গাজীপুরে তিন পোশাক কারখানায় গতকাল বুধবার শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। শ্রমিকরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। দুটি ঘটনায় দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। অন্যটির ক্ষেত্রে দাবি না মানায় ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার বাঘের বাজারে শ্রমিক জান্নাতুল ফেরদৌস তামান্না গতকাল ভোরে ট্রাক ও অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত হন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্ট লিমিটেডের শ্রমিকরা সকাল ৮টায় সড়কে অবস্থান নেন। প্রায় চার ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। ট্রাকচালককে গ্রেপ্তার ও নিহতের পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণসহ ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

শ্রমিকরা জানান, শ্রমিক জান্নাতুলের সন্তান হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে সহকারী উৎপাদন ব্যবস্থাপক (এপিএম) মতিউর রহমানের কাছে এক দিনের ছুটি চেয়েছিলেন। ছুটি না দিয়ে পরিচয়পত্র রেখে বাসায় চলে যেতে বলেন এপিএম। ভোরে কারখানায় আসার পথে মহাসড়ক পার হতে গিয়ে জান্নাতুলের মৃত্যু হয়।

নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহমেদ বলেন, শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। দাবি মেনে নেওয়া হলে দুপুর ১২টার দিকে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেন। এর পর মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

এদিকে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকের গ্লোবসের শ্রমিকরা তৃতীয় দিনের মতো গতকাল সকালে বিক্ষোভ করেন। শ্রমিক নির্যাতনের প্রতিবাদ ও বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়াসহ কয়েকটি দাবি জানান। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশ কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

শ্রমিকরা মৌচাক-ফুলবাড়িয়া আঞ্চলিক সড়কে গিয়ে আবার বিক্ষোভ করে। আশপাশের কয়েকটি কারখানায় ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক এবং আঞ্চলিক সড়কে অবস্থান নেন।

পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, গত শনিবার গ্লোবস ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিক আশরাফুল ইসলামের গায়ে হাত তোলেন লাইনম্যান জহিরুল ইসলাম। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা জহিরুলসহ দুই কর্মকর্তাকে পিটিয়ে আহত করে। অন্য কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে। খবর পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণ করে। সেই বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গত দু’দিন ধরে আন্দোলন করছে শ্রমিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার সকালে কারখানা বন্ধের একটি নোটিশ টাঙিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। এতে বলা হয়, শ্রম আইনের ১৬ ধারা অনুযায়ী বুধবার থেকে গ্লোবস কারখানা লে অফ (বন্ধ) ঘোষণা করা হচ্ছে।

কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

অন্যদিকে, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বারতোপা গ্রামের খান টেক্স ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা প্রায় ৬ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। দুই মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও ঈদ বোনাস দেওয়ার দাবিতে গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে তারা মাওনার সলিংমোড়ে একত্রিত হয়। মাওনা-কালিয়াকৈর সড়কে অবস্থান নেয়। দুপুর দেড়টার দিকে কর্তৃপক্ষ দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে সড়ক ছাড়ে শ্রমিকরা।

কারখানার ব্যবস্থাপক মো.

মাসুদ রানা বলেন, আগামী ১৭ ও ২৩ মার্চ দুই মাসের বেতন পরিশোধ করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবস থ ন ন কর মকর ত গতক ল অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ছয়জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরো আটজনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।”

আরো পড়ুন:

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত: আইএসপিআর

ঢামেক হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার

তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে  জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।”

বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ।”

তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ