প্রায় নয় মাস মহাকাশে থাকার পর, অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন নাসার দুই নভোচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামস। তাদের স্পেসএক্স ক্যাপসুলটি দ্রুত ও উত্তপ্ত পুনঃপ্রবেশের পর চারটি প্যারাশুটের সাহায্যে ফ্লোরিডার উপকূলে নিরাপদে সমুদ্রে অবতরণ করে।

অবতরণের সময় ক্যাপসুলের চারপাশে একটি ডলফিনের ঝাঁক ঘুরছিল। উদ্ধারের পর, নভোচারীরা হাসিমুখে হাত নেড়ে অভিবাদন জানান। তাদের সঙ্গে ছিলেন আরও দুই ক্রু সদস্য, নাসার নভোচারী নিক হেগ ও রুশ মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভ।

প্রথমে উইলমোর ও উইলিয়ামসকে মাত্র আট দিনের জন্য বোয়িং-এর স্টারলাইনার মহাকাশযানে পাঠানো হয়েছিল। তবে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এটি আইএসএস-এ (আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন) রাখা হয় এবং নিরাপত্তার কারণে তাদের ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।

ফলে, তারা পরবর্তী উপলভ্য মহাকাশযানের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য হন। সেপ্টেম্বরে স্পেসএক্সের একটি ক্যাপসুল আইএসএস-এ পৌঁছানোর পর, তাদের জন্য আসন খালি রাখা হয়, যা অবশেষে তাদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে।

নাসার ডেপুটি অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জোয়েল মন্টালবানো বলেন, "তাদের ধৈর্য এবং অভিযোজন ক্ষমতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এটি একটি অবিশ্বাস্য যাত্রা ছিল।"

১৭ ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রার পর, পৃথিবীতে ফিরে আসার পর নভোচারীদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হয়, যা দীর্ঘ মহাকাশ যাত্রার পর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে তাদের শারীরিক অবস্থার নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হবে।

ব্রিটিশ নভোচারী হেলেন শারম্যান বলেন, সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, তারা অবশেষে পরিবার এবং বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। যেসব উৎসব ও মুহূর্ত তারা মিস করেছেন, এখন হয়তো সেগুলো পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাবেন।

পৃথিবীতে ফেরার আগে এক সাক্ষাৎকারে সুনি উইলিয়ামস বলেন, আমি আমার পরিবার, আমার কুকুর এবং সমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।

দীর্ঘ মহাকাশ ভ্রমণ মানুষের শরীরে নানা প্রভাব ফেলে। হাড়ের ঘনত্ব কমে যায়, পেশি দুর্বল হয় এবং রক্ত সঞ্চালনে পরিবর্তন আসে।

ব্রিটিশ নভোচারী টিম পিক বলেন, পৃথিবীতে ফিরে আসার পরের দুই-তিন দিন শরীরের জন্য কঠিন হয়। মহাকাশে ব্যায়াম করা জরুরি, কারণ এটি মহাকাশের জন্য নয়, বরং পৃথিবীতে ফেরার জন্য প্রয়োজন।

তবে, উইলমোর ও উইলিয়ামস তাদের মিশনের অতিরিক্ত সময়কে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়েছেন। তারা বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করেছেন, মহাকাশে হাঁটাহাঁটি করেছেন এবং এমনকি সান্তা ক্যাপ ও রেনডিয়ার হ্যাট পরে ক্রিসমাস উদযাপন করেছেন।

অবশেষে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তারা পৃথিবীতে ফিরেছেন। এখন তাদের সামনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো—পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো এবং শারীরিক পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ন র জন য উইল য অবশ ষ

এছাড়াও পড়ুন:

সাগরে এক ট্রলারে ৪০ লাখ টাকার ইলিশ 

সাগরে এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের জেলেদের জালে ধরা পড়েছে ১৭০ মণ ইলিশ মাছ। দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে এই ইলিশ মাছ ধরা পড়েছে।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকালে বরগুনার পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে সাইফ ফিশ আড়তে এই মাছ বিক্রির উদ্দেশ্যে ওঠানো হয়। মাছগুলো ডাকের মাধ্যমে বিক্রি হয় ৪০ লাখ টাকায়। ট্রলারটিতে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় তাদেরই আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ আরো কয়েক মণ ইলিশ তুলে দেওয়া হয়। 

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সূত্রে জানাগেছে, পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের সাইফ কোম্পানির এফবি সাফওয়ান-৩ মাছ ধরার ট্রলার গত ২৯ অক্টোবর সকালে পাথরঘাটা থেকে ১৯ জন জেলে নিয়ে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। 

ওই দিন বিকেলে কুয়াকাটা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে গভীর সমুদ্রে জাল ফেলার পরই রাতে মাছগুলো ধরা পড়ে। ট্রলারটিতে জায়গায় সংকুলান না হওয়ায় তাদেরই আরেকটি ট্রলার সাইফ-২ এ আরো কয়েক মণ তুলে দেওয়া হয়। জেলেরা বলছে, সব মিলিয়ে ১৭০ থেকে ১৭৫ মণ ইলিশ ধরা পড়েছে। 

এফবি সাফাওয়ান-৩ ট্রলারের মাঝি রুবেল হোসেন বলেন, “আমরা ২৯ অক্টোবর সাগরে যাই। বিকেলে লম্বা জাল (ইলিশ জাল) ফেলার পর রাত আটটার দিকে জালের অবস্থা দেখে বুঝতে পারি প্রচুর মাছ ধরা পড়েছে। রাত আটটা থেকে জাল টানা শুরু করে পরদিন দুপুর দেড়টা পর্যন্ত জাল ট্রলারে উঠানো শেষ হয়।”

সাইফ ফিশিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক মনিরুল হক মাসুম জানান, অনেক দিন ধরে সাগরে খুব কম মাছ ধরা পড়ছিল। ইলিশ মৌসুমে কাঙ্খিত মাছ ধরা না পড়ায় আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছিল। সাগরে অবৈধ ট্রলিং বোট বন্ধ করা হলে জেলেদের জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। 

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার মোস্তফা আলম বলেন, “মাছগুলো আমার আড়তে বিক্রি হয়েছে। ইলিশের প্রকারভেদ ২৭ হাজার, ২২ হাজার, ১২ হাজার টাকায় মণ দরে সব মিলিয়ে ৩১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকায় এই মাছ বিক্রি হয়।” 

বাংলাদেশ মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, “২২ দিনের অবরোধ শেষে জেলেরা সাগরে গিয়েই মাছ পেয়েছে- এটা খুশির খবর। তবে দীর্ঘদিন ধরে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মেলেনি। হঠাৎ এক ট্রলারে ১৪০ মণ ইলিশ পাওয়ায় আমরাও খুশি।”

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, “মা ইলিশ সংরক্ষণের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।”

তিনি বলেন, “জেলেরা সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধ মানলে এবং অবৈধ জাল বন্ধ তাদের জেলেদের সুদিন ফিরবে।”

ঢাকা/ইমরান/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাগরে এক ট্রলারে ৪০ লাখ টাকার ইলিশ