চারদিকেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন ফসলের খেত। এমন নির্জনতায় হঠাৎ ভেসে আসে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ। শুনতে পেয়ে নিজ মরিচখেতের পরিচর্যার কাজ থামান এক কৃষক। পরে শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে এক নবজাতককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের পূর্ব মহেশালী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধারের পরপর শিশুটিকে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ ও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পূর্ব মহেশালী গ্রামের একটি মরিচখেত পরিচর্যা করছিলেন ওই কৃষক। হঠাৎ পাশের ভুট্টাখেত থেকে নবজাতকের কান্নার আওয়াজ শুনতে পান। প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও পরে কয়েকজনকে ডেকে শব্দের উৎসের দিকে এগিয়ে যান। সেখানে গিয়ে তাঁরা পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় এক নবজাতককে দেখতে পান। আশপাশে খোঁজ নিয়েও শিশুটির কোনো অভিভাবককে পাওয়া যায়নি। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এস এম মুসতাককে জানানো হয়। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খাইরুল ইসলামকে জানালে স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গিয়ে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এরপর নবজাতকটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মুসতাক বলেন, ‘উদ্ধার করা নবজাতকটি মেয়ে। আমরা তার অভিভাবক খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

নবজাতকটি এখন সুস্থ আছে বলে জানান ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রকিবুল আলম। আজ দুপুরের দিকে তিনি বলেন, উদ্ধারের পর শিশুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এরপরও তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিশুটির বয়স এক-দুই দিন হতে পারে।

ইউএনও খাইরুল ইসলাম বলেন, ‘এখন শিশুটিকে সুস্থ রাখার বিষয়টি আমরা ভাবছি। কেউ শিশুটির অভিভাবকত্ব দাবি করলে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর সেটি না হলে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে নিঃসন্তান কোনো দম্পতি শিশুটি লালনপালনের ভার নিতে চাইলে তাঁদের দত্তক দেওয়া হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সবার নজরের বাইরে থাকা চৈতী দেশের জন্য আনল স্বর্ণপদক

একটু বড় হওয়ার পর মেয়েকে দেখে চিন্তায় পড়ে যান মা–বাবা। অন্য শিশুদের মতো বাড়ছে না সে। হাত–পা ছোট, উচ্চতাও থমকে গেছে। পরে বুঝতে পারেন—চৈতী বামন।

যে মেয়েকে নিয়ে একসময় দুশ্চিন্তার পাহাড়ে আটকা পড়েছিল পরিবার, আজ সেই চৈতীই আনন্দের আলো ছড়াচ্ছে। দেশের জন্য প্রথমবারের মতো এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমসে স্বর্ণপদক এনে দিয়েছে চৈতী রানী দেব।

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভূনবীর গ্রামের শিলু রানী দেব ও সত্য দেবের মেয়ে চৈতীর বয়স ১৩ বছর। উচ্চতা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। কিন্তু তার লক্ষ্য নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া । সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চলমান এশিয়ান ইয়ুথ প্যারা গেমস ২০২৫–এ বর্শা নিক্ষেপ ও ১০০ মিটার দৌড়ে সে জিতে নিয়েছে দুটি স্বর্ণপদক। ৭ ডিসেম্বর এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত।

চৈতীর প্রতিভা আছে। অনুশীলনে সে খুব আন্তরিক। সে কিছু করতে চায়। আশা করছি, ওকে দিয়ে একটা ভালো ফলাফল পাবমেহেদী হাসান, বিকেএসপির প্রধান প্রশিক্ষক

চৈতীর স্বর্ণপদক পাওয়ার বিষয়টি দুবাই থেকে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন স্পোর্টস ফর হোপ অ্যান্ড ইনডিপেনডেন্সের (শি) প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শারমিন ফারহানা চৌধুরী।

যে মেয়েকে সবাই দেখত শুধু উচ্চতায়

ভূনবীর দশরথ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী চৈতী একসময় গ্রামবাসীর নজরে পড়ত শুধু তার খর্বাকৃতির জন্য। খেলাধুলায় তার যে অসাধারণ প্রতিভা আছে, তা ছিল চোখের আড়ালে।

তবে এই ছবি এখন বদলে গেছে। গ্রামবাসী বাড়িতে এসে খোঁজ নেন। শিক্ষকেরা খেলতে উৎসাহ দেন, ছবি তোলেন। স্কুলে সে এখন ‘তারকা’।

দুবাইয়ে বর্শা নিক্ষেপে স্বর্ণপদক জয়ের পর চৈতী

সম্পর্কিত নিবন্ধ