সৌদি আরবের মদিনা এলাকায় কাজ করেন কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা মো. সোলায়মান। গত বছরের অক্টোবরে ৬ মাসের ছুটিতে দেশে আসেন তিনি। সোমবার ছুটি শেষে ফেরেন কর্মস্থলে। গতকাল বিকেল ৫টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি ৩৩৭ নম্বর ফ্লাইটে উড়াল দেন এই প্রবাসী। বিমানে উঠার আগে সোলায়মান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পৃথিবীর সব দেশে বিমান ভাড়া কম। শুধু বাংলাদেশেই বেশি। এখানে এজেন্সিগুলো সিন্ডিকেট করছে। গণঅভ্যত্থানের পরও এই সিন্ডিকেট ভাঙা যায়নি। 

শুধু সোলায়মান নন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা বাংলাদেশ বিমান ভাড়া বেশি হওয়ায় বাইরে থেকেই বিমানের টিকেট কেনেন। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে দেশের সরকার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমান ভাড়া বেশির কারণে প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে দ্রুত সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
 
সৌদি প্রবাসী সোলায়মান বলেন, ১১ বছর ধরে সৌদি আরবের মদিনা এলাকায় ফ্রি ভিসায় ভাল অবস্থানে কাজ করছি। যখন যে কাজ পাই সেই কাজই করি। গত বছরের অক্টোবর ৬ মাসের ছুটিতে সৌদি আরবের একটি ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল এজেন্সি থেকে টিকিট কেটে দেশে আসি। ছুটি শেষে আজ (সোমবার) ফের কর্মস্থল সৌদি আরব যাচ্ছি। 

এসময় সৌদি আরব থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টিকিট কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে সোলায়মান বলেন, বাংলাদেশর এমন কিছু ট্রাভেল এজেন্সি আছে যারা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রি করে। এ সিন্ডিকেট না ভাঙা পর্যন্ত কমবে না এয়ারের টিকিটের দাম। 

তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবরে আমি যখন দেশে আসি তখন বাংলাদেশ সৌদি রুটে এয়ারের টিকিটের দাম ছিল ৮০–৯০ হাজার টাকারও বেশি। সে সময় সৌদি আরব থেকে ১৫০০ রিয়াল (প্রায় ৫০ হাজার টাকা) দিয়ে বিমানের টিকিট কেটে দেশে আসি। 

একই বিমানে যাচ্ছেন নাজমুল হক নামে আরেক যাত্রী। তিনি বলেন, সৌদি আরবে যাওয়া জন্য রমজানের এক সপ্তাহ আগে ফকিরাপুল পানির টেংকি এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কেটেছি।  

এদিকে ওমানগামী যাত্রী কুমিল্লার মো.

জাবেদ জানান, ৪ মাসের ছুটিতে দেশে এসেছিলাম। এখন আবার ফেরত যাচ্ছি। আসার সময় ২০ হাজার টাকায় সিঙ্গেল টিকিট কেটে সালাম এয়ারে দেশে এসেছিলাম। কিন্তু ফেরত যাওয়ার সময় বাংলাদেশ থেকে সেই টিকিট ৩২ হাজার টাকায় কিনতে হলো।

মালয়েশিয়া গামী যাত্রী সিরাজগঞ্জের আনিছ জানান, ৩ মাস আগে মালয়েশিয়া থেকে ১ হাজার মালয়েশিয়ান রিংগিত (২৫ হাজার টাকা) দিয়ে সিঙ্গেল টিকিট কেটে দেশে আসি। আজ রাত ১০টায় এয়ার এশিয়া ফ্লাইট যোগে মালয়েশিয়া কর্মস্থলে ফিরছি। 

তিনি বলেন, একই রুটে আসার সময় খরচ হলো ২৫ হাজার টাকার মতো এখন ফেরত যাওয়ার সময় দেশের এয়ারলাইন্সগুলোতে টিকিটের দাম চাওয়া হচ্ছে ৪০–৪৫ হাজার টাকা। এ কারণে মালয়েশিয়ায় থাকা এক বন্ধুর মাধ্যমে সেখান থেকে টিকিট কেটে এয়ার এশিয়ার ফ্লাইটে কর্মস্থলে যাচ্ছি।

এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) এর সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ সমকালকে বলেন, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং থাকা প্রয়োজন। টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম থাকলে আইন প্রয়োগ করে তা সমাধান করতে হবে। 

আটাব সভাপতি বলেন, পাশাপাশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্সগুলোর সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সরকারের মনিটরিং ও সুনজর থাকতে হবে। যেমন বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডসহ বিভিন্ন চার্জ কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের নজর থাকতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে সৌদি আরবগামী ফ্লাইটসহ বিভিন্ন গন্তব্যে এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিটের দাম ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সক্ষম হওয়ায় সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, আকাশপথের যাত্রায় টিকিটের উচ্চমূল্য কমানো ও এ খাতে শৃঙ্খলা আনতে বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি ১০ দফা নির্দেশনা দিয়ে একটি পরিপত্র জারি করে। এতে টিকিট বুকিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা বরাদ্দ করা না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুকিং বাতিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি গ্রুপ বুকিংয়ের নামে কোনো এয়ারলাইন্সের অনেকগুলো টিকিট একসঙ্গে ব্লক করা হলে পরে সাত দিনের মধ্যে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ তা বিক্রি নিশ্চিত করার তথ্য দিতে বলা হয়। তা না হলে পরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেসব টিকিট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করতে হবে এয়ারলাইন্সকে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র প রব স র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ