স্মার্টফোন ছাড়া তিন দিন কাটানো কি সম্ভব? বর্তমান যুগে এটি অনেকের কাছেই চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, মাত্র ৭২ ঘণ্টার জন্য স্মার্টফোন থেকে বিরতি নিলে মস্তিষ্কের কার্যপ্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। গবেষণা অনুযায়ী, স্বল্প সময়ের জন্য স্মার্টফোনের ব্যবহার সীমিত করলেই তা আসক্তির লক্ষণ কমাতে পারে এবং অতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাসে সহায়ক হতে পারে।

স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়; বরং দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে ওঠার মুহূর্ত থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগপর্যন্ত এটি আমাদের হাতের নাগালের মধ্যেই থাকে। কিন্তু স্মার্টফোন ব্যবহারে কিছুদিনের জন্য নিয়ন্ত্রণ আনলে কী পরিবর্তন ঘটতে পারে?

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র তিন দিনের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার সীমিত করলে মস্তিষ্কের কার্যপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন ঘটে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ‘কম্পিউটারস ইন হিউম্যান বিহেভিয়ার’–এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখানো হয়েছে, স্মার্টফোন ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনলে কীভাবে মস্তিষ্কের পরিবর্তন তৈরি হয়। গবেষণাটিতে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী ২৫ জন অংশ নেন। পরীক্ষার আগে তাঁদের স্মার্টফোন ব্যবহারের মাত্রা, মানসিক অবস্থা এবং প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতার প্রবণতা মূল্যায়ন করা হয়। এরপর তাঁদের তিন দিনের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে বলা হয়। তবে জরুরি কাজ, দৈনন্দিন কার্যক্রম বা নিকটজনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সীমিত ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়।

এই সময় গবেষকেরা ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এফএমআরআই) ব্যবহার করে অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের কার্যক্রম বিশ্লেষণ করেন। তিন দিনের পরীক্ষার পর তাঁদের স্মার্টফোন চালু ও বন্ধ অবস্থায় ছবি দেখানো হলে মস্তিষ্কের ডোপামিন ও সেরোটোনিন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়। গবেষকদের মতে, এই দুটি রাসায়নিক আবেগ, মানসিক অবস্থা ও আসক্তি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষকেরা বলছেন, হঠাৎ স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনলে প্রত্যাহারজনিত লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যা সাধারণত মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। অতি মাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এবং গড় ব্যবহারকারীদের মধ্যেও এই পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। স্মার্টফোন–আসক্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও অতিরিক্ত ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব অনস্বীকার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপ, মনোযোগের ঘাটতি এবং হতাশার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

গবেষণার ফলাফল বলছে, মাত্র তিন দিনের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার কমালে মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। প্রযুক্তিনির্ভর এই সময়ে সুস্থ ডিজিটাল অভ্যাস গড়ে তোলার গুরুত্ব আরও বেশি। স্মার্টফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনলে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে এবং প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ তৈরি হতে পারে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ন র জন য ব যবহ র র

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ