বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা নিশ্চিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ– সিপিডি। এ ছাড়া অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলে মনে করছে সংস্থাটি।
গতকাল রোববার আগামী অর্থবছরের বাজেটে সংস্থার সুপারিশ নিয়ে সিপিডি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির ধানমন্ডির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুপারিশ তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড.
ফাহমিদা খাতুন বলেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজস্ব সংগ্রহে স্থবিরতা, ধীরগতি বাজেট বাস্তবায়ন, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার মতো নানা চ্যালেঞ্জ উত্তারাধিকার সূত্রে পেয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেটে দূরদর্শী হওয়া প্রয়োজন। অর্থনীতির স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার এখন নীতিনির্ধারকদের অন্যতম প্রধান কাজ, যা অর্জনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রা বিনিময় হার এবং আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নতুন বাজেটে দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম এবং একমাত্র বাজেট বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। এতে স্বল্প মেয়াদে সংশোধনমূলক কিছু পদক্ষেপের পাশাপাশি মধ্য মেয়াদে সংস্কারের ভিত্তি গড়ে তুলতে হবে। যাতে এর ভিত্তিতে পরবর্তী সরকার এগোতে পারে। এ সংস্কারের মূল লক্ষ্য হবে সম্পদ সংগ্রহের দক্ষতা বাড়ানো। একই সঙ্গে সরকারি ব্যয়ে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে অর্থ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে হবে।
আগামী বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়ের সীমা ৫০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা পর্যন্ত করার সুপারিশ করেছে সিপিডি। সংস্থাটির যুক্তি, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো যৌক্তিক। সিপিডি বলেছে, গত দুই মাসে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা নিম্নমুখী। তবে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব কার্যকর হলে মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি আরও
খারাপ অবস্থায় চলে যাবে। একই সঙ্গে ভূরাজনৈতিক বাণিজ্য যুদ্ধ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে। সবকিছু
মিলিয়ে আগামী জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তা অর্জন নাও হতে পারে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পাঁচটি কৌশলগত সুপারিশ করেছে সিপিডি। এগুলো হচ্ছো– রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের মধ্যে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সংস্কার।
২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণ করছে বাংলাদেশ। এর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণে আগামী বাজেটেই পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছে সিপিডি। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ জন্য রাজস্ব খাতে ব্যাপক সংস্থারের প্রয়োজন রয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এলডিসি হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১২ শতাংশ এবং কানাডায় ১৫ শতাংশ শুল্ক দেওয়া লাগে না। কিন্তু এলডিসিতে অন্তর্ভুক্তি নিজের ইচ্ছায় হলেও উত্তরণে যোগ্য হওয়ার পরও একই অবস্থায় থাকাটা নিজের ইচ্ছাধীন নয়। এক সময় উত্তরণ হতেই হয়। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সরকারকে সহায়তা দিতে হবে। একই সঙ্গে উদ্যোক্তাদেরও দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতার দিকে নজর দিতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব প্রশাসন আলাদা করার পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিডি। সংস্থাটি বলছে, রাজস্ব বাড়াতে দেশের কর ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকীকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাটের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করেছে সিপিডি। এদিকে চলতি বাজেটে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজস্ব প্রবৃদ্ধি পর্যালোচনা করে সিপিডির প্রাক্কলন হচ্ছে, বছর শেষে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াতে পারে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া ক্যাপাসিটি চার্জ তুলে দিয়ে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর সুপারিশ করেছে সিপিডি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আয়কর র স প র শ কর ছ পর স থ ত পদক ষ প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত চারটি কোম্পানির সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন না করায় সাত নিরীক্ষক (অডিটর) প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য অডিট এবং অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সেইসঙ্গে ওই নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষকদের কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না, সেই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে তাদের শুনানিতে ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।
আরো পড়ুন:
সোনালী পেপারের শেয়ার কারসাজি: ১১ কোটি ৮২ লাখ টাকা জরিমানা
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
গত মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের সভাপতিত্বে ৯৭৩তম কমিশন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক এ হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; রিংসাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ এবং ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক যথাক্রমে: আহমেদ অ্যান্ড আক্তার, মাহফেল হক অ্যান্ড কোং, আতা খান অ্যান্ড কোং এবং সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস; আমান কটন ফাইব্রাস লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০২০ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক ইসলাম কাজী শফিক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস এবং ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের ৩০ জুন, ২০১৮ ও ২০১৯ সমাপ্ত অর্থবছরের নিরীক্ষা ফার্ম ও নিরীক্ষক মাহফেল হক অ্যান্ড কোং চার্টার্ড এ্যকাউন্ট্যান্টস আর্থিক প্রতিবেদনে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম ও সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন থাকা সত্ত্বেও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উত্থাপন করেনি।
এ সকল নিরীক্ষা ফার্ম এবং নিরীক্ষককে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত সকল কোম্পানি, সকল ধরনের বিনিয়োগ স্কিম (যথা- মিউচ্যুয়াল ফান্ড, অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ও এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড) এবং পুঁজিবাজারে মধ্যস্থতাকারী সকল প্রতিষ্ঠানের অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার উপর নিষেধাজ্ঞা তথা পাঁচ বছরের জন্য অডিট ও অ্যাসিউর্যান্স কার্যক্রমে অংশগ্রহণে কেন অযোগ্য ঘোষণা করা হবে না এই মর্মে ব্যাখ্যা তলব করে শুনানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/এনটি/বকুল