ভোলার মনপুরায় ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীর ওপর হামলা করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এতে তাদের আট নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চরফ্যাসন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বোরবার সকালে বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে ১ হাজার ৫০ জনের জন্য বিশেষ ভিজিএফের ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ আসে। এর মধ্যে বিএনপিকে ৮০০, জামায়াতে ইসলামীকে ১৫০ ও ইসলামী আন্দোলনকে ১০০টি কার্ড দেওয়া হয়। বিষয়টি মেনে নেননি জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতারা। কার্ড বিতরণে বৈষম্য হয়েছে এমন দাবি তাদের। রোববার সকালে উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিতরণ শুরু হলে দল দুটির কর্মী-সমর্থকরা সকালে মিছিল নিয়ে বাংলাবাজার ইউনিয়ন পরিষদে যান। সেখানে পরিষদের প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার সময় সাকুচিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান বিএনপি নেতা নয়নের নেতৃত্বে লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে মো.

নোমান, রাশেদ, কাউছার, হুমায়ুন কবির, মহিউদ্দিন, রাকিব, আব্বাস ও রাসেল গুরুতর আহত হন। চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক।

উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা আমিনুল এহসান জসিম জানান, অনিয়মের প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে গেলে বিএনপি নেতা নয়নের নেতৃত্বে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। একই অভিযোগ করেন ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি মুফতি এনায়েত উল্যাহ। 

ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নাছির উদ্দিন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে চাল বিতরণ বন্ধ রাখেন। দু’পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। 

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান কবির জানান, কার্ড বিতরণের অনিয়ম নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।  

উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান মিলন মাতাব্বর জানান, হামলা ও চাল বিতরণের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। খোঁজ নিয়ে সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন। 

উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সামসুদ্দিন মোল্লা বলেন, উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নে যুবদলের কোনো কমিটি নেই। নয়ন সাবেক আহ্বায়ক ছিলেন। তার সঙ্গে যুবদলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

এ বিষয়ে কথা বলতে বিএনপি নেতা নয়নের মোবাইল ফোনে কল দেওয়া হলে তিনি সাড়া দেননি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ চ ল ব তরণ য বদল র ত কর ম উপজ ল ব এনপ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ