ইসলামের বিধানাবলি মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। সমাজের দুস্থ ও অসহায় দরিদ্ররাও যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেন, সে জন্য সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরার বিধান। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়। সাদাকাতুল ফিতর রমজান, রোজা ও ঈদের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব আমল।

ঈদের দিন সকালে যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের (সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ ও ব্যবসাপণ্যের) মালিক থাকবেন, তাঁর নিজের ও পরিবারের ছোট–বড় সবার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা তাঁর প্রতি ওয়াজিব। ফিতরা দ্বারা রোজার ত্রুটিবিচ্যুতি মাফ হয়ে যায়।

সাদাকাতুল ফিতর একটি ফজিলতপূর্ণ ওয়াজিব আমল। যাঁরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নন, তাঁরাও ফিতরা প্রদান করতে পারবেন। কারণ, এটা সুন্নত ইবাদত। আবু সাঈদ খুদরি (রা.

) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন আমাদের মাঝে ছিলেন, তখন আমরা ছোট–বড়, মুক্ত ক্রীতদাস সকলের পক্ষ থেকে সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করতাম এক সা খাদ্য, অর্থাৎ এক সা পনির বা এক সা যব বা এক সা খেজুর অথবা এক সা কিশমিশ। আমরা এভাবেই প্রদান করতে ছিলাম।’ একবার হজরত মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান (রা.) হজ বা ওমরাহ উপলক্ষে মদিনায় এলেন, তিনি জনগণের উদ্দেশে মিম্বারে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলেন। তখন তিনি আলোচনা করলেন সে বিষয়ে, যে বিষয়ে মানুষ প্রশ্ন করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখছি শামের দুই মুদ (নিসফ সা বা পৌনে দুই কেজি) আটা সমান হয় (মূল্যমান হিসেবে) এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) খেজুরের। অতঃপর মানুষ (সাহাবায়ে কিরাম ও তাবিয়িগণ) এই মত গ্রহণ করলেন।’ (মুসলিম, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৩১৭-৩১৮)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জমানায় আমরা সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করতাম এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম প্রায়) খাদ্যবস্তু, তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৪) তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করতাম এক সা খাদ্যবস্তু, যেমন এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনির, এক সা কিশমিশ।’ (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৫)

নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্য, পণ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকায়ও ফিতরা প্রদান করা যায় এবং অন্য কোনো বস্তু, যেমন পোশাক-আশাক, ঈদের বাজার ইত্যাদি কিনেও দেওয়া যায়। পিতা–মাতা ও ঊর্ধ্বতন; ছেলেমেয়ে ও অধস্তন এবং স্ত্রীকে ওয়াজিব সদকা, ফিতরা ও জাকাত প্রদান করা যায় না

ফিতরা আটা বা গমও এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) দেওয়া উত্তম। হজরত হাসান বসরি (রহ.) বর্ণনা করেন, হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘আল্লাহ যখন তোমাদের প্রাচুর্য দিয়েছেন, তোমরাও উদার হও, গমও এক সা দাও।’ (নাসায়ি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৬৮-২৭০) 

যেসব খাদ্যবস্তু স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সহজে সংরক্ষণ করা যায়, সহজে বিনিময়যোগ্য ও বাজারমূল্য স্থিতিশীল থাকে; সেসব খাদ্যদ্রব্য দ্বারা সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করা যায়। উল্লেখ্য, চালের মধ্যে উক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান এবং সৌদি আরবসহ সব আরব দেশ ও প্রায় সব মুসলিম দেশ বর্তমানে চালের হিসাব গ্রহণ করেছে। মুজতাহিদ ফকিহরা বলেন, যেখানে যা প্রধান খাদ্য, তা দ্বারা ফিতরা প্রদান করাই শ্রেয়।

সর্বোচ্চ মূল্যের খেজুর, উন্নত মানের চাল বা খাদ্যবস্তু অথবা এর মূল্যে ফিতরা প্রদান করা উত্তম। ধনীদের সর্বোচ্চ ও সাধারণ মানুষের মাঝামাঝি মূল্যে প্রদান করাই শ্রেয়। ইনসাফ হলো, যাঁরা যে চালের ভাত খান বা যাঁরা যে খেজুর দ্বারা ইফতার করেন, তাঁরা সে সমমানের বা সমমূল্যে ফিতরা প্রদান করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তা–ই উত্তম, দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’ (বুখারি, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ১৮৮)

নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্য, পণ্যসামগ্রী বা তার মূল্যে টাকায়ও ফিতরা প্রদান করা যায় এবং অন্য কোনো বস্তু, যেমন পোশাক-আশাক, ঈদের বাজার ইত্যাদি কিনেও দেওয়া যায়। পিতা–মাতা ও ঊর্ধ্বতন; ছেলেমেয়ে ও অধস্তন এবং স্ত্রীকে ওয়াজিব সদকা, ফিতরা ও জাকাত প্রদান করা যায় না। একজনের ফিতরা অন্যজন প্রদান করলেও আদায় হয়ে যাবে। সাদাকাতুল ফিতর গ্রহীতার সুবিধার জন্য রমজানেও প্রদান করা যাবে। 

ফিতরা তাঁদের দেওয়া যায়, জাকাত যে আটটি খাতে প্রদান করা যায়। কোরআন মজিদের বর্ণনা, ‘মূলত সাদাকাত হলো ফকির, মিসকিন, সাদাকাকর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নও মুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে (ইসলাম সুরক্ষার জন্য), বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফির ও পথশিশুদের জন্য। এটি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞানী ও পরম কৌশলী।’(সুরা-৯ তওবা, আয়াত: ৬০)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: খ দ যবস ত আল ল হ

এছাড়াও পড়ুন:

আশিরের গবেষণাগারে বিএনপি নেতা রিজভী, বললেন, তারেক রহমান পাঠিয়েছেন

ড্রোন ও বিমানের ছয় শতাধিক মডেল তৈরি করে আলোচনায় আসা চট্টগ্রামের বাঁশখালীর তরুণ মো. আশির উদ্দীনের গবেষণাগার পরিদর্শন করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পুঁইছড়ি গ্রামে আশিরের গবেষণাগার পরিদর্শনে যান তিনি।

পরিদর্শনকালে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদ পতনের মূল কারিগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আমরা এখানে এসেছি। তারেক রহমান লন্ডন থেকে আশির উদ্দীনের ড্রোন প্রযুক্তির ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আমাদের পাঠিয়েছেন এই প্রতিভাকে মূল্যায়ন করার জন্য।’

রিজভী আরও বলেন, ‘সারা দেশে কেউ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, কেউ সংগীতে, কেউ শিল্পী হিসেবে নানাভাবে প্রতিভার ছাপ রাখছে। আমরা খোঁজখবর নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা যেন উন্নতি করতে পারে, সেটাই মূল লক্ষ্য। প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য আমরা এসেছি। আশির উদ্দীনের মতো প্রতিভাবান তরুণেরা আগামী দিনের বাংলাদেশকে গড়ে তুলবে।’

পরিদর্শনকালে রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’–এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান, সদস্যসচিব মোকছেদুল মোমিন; বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইদ্রিচ মিয়া, সদস্যসচিব হেলাল উদ্দীন প্রমুখ।

আশির উদ্দীন সরকারি পলিটেকনিক কলেজ থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। গ্রামে তাঁর ‘এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ল্যাব’ নামের ১৫ বর্গফুট আয়তনের একটি ল্যাব আছে। এলাকাবাসীর কাছে তিনি ‘খুদে বিজ্ঞানী’ ও ‘বিমানবিজ্ঞানী’ নামে পরিচিত। ২০১৬ সালে শুরু করে ড্রোন ও বিমানের ছয় শতাধিক মডেল তৈরি করেন তিনি। এরই মধ্যে তাঁকে সম্মানিত করেছে সামরিক বাহিনী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ