তাজকীর আহমেদকে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ।

সোমবার (১৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্যের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের নৃশংসতা যেন ‘সিনেমাকেও হার মানায়’ বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা।

সংবাদ সম্মেলনে কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) এম এম শাকিলুজ্জামান বলেন, “প্রেমিকার প্রাক্তন স্বামী অভিসহ চার বন্ধু মিলে কলেজ ছাত্র তাজকিরের হাত-পা বেঁধে মুখে কচটেপ পেঁচিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। তারা তার পুরুষাঙ্গে উপর্যুপরি আঘাত করে গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে নৃশংসভাবে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

আরো পড়ুন:

আদালতে স্বীকারোক্তি
মাগুরার সেই শিশুকে একাই ধর্ষণ করেছেন বোনের শ্বশুর

ধর্ষণের দায় একাই নিচ্ছেন মাগুরার সেই শিশুর বোনের শ্বশুর

“পরবর্তীতে তারা চার বন্ধু মিলে তাজকিরের লাশ বস্তায় ভরে ইজিবাইকে করে খালিশপুর হার্ডবোর্ড খেয়াঘাটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পূর্বে ভাড়া করে রাখা ট্রলারযোগে দৌলতপুর যাওয়ার সময় নদীর মাঝখানে নিয়ে লাশ ফেলে দেয়।”

ঘটনায় বিবরণে জানা যায়, গত ২২ ফেব্রুয়ারি জনৈক আসিফ মাহমুদ খালিশপুর থানায় তার মামাতো ভাই তাজকির আহম্মেদ নিখোঁজ হয়েছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য খালিশপুর থানা পুলিশের একটি তদন্ত টিম প্রস্তুত করা হয়।

ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পারে, প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রেমিকার ব্যবহৃত হোয়াটস্অ্যাপ থেকে আমন্ত্রণ পেয়ে তাজকির তার চাচাতো ভাই রনির শ্যালিকা সীমার সঙ্গে দেখা করার জন্য ঢাকা থেকে খুলনা আসেন। তাজকির আহমেদ গত ২১ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানাধীন গোয়ালখালি এলাকায় তার মামাতো ভাই আসিফ মাহমুদের বাড়িতে ওঠেন। সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর প্রেমিকা সীমার সঙ্গে দেখা করতে বের হয়ে নিখোঁজ হন তিনি। 

পরবর্তীতে নিখোঁজ যুবকের বাবা মুরাদ হোসেন বাদী হয়ে পাঁচজনের নামসহ নাম না জানা আরো ২-৩ জনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। পুলিশ ২৫ ফেব্রুয়ারি এজাহারনামীয় আসামি নগরীর খালিশপুরের নিউজপ্রিন্ট মিল এলাকার মো.

জলিল হাওলাদারের মেয়ে সুরাইয়া আক্তার সীমা (২০), খালিশপুর হাউজিং এলাকার মিন্টু মিয়ার স্ত্রী লাবনী বেগম (৪২), একই এলাকার মৃত. নজরুল ইসলামের ছেলে শহিদুল ইসলাম সাহিদকে (২০) গ্রেপ্তার করে।

মামলা তদন্তকালে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খালিশপুর থানা পুলিশ খানজাহান আলী থানাধীন ভৈরব নদীর বালুর মাঠ ঘাটে বস্তা বন্দী একজন নাম না জানা যুবকের লাশ পড়ে থাকার সন্ধান পায়। পরে লাশটি তাজকির আহম্মেদের বলে শনাক্ত করেন তার স্বজনরা। পুলিশের তদন্ত, গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়।

পুলিশ জানায়, তদন্তে জানা যায়, প্রেমিকা সীমা সম্পর্কে তাজকিরের ভাইয়ের শ্যালিকা। সীমার সঙ্গে  ইসমাইল হোসেন অভির তিন বছর আগে বিয়ে হয়। পরবর্তীতে কয়েক মাসের মধ্যে তাদের ডিভোর্স হয়ে যায় এবং অভি দেশের বাইরে চলে যায়। এই সুযোগে তাজকির আহম্মেদের সঙ্গে সীমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ডিভোর্সের ৭/৮ মাস পরে অভি দেশে ফিরে প্রাক্তন স্ত্রী সীমার সাথে যোগাযোগ করে এবং তাদের মধ্যে পুনরায় সম্পর্ক তৈরি হয়।

এসময়ে ত্রিভুজ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, যা একমাত্র সীমা জানতো। সীমা একই সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দুই প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক চলমান রাখেন। যাতে কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারে। 

অভি আর সীমার সম্পর্কের বিষয়টি তাদের উভয় পরিবারের লোকজন পরবর্তীতে জানলেও ভিকটিম তাজকিরের সঙ্গে সীমার প্রেমের বিষয়টি অপ্রকাশ্যে থেকে যায়। ঘটনা পরিক্রমায় অভি সীমার সঙ্গে তাজকিরের প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনে যান। এটা নিয়ে সীমা এবং অভির মধ্যে ঝগড়া হতে থাকে।

অভি ভিকটিম তাজকিরকে শায়েস্তা করার জন্য সীমার ব্যবহৃত গোপন মোবাইল ফোন থেকে হোয়াটস্অ্যাপের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভিকটিমকে খুলনায় আসতে বলেন। তাজকির খুলনা আসলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অভি তার বন্ধুদের সহায়তায় তাকে অপহরণ করে নিজ বাসায় নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অভিসহ তার চার বন্ধু মিলে তাজকিকে হত্যা করে। 

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত খালিশপুর হাউজিং বাজার এলাকার মো. আনোয়ার হোসেনের ছেলে মশিউর রহমান জিতু (২৪), খালিশপুরের বিআইডিসি রোড এলাকার শহিদুল ইসলাম কাজীর ছেলে রিয়াদ কাজীকে (২২) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত জিতু এবং রিয়াদ তাজকির হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। 

হত্যাকাণ্ডের পর লাশ বহনের কাজে ব্যবহৃত ইজিবাইকের চালক শহিদুল ইসলাম সাহিদকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। থানার রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আরো কোন মামলা আছে কী না তা যাচাই করা হচ্ছে। 

ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য পরবর ত ত এল ক র ম ল ইসল ম র রহস য র বন ধ পর ক র ব যবহ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।

ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।

আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।

ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।

আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।

সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
  • পরবর্তী সরকারের পক্ষে এত সহজে সংস্কার আকাঙ্ক্ষাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না: আসিফ নজরুল
  • বিসিআইসির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ
  • এলডিসি উত্তরণের পরবর্তী প্রস্তুতি নিতে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন
  • ৪৪তম বিসিএস: মনোনীত প্রার্থীদের তথ্য চেয়ে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
  • ‘আগামীর বাংলাদেশে মিডিয়াকে দালাল হিসেবে দেখতে চাই না’ 
  • ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
  • মাইলস্টোনে দগ্ধ ৩৩ জন এখনো ভর্তি, আইসিইউতে ৩
  • শেখ হাসিনার অডিওগুলো শুনলে বোঝা যায়, তাঁর এখনো প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছা আছে: আইন উপদেষ্টা
  • দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে