২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন নভোচারী সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর। ভারতীয় সময় বুধবার ভোরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার সমুদ্রে অবতরণ করে তাদের মহাকাশযান।

মহাকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সুনীতাদের এই প্রত্যাবর্তন নিরাপদে হয়েছে বলে জানিয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তাদের সঙ্গে একই মহাকাশযানে ফিরেছেন নাসার নিক হগ এবং রুশ নভোচারী আলেকজ়ান্ডার গর্বুনভ। গত বছর জুন মাসে সুনীতারা মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে (ভারতীয় সময়) সুনীতাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) ছাড়ে স্পেসএক্সের ড্রাগন যান। বুধবার আটলান্টিক মহাসাগরের ফ্লোরিডা উপকূলে মহাকাশচারীরা নিরাপদে অবতরণ করেন। তাদের আনার জন্য পৌঁছে গিয়েছিল মার্কিন নৌবাহিনীর বোট।

পরে মডিউলসহ সুনীতাদের জাহাজের কাছে নিয়ে আসে নৌবাহিনী। মহাকাশচারীদের হাইড্রোলিক পদ্ধতিতে তোলা হয় জাহাজে। সেখানে ড্রাগন ক্যাপসুলের দরজা খোলার পরে প্রথমে বেরিয়ে আসেন নিক হগ। তার প্রায় ৫ মিনিট পরে ভারতীয় সময় ভোর ৪টা ২২ মিনিটে হাসিমুখে বেরিয়ে আসেন সুনীতা উইলিয়ামস। 

নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরে এলেও এখনই নিজেদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না মহাকাশচারীরা। তাদের রাখা হবে ক্রু- কোয়ার্টারে। সেখানেই বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। তার পরে সুনীতা ও বুচের সঙ্গে দেখা করার সম্মতি মিলবে। 

গত বছর জুন মাসে বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশে করে অভিযানে গিয়েছিলেন সুনীতা ও ব্যারি। অভিযান আট দিন চলার কথা ছিল। কিন্তু মহাকাশযানটি বিকল হওয়ায় মহাকাশে আটকে পড়েন সুনীতারা। মহাকাশযানটিকে সারিয়ে পৃথিবীতে ফেরত আনা হলেও, ওই যানে সুনীতাদের ফেরোনার ঝুঁকি নেয়নি নাসা। তাদের ফিরিয়ে আনতে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্স-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার পরও বার বার পিছিয়ে যায় সুনীতাদের ফেরানোর অভিযানে। শেষ পর্যন্ত আটদিনের জায়গায় তাদের মহাকাশে কাটাতে হয় ২৮৬ দিন।

মহাকাশচারীদের অবতরণের পরে নাসার পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার উপ সহযোগী প্রশাসক জোয়েল মনটালবানো ও কার্যক্রম সমন্বয় ব্যবস্থাপক বিল স্পিচ বলেন, “নাসার গর্বের সঙ্গীরা নিরাপদ ভাবে অবতরণ করেছেন। ৯ মাসে ৯০০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ১৫০টি বিষয়ের গবেষণা করা হয়েছে।”
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন র পদ

এছাড়াও পড়ুন:

১৫ হাজার ফুট উঁচুতে উড়োজাহাজের ডানায় আটকে গেলেন স্কাইডাইভার, শেষ পর্যন্ত কী হলো

অস্ট্রেলিয়ার কর্তৃপক্ষ গতকাল বৃহস্পতিবার শ্বাসরুদ্ধকর একটি দৃশ্যের ভিডিও প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, একজন স্কাইডাইভারের প্যারাস্যুটের অংশবিশেষ উড়োজাহাজের পেছনের অংশে আটকে গেছে। এ অবস্থায় তিনি কয়েক হাজার মিটার উঁচুতে ভয়ংকরভাবে ঝুলছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই স্কাইডাইভার প্রাণে বেঁচে গেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার পরিবহন নিরাপত্তা ব্যুরো (এটিএসবি) ভিডিওটি প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে তারা। প্রতিবেদনে ওই স্কাইডাইভারকে ‘পি১’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত ওই স্কাইডাইভার হুক নাইফ নামের একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তিনি নিরাপদে অবতরণ করেছেন। তিনি সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

ওই স্কাইডাইভার কুইন্সল্যান্ডের আকাশে ১৫ হাজার ফুট উচ্চতায় স্কাইডাইভিং করতে গিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ওই উড়োজাহাজে আরও ১৬ জন প্যারাস্যুটার ছিলেন।

উড়োজাহাজ থেকে লাফ দেওয়ার সময় ‘পি১’ স্কাইডাইভারের কাছে সংরক্ষিত থাকা প্যারাস্যুটের একটি অংশ উড়োজাহাজের ডানার সঙ্গে আটকে যায়। এতে ওই সংরক্ষিত প্যারাস্যুটটি খুলে যায় এবং স্কাইডাইভারের জাম্পারটিকে পেছন দিকে টানতে থাকে। ওই সময় ‘পি১’ প্যারাস্যুটারের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার কারণে আরেকজন প্যারাস্যুটারও লাফিয়ে পড়তে বাধ্য হন। তবে তিনি নিরাপদে লাফ দিতে পেরেছেন।

উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন পাইলট। প্যারাস্যুটের অবশিষ্টাংশ তখনো উড়োজাহাজের লেজে আটকে ছিল। তিনি নিয়ন্ত্রকক্ষকে বলে রেখেছিলেন যে উড়োজাহাজের লেজের অংশ যদি ভেঙে যায়, তবে তাঁরাও প্যারাস্যুট নিয়ে বের হয়ে আসবেন।

ভিডিওতে দেখা যায়, কমলা রঙের প্যারাস্যুটটি উড়োজাহাজের লেজের চারপাশে জড়িয়ে গেছে এবং ‘পি১’ স্কাইডাইভার নিচে ঝুলে আছেন এবং লাফাচ্ছেন।

এটিএসবি প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটির প্রধান কমিশনার অ্যাংগাস মিচেল বলেন, ওই সময় পাইলটের মনে হচ্ছিল, উড়োজাহাজটি হঠাৎ ওপরের দিকে উঠছে এবং গতি দ্রুত কমছে। এরপর তিনি জানতে পারেন, একজন স্কাইডাইভার উড়োজাহাজের লেজে আটকে ঝুলছেন।

উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হতে পারে—এমন আশঙ্কা থেকে পাইলট পুরোপুরি এর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করেন। উড়োজাহাজের এক ক্রু অন্য প্যারাস্যুটারদের নিরাপদে বের হয়ে যেতে বলেন। ১৩ জন প্যারাস্যুটার তখন লাফ দেন। দুজন প্যারাস্যুটার উড়োজাহাজের ভেতরে থেকে যান।

উড়োজাহাজের লেজে আটকে থাকা স্কাইডাইভার হুক নাইফ দিয়ে সংরক্ষিত প্যারাস্যুটের দড়িগুলো কেটে মুক্ত হতে শুরু করেন।

এটিএসবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১টি দড়ি কাটতে এক মিনিটের কম সময় লেগেছে। পরে অবশ্য এটিএসবির তদন্ত কর্মকর্তাদের ওই স্কাইডাইভার বলেছেন, কাজটি তাঁদের ধারণার চেয়ে কঠিন ছিল।

‘পি১’ স্কাইডাইভার নিরাপদে অবতরণ করার পর উড়োজাহাজের ভেতরে থাকা অপর দুই প্যারাস্যুটারও নিরাপদে লাফিয়ে পড়েন।

উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন পাইলট। প্যারাস্যুটের অবশিষ্টাংশ তখনো উড়োজাহাজের লেজে আটকে ছিল। তিনি নিয়ন্ত্রকক্ষকে বলে রেখেছিলেন, উড়োজাহাজের লেজের অংশ যদি ভেঙে যায়, তবে তাঁরাও প্যারাস্যুট নিয়ে বের হয়ে আসবেন।

তবে শেষ পর্যন্ত তা করার আর দরকার পড়েনি। পাইলট কুইন্সল্যান্ডের টালি বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করতে সক্ষম হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৫ হাজার ফুট উঁচুতে উড়োজাহাজের ডানায় আটকে গেলেন স্কাইডাইভার, শেষ পর্যন্ত কী হলো