‘আমার ছেলের তো কোনো অপরাধ ছিল না, তাকে কেন হত্যা করা হলো’
Published: 28th, March 2025 GMT
‘আমার ছেলের তো কোনো অপরাধ ছিল না। সে তো মসজিদে তারাবিহর নামাজ পড়তে ঘর থেকে বের হয়েছিল। তাকে কেন হত্যা করা হলো? আমি কার কাছে এর বিচার চাইব?’
ছেলের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইতেই এভাবে বিলাপ করছিলেন নিহত স্কুলছাত্র মো. রায়হানের মা নুর নাহার বেগম (৪০)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটার দিকে নোয়াখালী সদর উপজেলার দাদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ হুগলি গ্রামের একটি বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নুর নাহার বেগম ও মো.
পরিবার জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তারাবিহর নামাজ পড়ার জন্য বাড়ি থেকে মসজিদের উদ্দেশে রওনা দেয় রায়হান। তার বাড়ি ফিরতে অনেক দেরি হলে আশপাশের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নেন নুরুন নাহার। পরদিন বুধবার সকালে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে তাঁর মেজ ছেলের ফোনে একটি ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে তাঁর ছেলেকে বলা হয়, ‘তোমার ভাইকে ফেরত পেতে চাইলে ১৫ লাখ টাকা দিতে হবে।’ ফোনে একটি জায়গার নামও বলা হয়, টাকা নিয়ে উপস্থিত থাকার জন্য। একই দিন বিকেল চারটার দিকে আবারও ওই নম্বর থেকে ফোন আসে। তখন তাঁরা বিষয়টি থানায় জানিয়ে রাখেন। এরপর পুলিশ ফোন নম্বরের সূত্র ধরে মারুফ নামের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে। পরে মারুফের দেখানো স্থান থেকে রায়হানের লাশ উদ্ধার করা হয়। মারুফ তাদের দূরসম্পর্কের আত্মীয়।
সুধারাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার মারুফের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই গ্রামের আরেকটি বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংকের ভেতর থেকে রায়হানের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ জানান, ঘটনার রাতে তিনি রায়হানকে নিয়ে প্রতিবেশী একটি বাড়ির বাগান থেকে ডাব পেড়ে খেতে গিয়েছিলেন। সেখানে হাসি-ঠাট্টার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে রায়হানের মাথায় একটি আঘাত করেন। তখন রায়হান অচেতন হয়ে যায় এবং ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু ঘটে। পরে কাছাকাছি একটি বাড়ির পেছনের সেপটিক ট্যাংকে লাশ গুম করে রাখেন তিনি। আজ শুক্রবার মারুফকে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের
নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।
আরো পড়ুন:
জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল
সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন
মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।
মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”
মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।”
ঢাকা/শরিফুল/রফিক