স্কুলের জমি দখলে ছুটির দিনে প্রাচীর ভেঙে দিলেন বিএনপি নেতা
Published: 13th, March 2025 GMT
রাজশাহীর বাঘায় স্কুলের জমি দখলে নিতে স্থানীয় এক বিএনপি নেতা ছুটির দিনে সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। বিএনপির ওই নেতা দাবি করছেন, এই জমি তার বাবার কেনা সম্পত্তি। এতদিন আওয়ামী লীগের লোকজন স্কুলের নাম করে জমিটি দখলে রেখেছিলেন। তারা উদ্ধার করেছেন।
এই বিএনপি নেতার নাম আমজাদ খাঁ। তিনি বাঘা পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি। তার ভাই আমিরুল খাঁ বাঘা পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তাদের বাড়ি বাঘার নারায়ণপুর গ্রামে। বাড়ি থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের বাজুবাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ। স্কুলের জমির পাশে তাদের আমবাগান আছে।
রমজান মাস উপলক্ষে এখন স্কুল ছুটি। এ অবস্থায় গত ৫ মার্চ সকালে আমজাদ খাঁ এবং তার ভাই আমিরুল খাঁ ৩০-৪০ জন লোক নিয়ে গিয়ে বাজুবাঘা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর-পশ্চিম কোণের প্রায় ১০০ ফুট সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলেন।
খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে যান প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান। তিনি স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মো.
শিক্ষা কর্মকর্তা তখন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাম্মী আক্তারকে জানান। ইউএনও এরপর বিএনপি নেতা আমজাদ খাঁকে ফোন করে প্রাচীর ভাঙতে নিষেধ করেন। এরপর তারা একটি প্রাচীর ভেঙেই চলে যান। এর ফলে ৫৩ শতক জায়গা ‘উদ্ধার’ হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বিকেলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা আমজাদ খাঁ।
তিনি বলেন, ‘‘আমার বাপে ১৯৫০ সালে এই জমি কিনেছেন। ১৯৭৪ সালে জমির রেকর্ড হয়েছে আমাদের নামে। তারপর থেকে আমরা খাজনা দিয়ে আসছি। জমি আমাদের দখলেও ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে দলের পান্ডারা স্কুলের নামে আমাদের জায়গা দখল করে নেয়। আমরা প্রাচীর ভেঙে জায়গা উদ্ধার করেছি। আমরা স্কুলের জমি দখল করিনি।’’
তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান বলছেন, “স্কুল প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৭২ সালে। তারপর তাসেন প্রামাণিক নামের এক ব্যক্তির এক দাগের ৯৪ শতক জায়গার মধ্যে স্কুল কেনে ৩৭ শতক। বাকিটা কেনেন আমজাদ খাঁ’র বাবা। কিন্তু তারা পুরো জমিটাই তাদের নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।”
প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘এতদিন জমি নিয়ে কোনো ঝামেলা হয়নি। তাই আমরাও মাথা ঘামাইনি। দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আমজাদ খাঁ ক্ষমতা দেখিয়ে জমি দখল করেছেন। আমি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। সরকারি সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি মাপজোখ করা হবে।”
গত ১১ মার্চ স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মো. মামুনূর রহমান এক চিঠিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তারকে সার্বিক বিষয় জানিয়েছেন। তিনি সার্ভেয়ার দিয়ে স্কুলের জমি পরিমাপে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
শিক্ষা কর্মকর্তা মীর মো. মামুনূর রহমান বলেন, ‘‘স্কুলের জমি নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। একটা গ্রুপ দাবি করে যে, স্কুলের ভেতর তাদের জমি আছে। আমরা ইউএনও বরাবর আবেদন জানিয়েছি জমিটা মাপজোখ করার জন্য। মাপজোখের পর বিষয়টার মীমাংসা হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’
বাঘার ইউএনও শাম্মী আক্তার বলেন, ‘‘আমাকে জানানো হয় যে কেউ একজন জমি দখল করছে। কারা ভাঙছে নাম জানতে চাইলে সেটা আমাকে জানানো হয়। আমি তাকে ফোন করে প্রাচীর ভাঙতে নিষেধ করি। তারপর তিনি এসে দাবি করেন যে, জমি তাদের। এ অবস্থায় শিক্ষা কর্মকর্তা জমিটা মাপজোখের উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। আমি এসি ল্যান্ডকে দায়িত্ব দিয়েছি। আগামী সপ্তাহে হয়তো সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে জমি মাপা হবে।’’
ঢাকা/কেয়া/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর মকর ত আমজ দ খ উপজ ল ব এনপ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী