করাঙ্গীর ‘মরা তিমি’ ৩ কোটি টাকার রাবারড্যাম
Published: 16th, March 2025 GMT
এক যুগ ধরে অচল পড়ে আছে চুনারুঘাটের করাঙ্গী নদীর বিশাল রাবারড্যামটি। কালো টায়ার আর টিউবের বিশাল আকৃতির এই ড্যামটিকে আক্ষেপের সুরে মরা তিমি বলেন স্থানীয় অনেকেই। প্রান্তিক কৃষকের স্বপ্ন দেখানো ওই রাবারড্যামটি নিজেই চুপসে গেছে আরও এক যুগে আগে।
 করাঙ্গী নদী-তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কৃষকদের সেচ সুবিধা দিতে উপজেলার রানীগাঁও ইউনিয়নের করাঙ্গী নদীতে ২০১১ সালে নির্মাণ করা হয় রাবারড্যাম। সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে করা এই প্রকল্প বিকল হয়ে পড়ে মাত্র দুই বছরের মাথায়। এর পর থেকে এভাবেই পড়ে আছে ২৫ মিটার দীর্ঘ এই চুপসে যাওয়া রাবারড্যামটি।
 স্থানীয় কৃষকরা জানান, তাদের জন্য খুবই ভালো একটি উদ্যোগ ছিল এই ড্যাম নির্মাণের সিদ্ধান্ত। তবে নষ্ট হওয়ার পর সেটি আর কেন সংস্কার করা হয়নি, তা তাদের জানা নেই। ৩ কোটি টাকার এই ড্যাম সক্রিয় করার ক্ষেত্রে কোনো তৎপরতাও নজরে আসেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
 স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এ ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল, শুষ্ক মৌসুমে সহস্রাধিক কৃষকের সেচকাজে সুবিধা নিশ্চিত করা। স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, অনেক দিন থেকে এ রাবারড্যাম নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। বোরো চাষের জন্য পানি ধরে রাখার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা দিতো ড্যামটি। অথচ সেটিকে ঠিক করা হলো না।
 বোরোচাষিরা জানান, রাবারড্যাম নির্মাণের পর থেকে টানা দুই বছর তারা কৃষিজমিতে সেচ সংকটে পড়েননি। সেটি নষ্ট হওয়ার পর ভোগান্তি বেড়েছি। বোরো মৌসুমে পানির সংকট থাকায় এখানকার সব জমি চাষাবাদের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কয়েকজন কৃষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেচ পাম্প বসিয়ে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ করেছেন। এ সময় রাবারড্যামের বিষয়ে স্থায়ী সমাধান চান তারা।
 কৃষক মাসুম মিয়া বলেন, জ্বালানির দাম বাড়ায় পাম্পের মাধ্যমে সেচ দিয়ে পোষাতে পারেন না। রাবারড্যামটি চালু থাকাকালে তারা সহজেই পানি পেতেন। এক যুগ ধরে ভোগান্তিতে আছেন এখানকার কৃষক। অথচ ড্যামটি সংস্কার করে সক্রিয় করা হলো না।
 সূত্র জানায়, চুনারুঘাট উপজেলায় পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ বাড়াতে ডিপিপি প্রকল্পের আওতায় করা একমাত্র র্যাবারড্যামটি স্থাপনের পর আশপাশের প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় আসে। ড্যামের মাধ্যমে আটকানো ১০-১৫ ফুট পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমেও আবাদ শুরু হয় রানীগাঁও, পাচারগাঁও, বিশ্রাবণ, আতিকপুর, পারকুল, রাজাকোনা,পাঁচগাতিয়া, আঠালিয়া, শাহাপুর, মিরাশি, হাজীপুর, খাইয়ারাত, ভাগোলাসহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামের বিস্তীর্ণ জমিতে। তবে উদ্বোধনের দুই বছর পরই ড্যামটি অকেজো হয়ে যায়।
 কৃষকদের দাবি, শুষ্ক মৌসুমে রাবারড্যামটি ফোলানো হয় না। তাই করাঙ্গী নদীতে পানি আটকানো যায় না। এ অবস্থায় আশপাশের কৃষক বেকায়দায় পড়ে বিএডিসির এলএলপি ও বাড়িড পাইপ ও সেচ স্থাপন করে স্বল্প পরিসরে চাষাবাদ করে আসছেন। এতে কমে গেছে ওই এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে চাষের জমির পরিমাণ। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবছর অনাবাদি পড়ে থাকে প্রায় ৪২০ হেক্টর ফসলি জমি।
 রানীগাঁও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিমাংশু দেবনাথ  জানান, বোরো মৌসুমে এটি ফোলানো হলে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা 
 যাবে। বছরের পর বছর এটি এভাবে ফেলে রাখায় অনেক কৃষক পানির অভাবে জমি আবাদ থেকে বিরত রয়েছেন।
 রাবারড্যামটির তত্ত্বাবধায়ক বাচ্চু মিয়া জানান, রাবারড্যামটি সচল নেই। ওপরের কভার ফেটে গেছে এবং ভেতরের টায়ার ঠিক নেই। সবকিছুই অকেজো। এ জন্য রাবার ফোলানো হয় না। করাঙ্গী নদীর রাবারের বাঁধ হলে রানীগাঁও এলাকার পানি স্থির থাকবে এবং কৃষকের চাষাবাদে আগ্রহ বাড়বে।
 কৃষক আব্দুল কুদ্দুছ জানান, রাবারড্যামটি নির্মাণের পর নামমাত্র খরচে জমি চাষে পানি পাওয়া গেছে। এখন সেচের পানির জন্য ২ হাজার টাকা খরচ হয়। পানির চাহিদা পূরণ না হওয়ায় বহু কৃষক জমি চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
 বোরো ধানের পাশাপাশি মরিচ, বেগুন, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজির উৎপাদন কমে গেছে এ এলাকায়। এর আগে ড্যামের সঞ্চিত পানিতে মাছ চাষ করেও কৃষক বেশ লাভবান হয়েছেন।
 চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম জানান, করাঙ্গী নদীর পানির ওপর নির্ভর রানীগাঁও ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক। রাবারড্যামটি সচল হলে উপজেলার ওই এলাকার কয়েক হাজার কৃষক সেচ সুবিধার আওতায় আসবেন। আগামী বোরো মৌসুমে রাবারড্যামটিতে পানি ধরে রাখতে পারলে রবি মৌসুমের অনাবাদি পতিত প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরোসহ অন্যান্য রবি ফসল আবাদ সম্ভব হবে। এ বিষয়ে উপজেলা মাসিক সভায় প্রস্তাব রাখা হবে।
 উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রকৌশলী ইমাম হোসেন জানান, তিনি রাবারড্যাম পরিদর্শন করে সংস্কারের জন্য  জেলা অফিসকে জানিয়েছন। হবিগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) ফরিদুল ইসলাম বলেন, রাবারড্যাম মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।  দ্রুতই মেরামত করে রাবারড্যামটি সচল করা হবে। জানা গেছে, প্রকল্প নেওয়ার পর এ ব্যাপারে ৩৭৪ জন কৃষকের সমন্বয়ে একটি পরিচালনা কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির তৎকালীন সভাপতি মহিদ আহমদ চৌধুরী জানান, রাবারড্যাম হওয়ার পর সেচ খরচ কমায় কৃষক ধান ও শাকসবজি উৎপাদন করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। বর্তমানে এ কমিটির কার্যক্ষমতা নেই। ২০১১ সালে সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে রাবারড্যামটি নির্মাণের ২ বছর পর শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ৫৫০ হেক্টর জমি আবাদের আওতায় আসে। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: নদ র ব রড য ম র আওত য় প রকল প কর ঙ গ র জন য উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হস্তক্ষেপ নয়, পর্যবেক্ষণ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী টিম ডিরেক্টর রাজ্জা
সংবাদ সম্মেলন তখন শেষ। আব্দুর রাজ্জাককে মনে করিয়ে দেওয়া হলো, ‘‘বাংলাদেশ দলের টিম ডিরেক্টর কিন্তু টসেও ইনপুট দিতেন। আপনি কি…?’’ রাজ্জাক মুখে হাসি আটকে রাখেন। এই পদে আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজে দায়িত্ব পাওয়া রাজ্জাক স্রেফ এতোটুকুই বলতে পারেন, ‘‘আমাদের থেকে এমন কিছু কখনোই দেখতে পারবেন না। আমরা নতুন কিছু নিয়ে ভাববো।’’
জাতীয় দলকে নিয়ে সেই ভাবনা থেকেই আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বোর্ড একজনকে টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ের জাতীয় পুরুষ দলের ব্যর্থতার কারণে আলোচনা হচ্ছিল, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ওপরে একটি ছায়া বিভাগ থাকবে যারা সরাসরি জাতীয় দল পর্যবেক্ষণ করবে।
সেই ছায়া বিভাগে সাবেক ক্রিকেটাররাই থাকবেন। প্রথম টিম ডিরেক্টর হিসেবে রাজ্জাক পেলেন দায়িত্ব। কেন টিম ডিরেক্টর নিয়োগ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব হলো সেই প্রশ্ন করা হয় তাকে। নাজমুল হাসান বোর্ড সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময় টিম ডিরেক্টর পদটি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। সাবেক অধিনায়ক ও বোর্ড পরিচালক খালেদ মাহমুদ এই দায়িত্ব পালন করেছেন বিশ্বকাপসহ বেশ কয়েকটি সিরিজে। দলের সঙ্গে গভীরভাবে মিশে যেতেন তিনি। টস থেকে শুরু করে টিম মিটিংয়ে দিতেন ইনপুট। যা নিয়ে পরবর্তীতে অভিযোগ করেছিলেন কোচ ও অধিনায়ক।
তবে রাজ্জাক নিজের কাজ, পরিধি এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন বলেই নিশ্চিত করলেন,"অন্যান্য যে কোনো টিম ডিরেক্টরের মতোই হবে আমার কাজ। আমি সব কিছু পর্যবেক্ষণ করব, সব কিছুতে নজর রাখব। আর কখনও যদি টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করে আমার কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন, তাহলে সেটিও দেওয়ার চেষ্টা করব। তাদের সাহায্য প্রয়োজন হলে আমি করব।"
"ক্রিকেট বোর্ডের মনে হয়েছে, দলের সঙ্গে একজন টিম ডিরেক্টর থাকলে ভালো হবে। এই পদটি কিন্তু আগেও ছিল। অনেক দিন ধরেই ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে বোর্ড পরিচালকের সংখ্যা কম থাকায় হয়তো দলের সঙ্গে কেউ যায়নি। তবে এর আগে প্রায় সিরিজেই দলের সঙ্গে টিম ডিরেক্টর থাকত।" - যোগ করেন তিনি।
ঢাকা/ইয়াসিন