তুরস্কে বিরোধীদের আন্দোলন নিয়ে যা বলছেন এরদোয়ান
Published: 25th, March 2025 GMT
২০১৩ সালে গেজি পার্কের আন্দোলনের পর এত বড় বিক্ষোভ তুরস্ক দেখেনি। ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের পর তুরস্কজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা মূলত অবস্থান বিক্ষোভের মাধ্যমে প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করছেন। কোথাও আইন ভাঙেননি তাঁরা। আন্দোলন সহিংসও হয়নি। কিন্তু তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান গতকাল সোমবার এ আন্দোলনকে ‘সহিংস’ আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছেন। দ্রুত বিক্ষোভ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, এ আন্দোলন মানুষকে উসকানি দিচ্ছে।
গতকালই ইমামোগলুর দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিপিএইচ) তরফে জানানো হয়েছে, তাঁকেই ২০২৮ সালে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে।
এরদোয়ানের বক্তব্যগতকাল এরদোয়ান বলেছেন, ইমামোগলুর গ্রেপ্তার ঘিরে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, তা সহিংস চেহারা নিয়েছে। সিপিএইচ দলকে সতর্ক করে এরদোয়ান বলেছেন, প্রশাসনের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে দেবেন না। তার আগেই এই বিক্ষোভ তুলে নেওয়া হোক। প্রেসিডেন্টের অভিযোগ, সিপিএইচ মানুষকে উত্তেজিত করে তুলছে।
এরদোয়ানের অভিযোগ, এ আন্দোলনের জেরে পুলিশ কর্মীরা আহত হয়েছেন। দোকানের কাচ ভেঙেছে। বেশ কিছু সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে। এই সবকিছুর উত্তর চাওয়া হবে সিপিএইচের কাছে। পার্লামেন্টে রাজনৈতিক উত্তর দিতে হবে তাদের। আর আদালতে আইনি লড়াই লড়তে হবে।
এরদোয়ানের এ বক্তব্যের পরও বিক্ষোভ-আন্দোলনে ভাটা পড়েনি। গতকাল দেশজুড়ে এ আন্দোলন ষষ্ঠ দিনে পড়েছে।
ইমামোগলুর পোস্টকারাগারে বসেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একের পর এক পোস্ট করে যাচ্ছেন ইস্তাম্বুল নগরের মেয়র ইমামোগলু। জনগণকে রাজপথে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, কেউ যেন কোনো উসকানিতে পা না দেন। পুলিশের সঙ্গে যেন কেউ সংঘর্ষে জড়িয়ে না পড়েন। তিনি লিখেছেন, ‘সাধ্যের বেশি চেষ্টা করছি এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে।’
জার্মানির বক্তব্যজার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের মুখপাত্র গতকাল জানিয়েছেন, ইস্তাম্বুলের মেয়রের গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় তাঁকে হয়রানি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কেন এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত জানাতে হবে এবং স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তুরস্কে যা ঘটছে, তা গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়। এ ঘটনা তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে বলেও জানিয়েছে জার্মানি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স প এইচ এরদ য় ন ত রস ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।