শুরুর দুই ম্যাচে নিজের মান অনুযায়ী খেলতে পারেননি তামিম ইকবাল। ভালোভাবে ইনিংস শুরুর পর থেমেছেন অল্পতে। গুলশানের বিপক্ষে ২২ ও রূপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে ১৪ রান করেছিলেন। বড় রানের খোঁজে থাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অধিনায়ক তামিম তৃতীয় রাউন্ডে অপেক্ষা ফুরালেন।

আজ রবিবার (৯ মার্চ, ২০২৫) পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ঝলমলে ১২৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন। তাতে দুই বছর পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে সেঞ্চুরির অপেক্ষাও দূর করেছেন। তার সেঞ্চুরিতে অনায়েসে জিতেছে মোহামেডান। বিকেএসপিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে পারটেক্স ২১৮ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে মোহামেডান ৭ উইকেট হাতে রেখে ৪০.

২ ওভারে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে।

১১২ বলে ১১ চার ও ৫ ছক্কায় ১২৫ রান করেন তামিম। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে এটি তার ২৩তম সেঞ্চুরি। গত বছর ঢাকা লিগে প্রাইম ব্যাংকের হয়ে ১৬ ম্যাচ খেলেছিলেন। ৬ ফিফটি পেলেও সেঞ্চুরি ছিল না কোনো। লিগে তার সবশেষ সেঞ্চুরি ছিল প্রাইম ব্যাংকের হয়ে মোহামেডানের বিপক্ষে ২০২৩ সালে। ফতুল্লায় ১০৯ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়েছিলেন। আজও খেললেন তেমনই এক ইনিংস।

আরো পড়ুন:

প্রাইম ব্যাংকের চারশর ইতিহাস, নাঈমের ১৭৬

ঈদের আগে ডিপিএলে খেলতে পারবেন না মুশফিক

ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো ঝুঁকি ছাড়াই অনায়েস ব্যাটিংয়ে তিন অঙ্কের দেখা পেয়েছেন। দলকেও জিতিয়েছেন। তার সঙ্গে রান পেয়েছেন তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। তাওহীদ ৩৭ ও মুশফিক ৩৫ রান করেন।

এর আগে পারটেক্সের ইনিংসে লাগাম টেনে ধরেন তাইজুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ। তাইজুল ৯.৩ ওভারে ৫০ রানে ৪ উইকেট নেন। নাসুম ৩২ রানে পেয়েছেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট পকেটে পুরেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।

পারটেক্সের হয়ে ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ ৭৮ রান করেন আহরার আমিন। ৮৬ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৮ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এছাড়া জাওয়াদ মোহাম্মদ ৪২, জয়রাজ শেখ ৩৮ রান করেন। 
লিগে এটি মোহামেডানের তিন ম্যাচে দ্বিতীয় জয়। পারটেক্সের তৃতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় পরাজয়।

ঢাকা/ইয়াসিন/নাভিদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র ন কর ন উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ