রাত-দিন অপেক্ষায়ও হিমাগারে আলু রাখতে পারছেন না কৃষক
Published: 9th, March 2025 GMT
সাহ্রি শেষে হিমাগারে আলু রাখতে গিয়েছিলেন কৃষক সাইফুল ইসলাম (৩৬)। কিন্তু পরদিন রাত ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও রাখতে না পেরে ফিরে যান। তিনি জানান, বিএডিসির মাধ্যমে ১০০ টাকা কেজি দরে আলুবীজ কিনে দেড় বিঘা জমিতে রোপণ করেন। প্রায় ৭০ মণ আলু হয়েছে। হিমাগারে ১০ বস্তা রাখার জন্য স্লিপ কিনলেও রাখতে না পেরে ফিরে আসতে হয়েছে। এতে সময় নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি গুনতে হয়েছে গাড়ি ভাড়া। কম দামে আলু বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি।
আরেক কৃষক আব্দুল মান্নান (৬০) দেড় বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছিলেন। দু’দিন ঘুরেও হিমাগারে উৎপাদিত ফসল রাখতে পারেননি। পরে বাজারে বিক্রি করেছেন আলু। সাইফুল ও মান্নানের মতো রাত-দিন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হিমাগারে অপেক্ষা করছেন অনেক কৃষক। কিন্তু রাখতে না পেরে বিপদে পড়ছেন তারা। স্লিপ থাকলেও হিমাগার থেকে ফেরত যেতে হচ্ছে তাদের। কৃষকের অভিযোগ, হিমাগার কর্তৃপক্ষ মজুতকারীদের কাছে সংরক্ষণের কার্ড দিয়ে দেওয়ায় সাধারণ কৃষক বঞ্চিত হয়েছেন। যদিও কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
উপজেলার বাল্ল্যে গ্রামের কৃষক হেলাল সরকার ছয় একর জমিতে আলু আবাদ করেন। বুকিং কার্ড সংকটের খবর পেয়ে কয়েকটি হিমাগারে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কার্ডের ব্যবস্থা করতে পারেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, হিমাগার কর্তৃপক্ষ প্রকৃত কৃষককে নয়, মজুতদার ও ব্যবসায়ীদের কাছে কার্ড বিক্রি করেছে। ফলে কৃষক সংরক্ষণের সুযোগ পাচ্ছেন না। এতে তারা লোকসানের শিকার হবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গোবিন্দগঞ্জে বাম্পার ফলনে খুশি হলেও হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পেরে বিপদে পড়েছেন কৃষক। অনেক আলু ক্ষেতে রয়েছে, যা কয়েক দিনের মধ্যে তোলার উপযোগী হবে। তারা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিলেও হিমাগারের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং স্থানীয়
দালাল ও ফড়িয়াদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসায়ীরা কার্ড হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তাদের।
ফলে প্রকৃত কৃষক আলু সংরক্ষণ করতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছেন।
কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, উপজেলায় এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ১০৪ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৩১৮ হেক্টরে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দেড়গুণ বেশি জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা এবং রোগবালাই না থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে আলুর। এবার সাড়ে ৪ লাখ টন উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
আলু সংরক্ষণের জন্য উপজেলার বকচর হিমাদ্রি কোল্ড স্টোরেজ-১, গোবিন্দগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজ-২, সূর্যগাড়িতে একটি এবং সাপমারায় এপেক্স এগ্রিসায়েন্স লিমিটেড নামে চারটি হিমাগার রয়েছে। এতে ৩৬ হাজার ৫০০ টন সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে উৎপাদিত বেশির ভাগ আলুই সংরক্ষণের অভাবে বাইরে থাকবে। ফলে কৃষক বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এতেই দাম কমে যাওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। শুরুতে আগাম জাতের দাম কিছুটা বেশি থাকলেও এখন ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা মণ দামে আলু বিক্রি হচ্ছে।
জানা গেছে, গত বছর বিদ্যুৎ বিলের অজুহাতে প্রতি বস্তা আলু রাখার ভাড়া ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা নিয়েছিল ক্লোড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষ। এবার ৬৫ কেজির এক বস্তার ভাড়া পড়বে অন্তত ৫২০ টাকা। অগ্রিম বুকিং কার্ড ৫০ টাকায় নিতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, গত বছর ৬৫ থেকে ৬৬ কেজির বস্তা রাখলেও এবার ৫০ কেজি রাখতে হবে।
আলুর দাম কম থাকায় বাজারে বিক্রি করে অর্ধেক খরচও তুলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন কৃষক। বাধ্য হয়ে হিমাগারে রাখার চেষ্টা করেও পারছেন না। স্লিপ কার্ড ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র তিন দিনে শেষ করেছে হিমাদ্রি কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বিগত বছর আমাদের হিমাগারে আলু রাখা ব্যবসায়ীদের এবারও কার্ড দেওয়া হলেও পরিমাণে কম। কালোবাজারে বুকিং কার্ড বিক্রির নিয়ম নেই।’
যদিও কৃষক অভিযোগ করছেন, হিমাগার কর্তৃপক্ষ যোগসাজশ করে মজুতকারীদের সংরক্ষণের কার্ড আগেই দিয়েছে। ফলে সাধারণ কৃষক পাননি। ট্রলি, ট্রাক্টর, ভ্যানযোগে ব্যবসায়ী ও মজুতকারীদের হাজার হাজার বস্তা আলু হিমাগারে যাচ্ছে। আর কার্ড না পেয়ে খালি হাতে ফিরছেন কৃষক। এভাবে চলতে থাকলে তারা আগামী মৌসুমের জন্য বীজও সংরক্ষণ করতে পারবেন না।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হিমাদ্রি কোল্ড স্টোরেজে আলুর বুকিং কার্ড না পেয়ে শত শত কৃষক মূল ফটক অবরুদ্ধ করে রাখেন। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির অভিযোগ তুলে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কও অবরোধ করেন। এদিকে গোবিন্দগঞ্জ কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার সজীব বলেন, এ বছর স্থানীয় কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। মজুতদারদের কার্ড দেওয়া হচ্ছে না। কৃষক ৫ থেকে ১০ বস্তা করে আলু আনলে রাখার সমস্যা হবে না। তাদের হিমাগার দুটির ধারণক্ষমতা প্রায় সাড়ে ৩ লাখ বস্তা হলেও এ পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার বস্তা বুকিং হয়েছে।
কৃষক যাতে তাদের উৎপাদিত আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে পারেন, সে জন্য নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা। তিনি বলেন, মালিক সমিতি জানিয়েছেন, তাদের হিমাগারে যথেষ্ট জায়গা ফাঁকা রয়েছে। কৃষকের বীজ আলু রাখতে সমস্যা হবে না। কালোবাজারে বুকিং কার্ড বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। কেউ মজুতের কারসাজি করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আল গ ব ন দগঞ জ ব যবস য় উপজ ল উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ
চট্টগ্রামে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় দাসকে কোতোয়ালি থানার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।