বিগত কয়েক বছরের তুলনায় পবিত্র রমজান মাসে প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। শুধু চালের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে মানভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ভোক্তারা।
 
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কাপ্তানবাজারও বাবু বাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
 
চালের দাম বাড়া নিয়ে খুচরা বিক্রেতা-পাইকারি ব্যবসায়ী ও মিল-মালিকরা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। তাদের দাবি,  ধানের দাম বেশি থাকার কারণে চালের দাম বাড়ছে। অপরদিকে চাল আমদানি করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের  দাম বেশি হওয়ার কারণে আমদানি খরচ বেশি হয়েছে। আর একারণে চালের দাম বাড়ছে। 

কাপ্তান বাজারে চাল কিনতে এসে মিনিকেটের দাম শুনে অস্বস্তিতে পড়ে যান মো.

কবির হোসাইন। তিনি বলেন, “মিনিকেট চালের  দাম আবারও বেড়েছে। দুই সপ্তাহ আগে যে মিনিকেটের কেজি ছিল ৮০ টাকা, এখন তা বেড়ে ৮৮ টাকা হয়েছে। প্রতি কেজিতে ৮ টাকা বেড়ে গেছে।”

তিনি বলেন, “অন্যান্য বছরগুলোর মতো রমজান মাসে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়েনি। কিন্তু চালের বাজারে এসেই অস্বস্তিতে পড়েছি। নিত্যপণ্যের ন্যায় চাল বাজারের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে।” 

কাপ্তান বাজারের খুচরা বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, “দুই সপ্তাহ আগে যে মিনিকেটের ২৫ কেজি বস্তা ১৮০০-২০০০ টাকা ছিল এখন তা ২২০০ থেকে ২৩৫০ টাকা। কেজিপ্রতি কেনা দাম পড়ছে ৮৬-৮৮ টাকা। মাঝারি চালের কেজি খুচরায় ৭৮ টাকা।” 

কাপ্তান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. সেফায়েত বলেন, “সরকার চাল আমদানি করায় চালের কমার কথা ছিল কিন্তু এবছর চালের দাম কমেনি। চালের বাজার আগের মতোই বাড়তি রয়েছে। সরকারকে কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।” 

বাবুবাজার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, “কয়েকটি দেশ থেকে মোটা চাল ও নাজিরশাইল চাল আমদানি করায় বাজারে চালের কোনো সংকট নেই।  আগামী  বৈশাখ মাসে ধানের উৎপাদন শুরু হবে, তখন আবার চালের দাম কমা শুরু হবে।”  

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাস্কিং মিল মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আবু ইউসূফ বাচ্চু বলেন, “কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়ায় ধানের দাম বেড়েছে। ধানের ধাম বাড়ার কিছুটা প্রভাব চালের দামেও পড়েছে।”
 
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “ধান-চালের বাজারে সরকারের নজরদারি কম। আর এর সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। সরকারের পক্ষ থেকে চালের মিলগুলোতে নজরদারি বাড়াতে হবে।” 

এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,  খাদ্য অধিদপ্তরের যাচাই করা বাজার দর অনুসারে কাওরান বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৮ থেকে ৫২ টাকা এবং চিকন চাল প্রতি কেজি ৭৮ টাকা থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। বাবু বাজারে মোটা চাল প্রতি কেজি ৪৮ টাকা থেকে ৫৪ টাকা এবং চিকন চাল প্রতি কেজি ৭৮ টাকা থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। 

মোহাম্মাদপুর কৃষি মার্কেটে মধ্যম মানের চালের (ব্রি-২৮) প্রতি কেজির কেনা দাম ৫৭ টাকা ও বিক্রয় ৫৭.৫০ টাকা। নাজির শাইল চাল প্রতি কেজি কেনা দাম ৮৩.৫০ টাকা ও বিক্রয় হচ্ছে ৮৪-৮৫ টাকা দরে। মিনিকেট মূলত মেশিন প্রসেসড রাইস। 

ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি হাইব্রিড ধান ও কাজল লতার মতো মোটা জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল পলিশ করে মিনিকেট নামে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। এ ধরনের চালের মূল্য সমগ্র চালের বাজার দর প্রতিফলিত করে না। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বল্প মূল্যে চাল সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য খাদ্য মন্ত্রাণালয় সদা প্রস্তুত রয়েছে। মার্চ ও এপ্রিল মাসে সরকার খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি, ও এম এস, ভিজিডি, টিসিবি ও এম এস এর মাধ্যমে প্রায় ৭ লাখ টন চাল বণ্টন করবে।

এছাড়া আসন্ন বোরো মৌসুমে চালের উৎপাদন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তখন চালের মূল্য আরও কমে আসবে। খাদ্য ঘাটতি যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্যে রেখে সরকার খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুত গড়ে তুলেছে ও চালের দর যাতে স্থিতিশীল থাকে সেজন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় বিদেশ থেকে চাল আমদানিও অব্যাহত রেখেছে। খাদ্যমূল্য সহনশীল পর্যায়ে রাখার জন্য নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। দেশে কোনো খাদ্য সংকট হবে না।

ঢাকা/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চ ল আমদ ন সরক র উৎপ দ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

ভোলা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাইফুল্লাহ আরিফকে (৩০) হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁর পরিবার অভিযোগ করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বাবা বশির উদ্দিন (মাস্টার) এই অভিযোগ করেন।

এ সময় বশির উদ্দিন বলেন, পুলিশ দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ার কোনো সুযোগ নেই; সেখানে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক।

এর আগে গত শনিবার পুলিশ সুপার শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, প্রাথমিক তদন্তের তথ্য অনুযায়ী অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে সাইফুল্লাহ আরিফ মারা গেছেন।

সাইফুল্লাহ আরিফ ভোলা পৌরসভার কালীবাড়ি রোডে নবী মসজিদ গলি এলাকার বশির উদ্দিনের ছেলে। গত ৩১ আগস্ট ভোরে নিজ বাড়ির সামনে থেকে সাইফুল্লাহ আরিফের লাশ উদ্ধার করা হয়।

আজ দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে দুর্ঘটনায় নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এর কিছু প্রমাণ আছে। আরিফের শরীরে একাধিক কাটা ও ভাঙা জখম ছিল, এমনকি হাতের রগ কাটা ছিল। পুলিশের দাবি করছে, ছাদ থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুর সুযোগ নেই, কারণ, ছাদে বাঁশের বেড়া ও প্রতিটি তলায় ব্যালকনি ছিল। পুলিশ সুপার আমার ছেলেকে নেশাগ্রস্ত আখ্যা দিলেও তাঁর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া পুলিশ কীভাবে এমন কথা বলতে পারে। পুলিশের আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহজনক। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বশির উদ্দিন আরও বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফ কোনো ধরনের মাদকের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। সে ছাত্রলীগের সহসভাপতি হলেও কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করেনি। হত্যাকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ সত্য গোপন করছে। সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করতে মামলাটি সিআইডি বা পিবিআইয়ের কাছে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বশির উদ্দিন বলেন, তাঁর ছেলের সঙ্গে অনেকের বিরোধ ছিল। তবে জমিজমার বিরোধ ও মাদক ব্যবসার বিরোধ নিয়ে তাঁর ছেলে খুন হয়নি। এগুলোর সঙ্গে সে জড়িত ছিল না।

শনিবার পুলিশ শরীফুল হক তাঁর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাইফুল্লাহ আরিফের মৃত্যুর রহস্য উদ্‌ঘাটনে প্রাথমিক তদন্ত শেষে জানা যায়, তিনি অসতর্কতাবশত নিজ বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। ৩০ আগস্ট দিবাগত রাত অনুমান ১২টা ১৫ মিনিটে রাতের খাবার শেষে সাইফুল্লাহসহ পরিবারের সবাই নিজ নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ফজরের নামাজের জন্য বের হওয়ার সময় তাঁর বাবা বশির উদ্দীন (৭০) বাড়ির সামনে গেটের পাশে রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলের মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ভোলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সুরতহালে দেখা যায়, আরিফের মাথা ও হাতে গুরুতর আঘাত ছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, আরিফ দীর্ঘদিন ধরে নেশায় আসক্ত ছিলেন এবং হতাশাগ্রস্ত অবস্থায় প্রায়ই ছাদে যেতেন। ঘটনার দিন রাতেও তিনি ছাদে ওঠেন এবং অসতর্কতাবশত রেলিংবিহীন অংশ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হয়ে মারা যান।

পরিবারের অভিযোগ সম্পর্কে আজ দুপুরে পুলিশ সুপার শরীফুল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই ঘটনায় তদন্ত চলমান। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক তদন্তের কথা জানানো হয়েছে। তদন্তে তথ্য সংযোগ-বিয়োগের সুযোগ রয়েছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার
  • ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু : পুলিশের দাবি, বাড়ির ছাদ থেকে পড়েছেন, হত্যার অভিযোগ পরিবারের