আর্কঅ্যাঞ্জেল ইউনিভার্সিটি: যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেল ডিগ্রি এখন আর কেবল স্বপ্ন নয়
Published: 16th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে মেডিকেল ডিগ্রি অর্জন দেশের অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। তবে খরচ, জটিল ভর্তিপ্রক্রিয়া এবং বিভিন্ন শর্তের কারণে অনেকের পক্ষে সেই স্বপ্ন পূরণ সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই স্বপ্ন যেন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। শিক্ষার্থীদের জন্য এসব প্রতিবন্ধকতাকে তুলনামূলক সহজ করেছে আর্কঅ্যাঞ্জেল ইউনিভার্সিটি।
আমেরিকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর যেখানে ৬০ থেকে ৭০ হাজার ডলার খরচ হয়, সেখানে আর্কঅ্যাঞ্জেল ইউনিভার্সিটিতে মেডিকেলে পড়তে বছরে মাত্র ১৫ হাজার ডলারই যথেষ্ট। এ ছাড়া সঙ্গে আরও থাকছে স্কলারশিপ হিসেবে প্রথম বছরে পাঁচ হাজার ডলার। সুতরাং মাত্র ১০ হাজার ডলার দিয়ে শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে পড়া শুরু করতে পারছেন।
বিশ্বমানের মেডিকেল ডিগ্রি প্রদানের লক্ষ্যে ২০২৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আর্কঅ্যাঞ্জেল ইউনিভার্সিটি। এখানে রয়েছে ছয় বছর মেয়াদি শিক্ষাক্রমের সুবিধা। পড়াশোনার শেষের দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রে ক্লিনিক্যাল রোটেশনের সুযোগ রয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল লাইসেন্স পরীক্ষা বা ইউএসএমইলির প্রস্তুতিও নিশ্চিত করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষত্ব হলো, এটি উচ্চমানের শিক্ষা এবং গবেষণার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের অ্যাডভান্সড ক্লিনিক্যাল ট্রেনিং সরবরাহ করে। যেখানে শিক্ষার্থীরা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল সিস্টেমের অংশ হতে পারবেন এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ আন্তর্জাতিক চিকিৎসাব্যবস্থায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। এতে শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক চিকিৎসা বাজারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন খুব সহজেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাআর্কঅ্যাঞ্জেল ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে বিভিন্ন উন্নত মানের ল্যাব। যেগুলো শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাদের রয়েছে তথ্যচালিত অন্তর্দৃষ্টিভিত্তিক শিক্ষাদান পদ্ধতি ‘স্মার্ট ট্রেনিং এআই স্টুডেন্ট সিস্টেম’, যা পাঠ্যক্রমের মান উন্নত রাখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয়টির এমআইভিএডি গবেষণা শাখা শুরু থেকেই চিকিৎসাক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে, যা আন্তবিষয়ক প্রকল্প ও ক্লিনিক্যাল গবেষণার মান বাড়াতেও সাহায্য করে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি অ্যানাটোমেজ টেবিল ইন্টারেকটিভ থ্রি–ডি অ্যানাটমিক্যাল ভিজ্যুয়ালাইজেশন সুবিধা প্রদান করে। তাদের প্যাথলজি ল্যাবটি আধুনিক ডায়াগনস্টিক সরঞ্জাম এবং ইমেজিং প্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত। ক্লিনিক্যাল প্যাথলজিতে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ এবং উন্নত গবেষণার সুবিধা প্রদান করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি।
হাইটেক কম্পিউটার ফ্যাসিলিটিতে ডিজিটাল লার্নিং, সিমুলেশন এবং গবেষণা সমর্থন করার জন্য অত্যাধুনিক আইটি অবকাঠামো রয়েছে আর্কঅ্যাঞ্জেল ইউনিভার্সিটিতে, যা নিশ্চিত করে শিক্ষার্থী ও কর্মীদের আপডেটেড সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার রিসোর্স এবং ওয়াইফাই সংযোগের অ্যাকসেস। সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির লাইব্রেরিতে চিকিৎসা–সাহিত্য, জার্নাল ও ডিজিটাল রিসোর্সের একটি বিস্তৃত সংগ্রহ রয়েছে, যা গবেষণা, অধ্যয়ন এবং শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে আসছে।
ক্যারিবিয়ান সাগরের নীল জলরাশির পাশে অ্যান্টিগুয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আর্কঅ্যাঞ্জেল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্তন ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করতে নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি
স্তন ক্যানসারের রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে আমরা বুঝি ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয় এমন কারণগুলো। এগুলো দুইভাবে ভাগ করা যায়। একটি হলো জেনেটিক কারণ, যেমন ‘বিআরসিএ১’ ও ‘বিআরসিএ২’ জিনে মিউটেশন থাকলে ব্রেস্ট ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়। আরেকটি হলো, নন-জেনেটিক কারণ। তবে প্রাথমিক পর্যায়েই ক্যানসার শনাক্ত করার জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং জরুরি।
‘বিশ্বমানের ক্যানসার চিকিৎসা এখন বাংলাদেশে’ শীর্ষক অনলাইন আলোচনায় কথাগুলো বলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নাহিদ হোসেন। উপস্থাপনায় ছিলেন নাসিহা তাহসিন। ক্যানসার বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে এসকেএফ অনকোলজি।
এবারের আলোচনায় মেডিকেল অনকোলজি, কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি ও ইমিউন থেরাপিসহ স্তন ক্যানসারের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পর্বটি গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) সরাসরি প্রচারিত হয় প্রথম আলো ডটকম এবং প্রথম আলো, এসকেএফ অনকোলজি ও এসকেএফের ফেসবুক পেজে।
ক্যানসার কীভাবে হয়স্তন ক্যানসার এবং এটি হওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে শুরুতেই চিকিৎসকের কাছে জানতে চান উপস্থাপক। উত্তরে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, আসলে যেকোনো ক্যানসারই হলো শরীরের কোনো সেল বা কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যদি সেই কোষের গ্রোথ অনিয়ন্ত্রিতভাবে হয়, সেটাই ক্যানসার। আর স্তন ক্যানসারও একইভাবে ঘটে—যখন ব্রেস্টের সেলগুলোর আনকন্ট্রোলড গ্রোথ হয়।
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কাদেরডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, সাধারণত দুই ধরনের ব্রেস্ট ক্যানসার বেশি দেখা যায়—ডাক্টাল কারসিনোমা, যা দুধ বহনকারী ডাক্টে ক্যানসার হলে। অন্যটি লোবুলার কারসিনোমা, যা ব্রেস্টের দুধ উৎপাদনকারী গ্ল্যান্ডে ক্যানসার হলে।
নন–মডিফায়েবল কারণগুলো সম্পর্কে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, ‘এগুলো হলো, মেয়েদের অল্প বয়সে অর্থাৎ ১২ বছরের আগে মাসিক শুরু হওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৫৫ বছরের পরে মেনোপজ হওয়া, পরিবারে ব্রেস্ট ক্যানসারের ইতিহাস থাকা। আর মডিফায়েবল কারণগুলো হলো স্থূলতা বা মোটা হওয়া, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নেওয়া, দেরিতে অর্থাৎ ৩০ বছর পর সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া, সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানো, অ্যালকোহল গ্রহণ এবং উচ্চ ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া। এগুলো এড়িয়ে চললে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।’
প্রসঙ্গক্রমে উপস্থাপক জানান, এসকেএফ অনকোলজি বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র ইউজিএমপি ও অ্যানভিজা ব্রাজিল অনুমোদিত প্ল্যান্ট। ফলে এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রায় ২৭টি দেশে এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসকেএফ অনকোলজির সারা দেশে রয়েছে ৩৩টি সেবাকেন্দ্র, যার মাধ্যমে ক্যানসারের ওষুধ পাওয়া যায়। শুধু তা–ই নয়, ঘরে বসে অর্ডার করলেই বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে সহজেই পৌঁছে দেওয়া হয়।
সচেতনতা জরুরিনন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরের মধ্যে জিনগত ফ্যাক্টর কীভাবে ভূমিকা রাখে? সে ক্ষেত্রে স্ক্রিনিং কখন থেকে শুরু করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. মো. নাহিদ হোসেন বলেন, স্ক্রিনিং আসলে করা হয় স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের জন্য, যাদের এখনো ক্যানসার হয়নি—যেন প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়। স্ক্রিনিংয়ের কিছু ধাপ রয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন, এটি মাসিক শেষ হওয়ার ৩ থেকে ৫ দিন পর প্রতি মাসে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত। তিন আঙুলের সাহায্যে ব্রেস্ট ও বগল ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোনো গোটা বা স্রাব আছে কি না। আরেকটি হলো, স্ক্রিনিং মেমোগ্রাম। তিনি বলেন, মেমোগ্রাম ৪০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতিবছর করা উচিত। যদি কারও পরিবারে ক্যানসারের ইতিহাস থাকে, যেমন মা বা বোনের ব্রেস্ট বা ওভারি ক্যানসার ছিল—তাহলে স্ক্রিনিং আরও আগে থেকে শুরু করা উচিত। আর হাই–রিস্ক গ্রুপের জন্য ‘এমআরআই’ করা যেতে পারে। এই স্ক্রিনিং প্রক্রিয়াগুলো ক্যানসারকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে স্তন ক্যানসারের বর্তমান পরিস্থিতি, রোগনির্ণয়, ডায়াগনোসিস ও চিকিৎসা-সুবিধা বিষয়ে পরামর্শ দেন ডা. মো. নাহিদ হোসেন