পুলিশি তৎপরতার মধ্যেও সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র
Published: 8th, March 2025 GMT
গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার মধ্যেও সক্রিয় ছিনতাইকারী চক্র। ঘাটে বাস ও ট্রাকের সিরিয়ালে আটকে থাকা যাত্রীরা মাঝে মধ্যেই শিকার হন ছিনতাইয়ের।
এ পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদুল ফিতরে ছিনতাইকারী চক্র আরও বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। কারণ সাধারণত ঘাট এলাকায় সারা বছরই অপরাধপ্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এ প্রবণতা ঈদসহ অন্যান্য উৎসবে বৃদ্ধি পায়। এখানে ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়া বেশির ভাগ যাত্রীই থানা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ না করেই গন্তব্যে চলে যান। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বপ্রণোদিত হয়েই ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। অপরদিকে সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে আটক করাও পুলিশের জন্য কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া দেশের বৃহত্তম যৌনপল্লি দৌলতদিয়ায় হওয়ায় সারাদেশের অপরাধীরা এখানে নির্বিঘ্নে দিনের পর দিন অবস্থান করতে পারে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়ে থাকে।
গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারি মাস ও চলতি মার্চ মাসের এই কয়েক দিনে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা থেকে ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে ১৯ জনকে হাতেনাতে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তিরা সবাই পেশাদার ছিনতাইকারী এবং এর আগেও তারা একাধিকবার ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে।
জানা যায়, স্বাভাবিক সময়েও প্রতিদিন দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে দক্ষিণ অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ রাজধানীসহ সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। নানা উৎসবে যাতায়াতকারী মানুষের সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। আর যাত্রীদের আনাগোনা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা।
স্থানীয়রা জানান, ঘন কুয়াশাসহ নানা কারণে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় ফেরির নাগাল পেতে নদী পারাপার হতে আসা যানবাহনগুলোকে সিরিয়ালে আটকে থাকতে হয়। এ সুযোগে ছিনতাইকারীরা গাড়ির জানালা দিয়ে মোবাইল ফোনসেট, ব্যাগ, স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিয়ে মুহূর্তেই অন্ধকারে গা-ঢাকা দেয়। এ ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি থেকে যাত্রী কোনো প্রয়োজনে নামলেই ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে।
দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় পরিবহন সেক্টরে কর্মরত নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুল হক সরদারসহ প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই জানান, দৌলতদিয়া ঘাটে ছিনতাই নিত্যদিনের ঘটনা। ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে যাত্রীরা চিৎকার করলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে যায় না, এমনকি চালক ও তার সহযোগীও কিছু করতে সাহস পায় না। যথারীতি পুলিশের টহল থাকলেও চোখের পলকে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছিনতাইকারীরা ছিনতাই করে সটকে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ছিনতাইকারীরা অপেক্ষাকৃত অন্ধকার স্থান বেছে নেয়। মাঝে মধ্যে মনে হয়, এ যেন চোর-পুলিশ খেলা।
দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে গত মঙ্গলবার ছিনতাইয়ের শিকার হন যশোর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, বাসের জানালার পাশে বসে ছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই এক যুবক জানালা দিয়ে তাঁর হাত থেকে মোবাইল ফোনসেট ছিনিয়ে নিয়ে দৌড় দেয়। তিনি চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
এ ছাড়া রোজিনা পরিবহনের যাত্রী আবদুল ওয়াহাব জানান, তিনি ল্যাপটপের ব্যাগ কোলের ওপর রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুম ভাঙার পর দেখেন, জানালার গ্লাস খোলা এবং তাঁর ল্যাপটপের ব্যাগটিও নেই। অফিসের গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস সব চলে গেল বলে আক্ষেপ করে তিনি জানান, ফেরিতে উঠে গন্তব্যে পৌঁছাতে হবে বলে থানায় অভিযোগ করেননি তিনি।
একাধিক পরিবহনের চালকরা অভিযোগ করে বলেন, গাড়ির সিরিয়াল হলেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। পুলিশের টহল থাকলেও ছিনতাই থেমে থাকে না। পুলিশ একটু দূরে গেলেই ছিনতাইকারীরা চোখের পলকে যাত্রীর মালপত্র নিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যায়। তখন পুলিশেরও কিছু করার থাকে না।
গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বলেন, ঘাট এলাকায় ছিনতাইয়ের কোনো অভিযোগ সম্প্রতি পাননি। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটলে তারা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছেন। একই সঙ্গে ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে টহল অভিযান জোরদার করা হয়েছে। ছিনতাইকারী চক্র নির্মূলে পুলিশ আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঘ ট এল ক য় দ লতদ য়
এছাড়াও পড়ুন:
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নির্বাচন হতেই হবে
বাংলাদেশে নির্বাচনপূর্ব সময়ে সব সময় কিছু বিশৃঙ্খলা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়। তবে এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে বেশি নাজুক। এর কারণ বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে পর্যায়ে নেমেছে, সেখান থেকে বর্তমান সরকার দেড় বছর সময় পেলেও খুব দৃশ্যমান কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এবং এর আগে থেকে পরিস্থিতির ওপর যে ধরনের পর্যালোচনা বা অনুধাবনের প্রয়োজন ছিল, সেখানে ঘাটতি ছিল। কাজেই প্রস্তুতিও সেভাবে নেওয়া হয়নি। বিপুলসংখ্যক অস্ত্র এর আগে খোয়া গিয়েছিল, হারিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো উদ্ধার করার জন্য জোর তৎপরতা চালানোর মতো দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত ছিল, সেখানে বড় ধরনের ঘাটতি আমরা দেখতে পেয়েছি।
আমরা এটাও জানি যে আওয়ামী লীগ (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ), বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং অন্য যে নেতারা ভারতে পালিয়ে গেছেন, তাঁরা সেখান থেকে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে উসকানি দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর আগাম প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন ছিল। সে ধরনের কোনো প্রস্তুতি যদি তারা নিয়ে থাকে, তাহলে অবস্থার অবনতি হতো না বা হওয়ার কথা নয়।
যেসব বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেই বাহিনীগুলোর কর্মদক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে পুলিশ সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত হয়নি। এই বাহিনীকে সরকার সম্পূর্ণভাবে আগের জায়গাতে ফিরিয়ে নিতে পারেনি বা তৈরি করতে পারেনি।
বিশেষ করে অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কোনো কিছু দেখতে পাইনি। একই সঙ্গে যে ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা বা আগাম তথ্য থাকা উচিত, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা আগাম তথ্য পাচ্ছে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আগাম তথ্য ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখাটা দুরূহ হয়ে পড়ে।
তবে আমরা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। নির্বাচন যেকোনো মূল্যে হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। নির্বাচনই একমাত্র পন্থা, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন, যার জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব। কাজেই নির্বাচন হতে হবে।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যতটুকু অবনতি হয়েছে, সেটিকে প্রারম্ভিক পর্যায় বলা যায়। তবে এটা একটা অশনিসংকেত। উচিত হবে এখনই এটাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। পুরো পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার লক্ষণকে একেবারে নির্মূল করে দেওয়া।
আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তি আছেন, বিশেষ করে যাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন, যাঁরা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের সঠিক ভূমিকাটা রাখবেন। কোনোভাবেই যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থীদের চিহ্নিত করা এবং তাঁদের জন্য এখন থেকেই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ