশেষ ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির কথা বলেছিল নির্মাতা কর্তৃপক্ষ। অতীত থেকে দ্রুততর ও মানোন্নত সংস্করণ এটি, যা খুব জোরালোভাবেই বলছেন নির্মাতারা।
চ্যাটজিপিটি প্রযুক্তির নতুন সংস্করণ ৪ও উন্মোচনের সুবিধা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট করেছে ওপেনএআই, যা নিয়ে সারাবিশ্বে বইছে তর্ক-বিতর্কের বৈরী ঝড়। যার সার্বিক উন্নয়নের পেছনে অনবদ্য অবদান রেখেছেন প্রফুল্ল ধারিওয়াল, যাঁকে ছাড়া চ্যাটবট ৪ও উন্নয়ন সম্ভব হতো না বলে জানিয়েছেন খোদ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্যাম অল্টম্যান।
নিজের এক্স প্ল্যাটফর্মে এমন কথা বলেছিলেন স্যাম। ঠিক তখন থেকেই চারদিকে খোঁজ ওঠে– কে সেই প্রফুল্ল, পরিচয়ই বা কী তাঁর।
জিপিটি ৪ও চ্যাটজিপিটির ফ্ল্যাগশিপ হিসেবে আবির্ভূত হয় জিপিটি ৪ও সংস্করণ, যা অডিও-ভিডিও সংস্করণের সঙ্গে রিয়েল টাইম টেক্সট ফলাফল প্রকাশে বিশেষ পারদর্শী। আগ্রহীরা নতুন পরিষেবাটি পুরোপুরি বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন।
ওপেনএআই এপিআই অ্যাকাউন্ট যাদের আছে, তারা সহজেই জিপিটি ৪ও সংস্করণের সুবিধা নিতে পারবেন বলে জানানো হয়।
নতুন চ্যাটজিপিটি ৪ও দিয়ে বিনামূল্যে ডেটা অ্যানালাইসিস, ফাইল আপলোড, ব্রাউজিং, ভিশনিং, এডিটিং ছাড়াও জিপিটি প্রদেয় অন্যসব সুবিধাও নিতে পারবেন আগের মতো। যারা ফ্রি গ্রাহক সুবিধায় আছেন, তারা চ্যাটজিপিটি প্লাস সংস্করণেও আপগ্রেড হতে পারবেন। উল্লিখিত সবকিছু যিনি গবেষণা আর উন্নয়নের আঁতুড়ঘর থেকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন, তিনিই হলেন প্রফুল্ল ধারিওয়াল।
অসম্ভব সবকিছু যেন তুড়ি মেরে সমাধান করছে চ্যাটজিপিটি। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও এখন চ্যাটজিপিটির চর্চায় সরব হয়েছেন প্রযুক্তিপ্রেমী তরুণরা। ছবি, ইনফোগ্রাফিকস বা শব্দ সম্পাদনা– সবখানে নিজের দক্ষতার ছাপ ফেলতে শুরু করেছে জিপিটির ‘৪ও’ নব্য সংস্করণ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনবেন যেভাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত লেখা যায়। আর তাই বিভিন্ন ব্লগ পোস্ট, প্রবন্ধ, ই–মেইল থেকে শুরু করে গবেষণাপত্র, পত্রিকার কলাম লেখায় এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বর্তমানে অনেক এআই মডেল মানুষের লেখার মতোই সাবলীলভাবে লিখতে পারায় সেগুলো মানুষ না এআই লিখেছে, তা সহজে বোঝা যায় না। তবে বেশ কিছু বিষয় পর্যালোচনা করে এআই দিয়ে লেখা বার্তা বা লেখা শনাক্ত করা সম্ভব। এআই দিয়ে তৈরি লেখা চেনার পদ্ধতিগুলো দেখে নেওয়া যাক।
এম ড্যাশ ব্যবহারবিভিন্ন এআই টুলে যে লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ব্যবহার করা হয়, সেখানে প্রায়ই এম ড্যাশের অতিরিক্ত ব্যবহার দেখা যায়। সাধারণ লেখার ক্ষেত্রে আমরা এম ড্যাশ ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে কোনো লেখায় এম ড্যাশের উপস্থিতি থাকলে তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই মডেলগুলো মূলত নিজস্ব তথ্যভান্ডারে থাকা তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন কাজ করে থাকে। এম ড্যাশ সাধারণত বই বা লেখা ছাপানোর সময় বিরতি বা অতিরিক্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। এআই বিভিন্ন প্রকাশিত বইপত্রের লেখার শৈলী অনুকরণ করে বলে এম ড্যাশ বেশি ব্যবহার করে থাকে। আর তাই লেখায় অতিরিক্ত এম ড্যাশ ব্যবহার হলে তা এআই দিয়ে তৈরি বলে ধারণা করা যেতে পারে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে বানানো ছবি চিনবেন কীভাবে২২ আগস্ট ২০২৪যান্ত্রিক শব্দচয়নএআই মডেলগুলো প্রায়ই কিছু প্যাটার্ন ও শব্দকে পুনরাবৃত্ত করে, আর তাই এআই দিয়ে লেখায় পুনরাবৃত্তিমূলক বাক্য গঠন ও শব্দচয়ন বেশি দেখা যায়। শুধু তা–ই নয়, এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় একই ধরনের বাক্য গঠন বেশি চোখে পড়ে। বিভিন্ন ধরনের সংযুক্তমূলক শব্দ যেমন এ ছাড়া, অতএব, ফলস্বরূপ বেশি ব্যবহার করে এআই মডেলে। আবার বিশেষ কিছু বিশেষণ বারবার ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আর তাই লেখায় যান্ত্রিক শব্দচয়ন বেশি থাকলে বুঝতে হবে সেটি এআই দিয়ে লেখা।
গভীরতার অভাবএআই তথ্য সংগ্রহে পারদর্শী হলেও মানুষের মতো জটিল বা মৌলিক বিশ্লেষণ করতে পারে না। আর তাই এআইয়ের তৈরি লেখায় গভীরতা ও বিশ্লেষণের অভাব দেখা যায়। এআইয়ের মাধ্যমে লেখায় তথ্য উপস্থাপন বেশি থাকলেও লেখকের ব্যক্তিগত মতামত বা মানবীয় ভাব অনুপস্থিত থাকে। এআই দিয়ে তৈরি লেখাতে সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, আবেগ বা গভীর চিন্তার অভাব থাকে। ফলে লেখাগুলোতে তথ্যের সারসংক্ষেপ বা অতিরঞ্জিত তথ্য দেখা যায়। এআই প্রায়ই এমন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে, যা ব্যাকরণগতভাবে সঠিক হলেও মানুষের স্বাভাবিক ও দৈনন্দিন আলাপে অনুপস্থিত থাকে।
আরও পড়ুনএআই দিয়ে কণ্ঠ নকল করে প্রতারণা শনাক্ত করবেন যেভাবে২৫ মে ২০২৫মানবিক দিক অনুপস্থিতখুব স্বাভাবিকভাবে এআই দিয়ে লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বা আবেগের অনুপস্থিতি থাকে। কিন্তু মানুষের লেখায় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, হাস্যরস বা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি জানা যায়। এআই মডেল গণিত অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন সমাধান করতে পারলেও মানবিক স্পর্শ তৈরি করতে পারে না। যখন লেখা নিরপেক্ষ বা আবেগহীন মনে হয়, তখন তা এআই দিয়ে তৈরি হতে পারে। এআই দিয়ে তৈরি লেখায় বেশ অনাকাঙ্ক্ষিত অসংগতি বা তথ্যের ভুল দেখা যায়।
আরও পড়ুনএআই প্রযুক্তি দিয়ে প্রতারণা বাড়ছে জিমেইলে, নিরাপদ থাকবেন যেভাবে১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এআই দিয়ে লেখা চেনার একাধিক পদ্ধতি সম্পর্কে জানার পরও নিজের বিচার–বিশ্লেষণ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। শুধু তা–ই নয়, বিষয়ে সঙ্গে লেখার প্রাসঙ্গিকতাও বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে ছোট একটি পরীক্ষা করা যাক। দুটি অনুচ্ছেদ পড়ে নিজেই সিদ্ধান্ত নিন কোন লেখাটি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে।
ক. সুন্দরবনের শ্বাসমূল থেকে কক্সবাজারের বেলাভূমি—বাংলাদেশ এক বৈচিত্র্যময় দেশ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত এই ব-দ্বীপ সুজলা-সুফলা। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের মিশেলে এটি যেন এক জীবন্ত জাদুঘর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই ভূমি সত্যিই মন মুগ্ধ করে তোলে।
খ. প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বাংলাদেশ, যেখানে সবুজ গ্রাম আর নদীর ঢেউয়ে জীবন প্রবাহিত হয়। এখানকার মানুষের হৃদয়ে উষ্ণতা, আর সংস্কৃতিতে লুকিয়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য।
লেখাগুলো পড়ে অনেকেই বলবেন ‘ক’ অনুচ্ছেদের লেখাটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। কেউ বলবেন ‘খ’ অনুচ্ছেদের কথা। তবে মজার বিষয় হচ্ছে ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি অনুচ্ছেদই গুগলের জেমিনি এআই দিয়ে লেখা হয়েছে। আর তাই এআই দিয়ে তৈরি লেখা চিনতে বেশ সতর্ক থাকতে হবে।
সূত্র: সেলজি ও ইস্ট সেন্ট্রাল কলেজ