রাজশাহীর বাঘায় স্কুলের জমি দখলে নিতে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ছুটির দিনে সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। বিএনপির ওই নেতা দাবি করছেন, এই জমি তার বাবার কেনা সম্পত্তি। এতদিন আওয়ামী লীগের লোকজন স্কুলের নাম করে জমিটি দখলে রেখেছিলেন। তারা উদ্ধার করেছেন।

এই বিএনপি নেতার নাম আমজাদ খাঁ। তিনি বাঘা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। তার ভাই আমিরুল খাঁ বাঘা পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাদের বাড়ি বাঘার নারায়ণপুর গ্রামে। বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের বাজুবাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ। স্কুলের জমির পাশে তাদের আমবাগান আছে।

রমজান মাস উপলক্ষে এখন স্কুল ছুটি। এ অবস্থায় গত ৫ মার্চ সকালে আমজাদ খাঁ এবং তার ভাই আমিরুল খাঁ ৩০-৪০ জন লোক নিয়ে গিয়ে বাজুবাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর-পশ্চিম কোণের প্রায় ১০০ ফুট সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলেন। 

খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে যান প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান। তিনি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মো.

মামুনূর রহমানকে বিষয়টি অবহিত করেন।

শিক্ষা কর্মকর্তা তখন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তারকে জানান। ইউএনও এরপর বিএনপি নেতা আমজাদ খাঁকে ফোন করে প্রাচীর ভাঙতে নিষেধ করেন। এরপর তারা একটি প্রাচীর ভেঙেই চলে যান। এর ফলে ৫৩ শতক জায়গা ‘উদ্ধার’ হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বিকেলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা আমজাদ খাঁ।

তিনি বলেন, ‘‘আমার বাপে ১৯৫০ সালে এই জমি কিনেছেন। ১৯৭৪ সালে জমির রেকর্ড হয়েছে আমাদের নামে। তারপর থেকে আমরা খাজনা দিয়ে আসছি। জমি আমাদের দখলেও ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে দলের পান্ডারা স্কুলের নামে আমাদের জায়গা দখল করে নেয়। আমরা প্রাচীর ভেঙে জায়গা উদ্ধার করেছি। আমরা স্কুলের জমি দখল করিনি।’’

তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বলছেন, “স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৭২ সালে। তারপর তাসেন প্রামাণিক নামের এক ব্যক্তির এক দাগের ৯৪ শতক জায়গার মধ্যে স্কুল কেনে ৩৭ শতক। বাকিটা কেনেন আমজাদ খাঁ’র বাবা। কিন্তু তারা পুরো জমিটাই তাদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।”

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘এতদিন জমি নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। তাই আমরাও মাথা ঘামাইনি। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আমজাদ খাঁ ক্ষমতা দেখিয়ে জমি দখল করেছেন। আমি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। সরকারি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি মাপজোখ করা হবে।”

গত ১১ মার্চ স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মো. মামুনূর রহমান এক চিঠিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তারকে সার্বিক বিষয় জানিয়েছেন। তিনি সার্ভেয়ার দিয়ে স্কুলের জমি পরিমাপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।

শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মো. মামুনূর রহমান বলেন, ‘‘স্কুলের জমি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। একটা গ্রুপ দাবি করে যে, স্কুলের ভেতর তাদের জমি আছে। আমরা ইউএনও বরাবর আবেদন জানিয়েছি জমিটা মাপজোখ করার জন্য। মাপজোখের পর বিষয়টার মীমাংসা হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’

বাঘার ইউএনও শাম্মী আক্তার বলেন, ‘‘আমাকে জানানো হয় যে কেউ একজন জমি দখল করছে। কারা ভাঙছে নাম জানতে চাইলে সেটা আমাকে জানানো হয়। আমি তাকে ফোন করে প্রাচীর ভাঙতে নিষেধ করি। তারপর তিনি এসে দাবি করেন যে, জমি তাদের। এ অবস্থায় শিক্ষা কর্মকর্তা জমিটা মাপজোখের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। আমি এসি ল্যান্ডকে দায়িত্ব দিয়েছি। আগামী সপ্তাহে হয়তো সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে জমি মাপা হবে।’’

ঢাকা/কেয়া/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত আমজ দ খ উপজ ল ব এনপ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী

অভিনেতা সমু চৌধুরী পরিবারের কাছে ফিরে গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া ৩টার পর পুলিশ তাঁকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে মাজারের গাছতলায় গামছাপরিহিত সমু চৌধুরীর ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানা জল্পনা শুরু হয়।

গফরগাঁওয়ের পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম বলেন, অভিনেতা সমু চৌধুরীকে রাত ৩টা ২০ মিনিটের দিকে খালাতো ভাই অপু চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের লোকজনও ছিলেন। তিনি বলেন, সমু চৌধুরী এর আগে মাজারটিতে কয়েকবার এলেও কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি। এবারও মাজারে একাকী সময় কাটাতে এসেছিলেন তিনি।

এর আগে গত বুধবার রাতে ঢাকা থেকে মোটরসাইকেলে করে গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নে অবস্থিত মুখী শাহ্ মিসকিনের মাজারে আসেন সমু চৌধুরী। পরদিন গতকাল দুপুরে মাজারের গাবগাছের নিচে শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। মাজারের পাশের বাসিন্দা আল মামুন হৃদয় ফেসবুকে তাঁর গাছতলায় শুয়ে থাকার ছবি পোস্ট করেন। দ্রুত সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা সমু চৌধুরীকে মানসিকভাবে অসুস্থ বলে দাবি করেন। সমু চৌধুরীকে এমন অবস্থায় দেখতে পেয়ে সেখানে ভিড় করেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিকেল গাড়িয়ে সন্ধ্যা হলে পুলিশের অনুরোধেও থানায় যাননি সমু চৌধুরী। সন্ধ্যার পর লোকজন আরও বাড়তে থাকে। এ অবস্থায় পুলিশের পাশাপাশি মাজার প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনী অবস্থান নেয়। এ সময় সমু চৌধুরী জানান, তিনি সুস্থ আছেন। সারা রাত মাজারে ধ্যানে ছিলেন।

আরও পড়ুনঅভিনেতা সমু চৌধুরীকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছে পুলিশ, কী হয়েছিল তাঁর২১ ঘণ্টা আগে

গতকাল রাত ৯টার দিকে সমু চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন গফরগাঁওয়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন। সমু চৌধুরী সুস্থ আছেন কি না, তা জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন সেখানে উপস্থিত হন।

ইউএনও এন এম আবদুল্লাহ-আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা এক ঘণ্টার বেশি সময় অভিনেতার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং তাঁকে সুস্থ পাওয়া যায়। তাঁর বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হয়, পুরো ঘটনা তাঁর জবানিতে শোনা হয়। অভিনেতা মাজারভক্ত মানুষ। এ মাজারে আগেও এসেছিলেন। তাঁকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও গতকাল তাঁর ভাষায় গুরুবার ও গুরুত্বপূর্ণ রাত হওয়ায় তিনি মাজারেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবির কারণে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়।’

সমু চৌধুরীর বয়স ৬২ বছর। তিনি ১৯৯০ সালে একটি নাটকের মাধ্যমে অভিনয়জীবনে প্রবেশ করেন। এ ছাড়া উদীচীর সঙ্গে ছিলেন ১২ বছর। ব্যক্তিজীবনে তিনি অবিবাহিত। তাঁর বাড়ি যশোর। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শুধু মা জীবিত আছেন। সমু চৌধুরী যশোরে থাকেন বলেও জানান ইউএনও।

আরও পড়ুনমাজার থেকে সরতে চাইছেন না সমু চৌধুরী১৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ৩১টি পরিবার
  • পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী