‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ স্লোগানটি কীভাবে এল
Published: 10th, March 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যে কয়েকটি স্লোগান আন্দোলনকারীদের কাছে জনপ্রিয় হয়েছিল, তার মধ্যে একটি ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও শীর্ষ ছাত্রনেতাদের অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ স্লোগান ব্যবহার করেছেন।
জুলাইয়ে তরুণেরা নিজেরা যেমন স্লোগান তৈরি করেছেন, তেমনি ব্যবহার করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম থেকে জন্ম নেওয়া স্লোগানও। তার একটি ‘মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’।
এ স্লোগানের পটভূমি কিউবার স্বাধীনতার সংগ্রাম। ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কিউবার সংবাদমাধ্যম হাভানা টাইমসে প্রকাশিত একটি লেখা থেকে জানা যায়, স্লোগানটির জন্ম ১৮৬৮ সালে স্পেনের উপনিবেশ থেকে কিউবার স্বাধীনতার সংগ্রামের শুরুর দিকে। তখন স্লোগানটি ছিল ‘স্বাধীনতা অথবা মৃত্যু’।
এরপর কিউবার কাউতো নদী দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। ১৯৫৯ সালে ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে বিপ্লবে পতন ঘটে কিউবার মার্কিন মদদপুষ্ট বাতিস্তা সরকারের। যদিও শান্তি ফেরেনি। কিউবায় ঘটতে থাকে একের পর অন্তর্ঘাতমূলক ঘটনা। ১৯৬০ সালের মার্চে কিউবার রাজধানী হাভানার সমুদ্রবন্দরে একটি ফরাসি জাহাজে বোমা হামলা হয়। সে হামলায় মারা যান ১০০ জন।
ওই বছরের ৬ মার্চ নিহত ব্যক্তিদের শেষকৃত্যে সহযোদ্ধাদের লাশের কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে ফিদেলের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা প্রতিবিপ্লব ঠেকাতে শপথ নেন ‘স্বদেশভূমি অথবা মৃত্যু’ স্লোগান দিয়ে।
ফিদেল কাস্ত্রো.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ