পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি আইএসপিআর) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী ভারতকে বেলুচিস্তানের সন্ত্রাসবাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রীদের জিম্মি করার ঘটনা নিয়ে বলতে গিয়ে গতকাল শুক্রবার এমন অভিযোগ করেন তিনি।

শুক্রবার বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী সরফরাজ বুগতির সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ডিজি আইএসপিআর। তিনি বলেন, ‘বেলুচিস্তানে সাম্প্রতিক হামলা এবং অতীতে ঘটা অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী ঘটনায় আমরা বুঝতে পেরেছি, আপনাদের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশী দেশই এসবের পৃষ্ঠপোষক।’

নিষিদ্ধঘোষিত সশস্ত্র গোষ্ঠী বালুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) সদস্যরা গত মঙ্গলবার জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা চালায়। পার্বত্য এলাকা বোলান পাসে পাথুরে সুড়ঙ্গ অতিক্রমকালে ট্রেনটিকে নিশানা করা হয়। তাঁরা রেললাইন উড়িয়ে দিয়ে ট্রেনের ৪৪০ জন যাত্রীকে জিম্মি করেন।

পরে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জিম্মিদের উদ্ধার করে। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অভিযানে ৩৩ হামলাকারী নিহত হয়েছেন। তবে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার আগেই হামলাকারীরা ২৬ যাত্রীকে হত্যা করেন। অভিযান চলার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর চার সদস্যও নিহত হয়েছেন।

ডিজি আইএসপিআর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেছেন, ট্রেনটিকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাত্রী জিম্মি করার আগে হামলাকারীরা ফ্রন্টিয়ার কোরের টহল দলের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। এতে ফ্রন্টিয়ার কোরের তিন সেনা নিহত হয়েছেন।

শুক্রবার আহমেদ শরিফ আরও বলেছেন, নিহত ২৬ ট্রেনযাত্রীর মধ্যে ১৮ জন সেনাবাহিনী ও ফ্রন্টিয়ার কোরের সদস্য, ৩ জন পাকিস্তান রেলওয়ে ও অন্য বিভাগের কর্মকর্তা এবং ৫ জন বেসামরিক নাগরিক।

নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, ট্রেন জিম্মি করার ঘটনায় আরও ৩৭ যাত্রী আহত হয়েছেন।

ডিজি আইএসপিআর বলেন, সন্ত্রাসীরা দুর্গম পার্বত্য এলাকায় ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রেনটি থামায়।

আহমেদ শরিফ বলেন, ইতিমধ্যে সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে ভারতের গণমাধ্যম যুদ্ধ শুরু করেছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের পৃষ্ঠপোষকতার ভারতীয় নীতির অংশ হিসেবে জাফর এক্সপ্রেসে হামলা চালানো হয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে ডিজি আইএসপিআর বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও বানিয়ে জাফর এক্সপ্রেসের হামলার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্বেষপূর্ণ অপপ্রচার চালানো হয়েছে।

এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ভুয়া ভিডিও তৈরির মাধ্যমে পরিস্থিতিকে অতিরঞ্জিত করে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের গণমাধ্যম।

ভারতের গণমাধ্যম ভুয়া ভিডিও বানিয়ে (পাকিস্তানের বিরুদ্ধে) একটি বয়ান তৈরির চেষ্টা করছে উল্লেখ করে আহমেদ শরিফ বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সন্ত্রাসীদের পুরোনো ভিডিও সংগ্রহ করে ভারতীয় গণমাধ্যম এখন প্রচার করছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এই মুখপাত্র বলেন, ‘বেলুচিস্তানে একধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা চলছে। আরেক তৎপরতা চালাচ্ছে ভারতের গণমাধ্যম।’

মানচিত্রের সহায়তা নিয়ে ট্রেন ছিনতাই করা হয়েছে উল্লেখ করে লে.

জেনারেল আহমেদ শরিফ বলেন, সন্ত্রাসীরা কয়েকটি ভাগে ভাগ হয়ে ট্রেন ছিনতাই করে। এর মধ্যে একটি গ্রুপ ট্রেনের ভেতরে নারী ও শিশুদের জিম্মি করে রাখে।

পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা বলেন, আরেকটি গ্রুপ বাকি যাত্রীদের ট্রেনের বাইরে নিয়ে আসে এবং তাদের বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করে। মানবিক মূল্যবোধের ‘ভুয়া আবেগ’ তৈরির লক্ষ্যে সন্ত্রাসীরা সন্ধ্যায় একটি জিম্মি দলকে মুক্তি দেয়।

আহমেদ শরিফ বলেন, অবশ্য কিছু কিছু যাত্রী নিজেদের চেষ্টায় সন্ত্রাসীদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পান। সন্ত্রাসীরা পলায়নরত যাত্রীদের দিকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দাবি করেন, সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে থাকা তাদের পৃষ্ঠপোষক ও প্রশিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসীদের যোগাযোগ থেকে জানতে পেরেছি, তাদের মধ্যে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীরাও ছিল।’

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রতিক্রিয়ায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, বাজেট গতানুগতিক। দেশের ইন্টারনেট খাতের জন্য বিশেষ কিছু নেই। মাঝারি ও ছোট আইএসপিদের জন্য বাজেটে তেমন কোনো সুখবর নেই। আগে যা ছিল, এখনও তা-ই আছে। ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী যারা আছেন, তারা শতভাগ দেশি উদ্যোক্তা। তবে করপোরেট গ্রাহকের জন্য ইন্টারনেট সেবা দেয়, তারা 
কিছুটা সুবিচার পেতে পারেন।
কারণ, সব ধরনের করপোরেট প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স (এআইটি) কেটে রেখে বিল পরিশোধ করে। এআইটি ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করায় স্বল্প সংখ্যক আইএসপি কিছুটা সুবিচার পেতে পারে। সরকার ইন্টারনেটের দাম কমাতে চায়। কিন্তু ভ্যাট, ট্যাক্সে হাত দেবে না; ইকুইপমেন্টের মধ্যেও হাত দেবে না। ফলে কোনো লাভ হবে না। ভ্যাট, ট্যাক্সে হাত না দিলে ইন্টারনেটের দাম কমবে না।
শাওমি বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন চৌধুরী বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, আমি মনে করি, ভোক্তা পর্যায়ে স্মার্টফোন খাতে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। উৎপাদন পর্যায়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট নির্মাতার লাভের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে। তবে সেটিও খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ মোবাইল হ্যান্ডসেট প্রস্তুতকারক প্রায় ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে এবং ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে এত বেশি ব্যয় হয় না। ধারণা করছি, ব্যবসায়িক পর্যায়েও এর কোনো উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে না।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ওভার দ্য টপ প্ল্যাটফর্ম (ওটিটি) পরিষেবায় আরোপ করা হয়েছে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। এতে চরকি, নেটফ্লিক, বঙ্গ ছাড়াও কয়েকটি ওটিটিতে সিনেমা ও সিরিজ ছাড়াও ভালো মানের কনটেন্ট দেখতে দর্শকের ব্যয় বাড়বে। বর্তমানে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়।
সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, ওটিটি পরিষেবার ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব দূরদৃষ্টিহীন সিদ্ধান্ত। দেশের উদীয়মান ডিজিটাল অর্থনীতি ও উদ্ভাবনী শিল্পের বিকাশ ব্যাহত করবে। সিদ্ধান্তটি একদিকে যেমন দর্শকের ব্যয় বাড়াবে, অন্যদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বড় ধরনের বাধা হবে। সরকারের উচিত, দ্রুত সিদ্ধান্তটি পুনর্বিবেচনা করা এবং ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সহায়ক নীতিমালা গ্রহণ করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইএসপি: স্কেলে টিকে থাকার লড়াই
  • ডিজিটাল খাতে বাজেটের প্রভাব কেমন