আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর-পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’-এ বিশ্বসেরা হাফেজের মুকুট অর্জন করেছেন ইন্দোনেশিয়ার মোহাম্মদ জাকি। দেশসেরা হয়েছেন নেত্রকোনার কিশোর হাফেজ মো. ইরশাদুল। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনজন এবং জাতীয় পর্যায়ে সেরা আটজন এই পুরস্কার জিতেছেন। 

শনিবার (২২ মার্চ) বিকেলে আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার নবরাত্রি হলে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থ ও সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়। এ সময় দেশবরেণ্য আলেম ওলামাবৃন্দ, বিশিষ্ট শিক্ষক, বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও মাদরাসার হাফেজগণ উপস্থিত ছিলেন। 

এর মধ্য দিয়ে দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম এবং সর্ববৃহৎ কুরআন তিলাওয়াতের প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় আসরের পর্দা নামলো। 

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বাংলাদেশসহ ১৭টি দেশের হাফেজবৃন্দ। চ্যাম্পিয়ন ও দুই রানারআপকে নগদ অর্থ পুরস্কারসহ সনদপত্র ও সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। চ্যাম্পিয়নকে ১৫ লাখ টাকা, প্রথম রানারআপকে ১০ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় রানারআপকে দেওয়া হয় ৭ লাখ টাকা। সবাইকে পেছনে ফেলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ইন্দোনেশিয়ার মোহাম্মদ জাকি। দুজন রানারআপ হলেন ইয়েমেনের মোহাম্মদ বালিগ সায়্যিদ আব্দুল গাফফার আলী ও বাংলাদেশের হাফেজ মো.

ইরশাদুল ইসলাম। 

আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানারআপ নেত্রকোনার কিশোর হাফেজ মো. ইরশাদুল ইসলাম জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। সারা দেশে ১১টি জোনে অন্তত ১০ হাজার প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে এই গৌরব অর্জন করেন তিনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করেন যথাক্রমে হাফেজ মো. জিহাদুল ইসলাম ও হাফেজ আব্দুর রহমান বিন নূর। 

এ ছাড়া চতুর্থ স্থানে হাফেজ মো. জুবায়ের আহমদ, পঞ্চম হাফেজ মো. শাহেদ আলম তারিফ, ষষ্ঠ হাফেজ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী, সপ্তম হাফেজ মুহাম্মদ আফফান বিন সিরাজ এবং অষ্টম হাফেজ আব্দুর রাজ্জাক নোমান।

প্রথম পুরস্কার হিসেবে ১০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৭ লাখ টাকা, তৃতীয় পুরস্কার ৫ লাখ টাকা, চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার ২ লাখ টাকা এবং বাকি তিনটি পুরস্কার ১ লাখ টাকা। প্রত্যেক বিজয়ীর হাতে অর্থ পুরস্কারের পাশাপাশি সনদপত্র ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রথম আসরের মতই এবারের বিজয়ীরাও পাবেন মা-বাবাকে নিয়ে পবিত্র ওমরা পালনের সুযোগ। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের মহাসচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর হযরত মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, আল-কুরআনকে মানুষ ও সমাজের সামনে তুলে ধরার জন্য যে যতটুকু ভূমিকা রাখবে সে ততটুকু মোবারকবাদ ও সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। সমাজ ও দেশের মানুষের কাছে কুরআনকে বলিষ্ঠভাবে উপস্থাপনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা। 

২০২৩ সালে সফলভাবে আয়োজিত প্রথম আসরের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে পরের বছর আরও বৃহৎ আকারে আয়োজন করে বসুন্ধরা গ্রুপ। দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো আয়োজন হয় ‘আন্তর্জাতিক হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ২০২৪- পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’। গত বছরের ২৪ নভেম্বর সিলেট জোনের অডিশন দিয়ে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। পবিত্র রমজানে ইফতারের আগে নিউজ টোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের পর্দায় প্রতিযোগিতাটি সম্প্রচার হয়েছিল। হাজার হাজার খুদে হাফেজ আর তাদের অভিভাবকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছিলো প্রতিটি বিভাগের অডিশন স্থল। জাতীয় পর্যায়ের রাউন্ড শেষ হলেই শুরু হয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। তুরস্ক, জর্ডান, ওমান, ইয়েমেন, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৬টি দেশের হাফেজরা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণকারীরাও ছিল অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী। 

এবার জাতীয় পর্যায়ে পুরো দেশের মোট ১১ জোন থেকে অনূর্ধ্ব-১৬ বছর বয়সী ৩০ পারা কুরআনের হাফেজরা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। প্রতিটি জোন থেকে মূল্যায়িত সেরা হাফেজরা ইয়েস কার্ড প্রাপ্তির মাধ্যমে দ্বিতীয় রাউন্ডে অংশ নেয়। এরপর কুরআনের এই খুদে পাখিদের নিয়ে শুরু হয় জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। দীর্ঘ অডিশনের মধ্য দিয়ে দেশবরেণ্য ইসলামিক স্কলার ও অভিজ্ঞ হাফেজদের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী তাদের মধ্য থেকে আটজন হাফেজকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করেন।

পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতা রাউন্ডের প্রতিযোগীদের সাথে অংশ নেয় জাতীয় পর্যায়ের প্রথম স্থান অর্জনকারী হাফেজ। দেশবরেণ্য ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের খ্যাতিমান ইসলামিক স্কলারের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী ফাইনাল রাউন্ডে এদের মধ্য থেকেই তিনজন সেরা কুরআনের হাফেজকে বাছাই করেন। 

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় পর য য় র প ম হ ম মদ প রস ক র ক রআন র ইসল ম প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ