চীনে মেডিকেল ট্যুরিজম: সম্পর্কের নতুন দিগন্ত
Published: 16th, March 2025 GMT
এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ-চীন চিকিৎসা সেবা সহায়তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো, যা দুই দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দ্বিপাক্ষিক চিকিৎসাসেবা সহযোগিতার অংশ হিসেবে গত ১০ মার্চ বাংলাদেশ থেকে ১৪ জন রোগীসহ মোট ৩১ জন চীনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। এ সেবা সহজ ও নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে দুই দেশের পক্ষ থেকে।
এই উদ্যোগ কেবল দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান গভীর সম্পর্ককেই তুলে ধরে না বরং অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন পথও উন্মোচন করেছে, বিশেষ করে চিকিৎসা পর্যটন বা মেডিকেল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে। করোনা মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে মেডিকেল ট্যুরিজম শুধু একটি শিল্প নয় বরং দেশ-দুটির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধি এবং সুবিধার জন্য একটি কৌশলগত স্তম্ভ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চিকিৎসা পর্যটন বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় উন্নত চিকিৎসা সুবিধা, অত্যন্ত দক্ষ চিকিৎসা, পেশাদার এবং বিস্তৃত বিশেষায়িত চিকিৎসার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে রোগীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে চীন। চীন যেসব অত্যাধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তি ও দক্ষতার উন্মেষ ঘটিয়েছে সেগুলোর বেশিরভাগই বাংলাদেশসহ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে সহজলভ্য নয়। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির চিকিৎসা অবকাঠামো খুবই উন্নত, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত হাসপাতাল এবং দক্ষ পেশাদারদের দ্বারা পরিচালিত। দক্ষ চিকিৎসক ও সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে দেশটির সরকারি হাসপাতালগুলোতে সবসময় ভিড় লেগেই থাকে, যা স্থানীয় এবং বিদেশি রোগীদের জন্য ব্যাপক এবং সহজলভ্য চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিত করে।
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর, আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে পরিচিত ভারতের বিজেপি সরকারের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে বাংলাদেশিদের জন্য ভারতের ভিসা পেতে বেশ জটিলতা শুরু হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ট্যুরিস্ট ভিসা। মেডিকেল ভিসা কিছু দেওয়া হলেও সেটা ভিসা-প্রত্যাশীর তুলনায় নিতান্তই নগন্য। চলতি বছরের ২০ থেকে ২৪ জানুয়ারি চীনে এক সরকারি সফরের সময় বাংলাদেশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে কুনমিংয়ের হাসপাতালগুলোকে বাংলাদেশি রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য মনোনীত করার জন্য চীন সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন। ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে চীন সরকারও। ইউনান প্রদেশের ফার্স্ট পিপলস হাসপাতাল, কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট অ্যাফিলিয়েটেড হাসপাতাল এবং চাইনিজ একাডেমি অফ মেডিকেল সায়েন্সেসের ফুওয়াই ইউনান হাসপাতাল চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকায় ১ হাজার শয্যাবিশিষ্ট বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে চীন সম্মত হয়েছে, যা স্বাস্থ্যসেবা খাতে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার এবং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতা বৃদ্ধির দিকে দারুণ একটি পদক্ষেপ।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে, ২০২৩ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। এই অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গতিশীল করতে পারে চিকিৎসা পর্যটন এবং দুই দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক সম্পর্কের উপর একটি তীব্র ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যেটা আমরা ভারতে বাংলাদেশের মেডিকেল ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে দেখতে পেয়েছি। যত বেশি বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসার জন্য চীনে ভ্রমণ করবেন, ততই স্বাস্থ্যসেবা খাতে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। এর মধ্যে থাকতে পারে চীনা ও বাংলাদেশি হাসপাতালের মধ্যে অংশীদারিত্ব, যৌথ গবেষণা উদ্যোগ এবং চিকিৎসা পেশাদারদের বিনিময়। মেডিকেল ট্যুরিজমের অংশ হিসেবে আমাদের চিকিৎসকরা চীন ভ্রমণ করে সেখানকার চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেদের আরও দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারবেন। এই ধরনের সহযোগিতা কেবল উভয় দেশের স্বাস্থ্যসেবার মান বৃদ্ধি করবে না বরং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য নিশ্চিতভাবে নতুন সুযোগও তৈরি করবে।
তাছাড়া, চিকিৎসা পর্যটন উদ্যোগ চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করতে পারে। স্বাস্থ্যসেবা খাতে দুই দেশ তাদের সহযোগিতা আরও গভীর করার সাথে সাথে তারা ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জৈবপ্রযুক্তির মতো অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতার সুযোগ অন্বেষণ করতে পারে। এর ফলে যৌথ উদ্যোগ, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং নতুন পণ্য ও পরিষেবার উন্নয়ন ঘটতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর করবে।
চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে চিকিৎসা পর্যটন উদ্যোগ অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে, সাংস্কৃতিক কূটনীতি এবং তৃণমূল পর্যায়ে সংহতি বৃদ্ধিতেও দারুণ সহায়ক হতে পারে। বাংলাদেশি রোগী এবং তাদের স্বজনরা যখন চীন ভ্রমণ করবেন, তখন তারা সেখানকার সংস্কৃতি, ভাষা এবং জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ পাবেন। এই সাংস্কৃতিক বিনিময় দুই দেশের মধ্যে বৃহত্তর বোঝাপড়া এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করতে পারে, গৎবাঁধা ধ্যান-ধারণা ভেঙে ফেলতে পারে এবং দু’দেশের সম্প্রদায়ের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে।
একই সাথে, চীনের চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য পেশাদার বাংলাদেশি রীতিনীতি, মূল্যবোধ এবং পারিবারিক বন্ধন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাবেন, সহানুভূতি এবং সৌহার্দ্য গড়ে তুলতে পারেন। এই ধরনের মিথস্ক্রিয়া সদিচ্ছার এক আধার তৈরি করে, রোগীরা ফিরে আসার পর অনানুষ্ঠানিক রাষ্ট্রদূত হয়ে ওঠেন, সেখানকার চিকিৎসা উৎকর্ষতা এবং আতিথেয়তার গল্প আপনজনের সাথে ভাগ করে নেন। সময়ের সাথে সাথে, এই ব্যক্তিগত সংযোগগুলো রাষ্ট্রীয় এবং তৃণমূল পর্যায়ে চীন এবং বাংলাদেশের মধ্যে আরও ইতিবাচক এবং সহযোগিতামূলক সম্পর্কে অবদান রাখতে পারে। এইভাবে, চিকিৎসা পর্যটন কেবল অর্থনৈতিক সহযোগিতার বাহন হিসেবেই কাজ করে না বরং সাংস্কৃতিক কূটনীতির জন্য একটি অনুঘটক হিসেবেও কাজ করে, যা চীন এবং বাংলাদেশের জনগণকে আরও কাছাকাছি নিয়ে আসে।
ভারতে চিকিৎসার বিকল্প দেশ হিসেবে চীনকে বেছে নিতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটার পুরোপুরি সুবিধা পেতে হলে ভিসা ব্যবস্থাপনা সহজতর করার কোনো বিকল্প নেই। কমাতে হবে বিমান ভাড়া ও অন্যান্য খরচ। বাংলাদেশি রোগীদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানিয়েছেন, চীন বিশেষ অভ্যর্থনা দল গঠন করেছে যারা বাংলাদেশি রোগীদের অগ্রাধিকার দেবে। থাকবে বাংলা ও ইংরেজিতে দক্ষ দোভাষী। চীনে যাওয়া রোগীদের সাশ্রয়ী মূল্যের বিমান টিকিট দেওয়া হবে। ভিসা ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে বলেও আশ্বাস দেন রাষ্ট্রদূত। আমরা আশা করবো, খুব শিগগিরই বাংলাদেশ থেকে চীনে মেডিকেল ট্যুরিজম ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হবে। খরচ কমানো, ভিসা ব্যবস্থাপনা সহজের পাশাপাশি এই সেক্টরে যেন অবৈধ সিন্ডিকেটের থাবা না পড়ে, সেটাই কাম্য।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
তারা//
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সহয গ ত র সরক র র ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শব্দগুলো সাজাও, বাক্য বানাও
ইংরেজি: রি–অ্যারেঞ্জ
প্রাথমিক বিদ্যালয়–শিক্ষার্থী মেধা যাচাই পরীক্ষায় ইংরেজি ৮ নম্বর প্রশ্নটি রি–অ্যারেঞ্জের ওপর। নম্বর থাকবে ৬।
# Rearrange words in the correct order to make meaningful sentences
Set-1
a. poetry/ time/ in/ my/ free/ father/ his/ writes.
b. I/ can/ questions/ ask/ some/ you?
c. us/ let/ for/ a/ go/ picnic.
d. should/ eat/ you/ chocolate/ not/ of/ lot/ a.
e. beautiful/ girl/ the/ how/ is!
Ans:
a. My father writes poetry in his free time.
b. Can I ask you some questions?
c. Let us go for a picnic.
d. You should not eat a lot of chocolate.
e. How beautiful the girl is!
আরও পড়ুনসবুজ উদ্ভিদ থেকে খাদ্যশৃঙ্খল শুরু১০ ডিসেম্বর ২০২৫Set-2
a. hare/ for/ slept/ hour/ an/ the.
b. walk/ you/ can’t/ faster?
c. believe/ his/ hare/ the/ couldn’t/ eyes.
d. too/ for/ play/ don’t long.
e. steady/ race/ the/ wins/ slow/ but!
Ans:
a. The hare slept for an hour.
b. Can’t you walk faster?
c. The hare couldn’t believe his eyes.
d. Don’t play for too long.
e. Slow but steady wins the race!
Set-3
a. myself/ I/ introduce/ May?
b. club/ person/ the/ a/ there/ new/ is/ in/ today.
c. down/ please/ sit.
d. hour/ I/ you/ can/ in/ meet/ an.
e. Andy/ can/ when/ meet/ Tamal?
Ans:
a. May I introduce myself?
b. There is a new person in the club today.
c. Please sit down.
d. I can meet you in an hour.
e. When can Tamal meet Andy?
ইকবাল খান, প্রভাষক
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা