সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র চলছে: রাশেদ খান
Published: 22nd, March 2025 GMT
সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র চলছে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান। তিনি বলেন, যারা সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো ও বিতর্কিত করার চেষ্টা যারা করছে, তারা মূলত আরেকটি এক-এগারো ফিরিয়ে আনতে চায়। তারা সেনাবাহিনীকে উস্কানি দিয়ে আরেকটি ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দিন তৈরি করতে চায়।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত অবস্থান ও গণস্বাক্ষর কর্মসূচিতে রাশেদ খান এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের জনগণকে বলবো এই ফাঁদে আপনারা পা দেবন না। এক-এগারো এলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এদেশের রাজনৈতিক দল ও জনগণ। সুতরাং কোনোভাবেই আরেকটি এক-এগারো বাংলাদেশে আনা যাবে না।
রাশেদ বলেন, সেনাবাহিনী ভূমিকা না রাখলে শেখ হাসিনার পতন ঘটানো সম্ভব হতো না, কোনো গণঅভ্যুত্থানও হতো না। যখনই সেনাবাহিনী বন্দুকের নল আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্ট পুলিশের দিকে তাক করেছে, তখনই হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই’- প্রধান উপদেষ্টা ড.
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে গণঅধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করতে পারেননি। চোরগুলো (আওয়ামী লীগ নেতারা) যখন পালিয়ে গেছে, তখনই তারা অপারেশন ডেভিল হান্ট ঘোষণা করেছে। একটা ডেভিলও ধরা পড়েনি।
ডেভিল সাবের ও মান্নানকে দুজন উপদেষ্টা জামিন করিয়েছেন। তারা হলেন, উপদেষ্টা আদিলুর রহমান শুভ্র ও রেজওয়ানা চৌধুরী। এখন শোনা যাচ্ছে- এই সাবের নাকি ক্লিন ইমেজের আওয়ামী লীগের সভাপতি হবেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যারা করেছে, তাদের আবার কিসের ক্লিন ইমেজ? আমরা তারপরও বলেছি, যারা সাধারণ ও নিরীহ ছিল, যারা সরাসরি ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালইনি, তাদের ওপর আমরা জুলুম করবো না। গণহত্যার বিচারের পর আমরা তাদের ছাড় দেবো, মাফ করবো। কিন্তু গণহত্যার বিচার শেষ হওয়ার আগে যতই ক্লিন ইমেজ হোক না কেন, বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের নামে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। যারা আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন করতে আসবে, জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। প্রয়োজনে যমুনা (প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন) ঘেরাও করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য করা হবে।
গণঅধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য শাকিলুজ্জামান প্রমুখ।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’
নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।
বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’
হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’
তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপকাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।
এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।
সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।
তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।
নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।
নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল