ঈদেও থেমে নেই হামলা, গাজায় নিহত অন্তত ৮০
Published: 31st, March 2025 GMT
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে চলছে উৎসবের আবহ; কিন্তু আনন্দের এই উপলক্ষও গাজার ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা কাটাতে পারেনি। ঈদের সময়েও ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ঈদ ও এর পরদিন গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৮০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে গত রোববার পবিত্র ঈদুল ফিতর উদ্যাপিত হয়েছে। উৎসবের এ দিনটি মুসলিমরা কাটান তাঁদের প্রিয়জনের সঙ্গে; কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বাসিন্দাদের এবারের ঈদও কেটেছে নিরানন্দ ও মৃত্যুভয়ে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গত ১৮ মার্চ গাজায় আবার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এরপর থেকে নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় দেওয়া হালনাগাদ তথ্যে জানায়, এর আগের ৪৮ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০৫ জন। এর মধ্যে ঈদের দিন অর্থাৎ গত রোববার নিহত হয়েছেন ৫৩ জন এবং আহত হয়েছেন ১৮৯ জন।
টেলিগ্রামে দেওয়া বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর নতুন করে ১ হাজার ১ জন নিহত ও ২ হাজার ৩৫৯ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর ৫০ হাজার ৩৫৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। আহত ১ লাখ ১৪ হাজার ৪০০ জনের বেশি। হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
প্রায় ১৫ মাসের যুদ্ধের পর গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ইসরায়েলি হামলা বন্ধ হলে কিছুটা স্বস্তি ফেরে গাজায়। এরপর ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেন ফিলিস্তিনিরা। ধ্বংসযজ্ঞ ঠেলে নতুন করে ঘর গড়তে শুরু করেন তাঁরা। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার হামলা শুরু করলে ফের বিপর্যয় নেমে এসেছে ফিলিস্তিনিদের জীবনে। আবারও বাড়িঘর ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়েছেন তাঁরা।
নির্বিচার হামলাঈদ উপলক্ষে গাজায় ইসরায়েল হামলায় লাগাম টানতে পারে ধারণা করা হলেও গত দুই দিনে হামলার তীব্রতা আরও বেড়েছে। ঈদের দ্বিতীয় দিন গতকাল ভোর থেকেই গাজাজুড়ে হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। দিনভর থেমে থেমে উপত্যকাটির বিভিন্ন এলাকায় হামলা চলে। পাশাপাশি ইসরায়েলির সেনারা কামান থেকে বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণও করেন।
গতকাল সবচেয়ে বেশি হামলা হয়েছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে। এদিন খান ইউনিসের অন্তত সাতটি এলাকায় বিমান থেকে বোমা হামলা চালায় ইসরায়েল। এ ছাড়া গাজার মধ্যাঞ্চলের নুসেইরাত, মাগাজিসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হয়েছে। দেইর আল–বালাহতেও একাধিক বোমা বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীরা বলছেন, নির্বিচার হামলার মধ্যে মরদেহ উদ্ধারের অভিযান চালানোও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
দক্ষিণ গাজায় রাফার কাছে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে নিহত আটজন চিকিৎসক, পাঁচজন বেসামরিক প্রতিরক্ষা কর্মী ও জাতিসংঘের একজন কর্মীসহ জরুরি সেবাদানের কাজে নিয়োজিত ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)।
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিস (আইএফআরসি) এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলেছে, ২০১৭ সালের পর বিশ্বের যেকোনো জায়গায় তাদের কর্মীদের ওপর এটি সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা।
গাজার গণমাধ্যম কার্যালয়ের দাবি, ইচ্ছাকৃতভাবে জরুরি সেবা বিভাগের এসব কর্মীকে হত্যা করা হয়। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে হাতকড়া পরিয়ে খুব কাছ থেকে মাথায় ও বুকে গুলি করেন ইসরায়েলি সেনারা।
ওই হত্যার পর ইসরায়েলি সেনাদের বাধায় আট দিন এই ১৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। এই হামলার জন্য অবিলম্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গাজার গণমাধ্যম কার্যালয় বলেছে, প্রয়োজনে জাতিসংঘের নেতৃত্বে এই হত্যাকাণ্ডের একটি তদন্ত করতে হবে। এ ছাড়া ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা এবং গাজার চিকিৎসাকর্মী ও জরুরি সেবা বিভাগের কর্মীদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র য় ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ভেনেজুয়েলা ছাড়তে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে: মাচাদো
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো সরকারের বিরোধী নেত্রী মারিয়া কোরিনা মাচাদো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তিনি ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করেছেন। এক বছরের বেশি সময় তিনি দেশটিতে আত্মগোপনে ছিলেন।
নোবেল শান্তি পুরস্কার গ্রহণ উপলক্ষে নরওয়ের রাজধানী অসলো পৌঁছানোর কয়েক ঘণ্টা পর গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের মাচাদো এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কিন সরকারের সহায়তা পেয়েছি।’
নিজের সহযোগীদের সুরক্ষা দিতে চান জানিয়ে মাচাদো তাঁর দেশ ছাড়ার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ট্রাম্প প্রশাসন মাচাদোর ভেনেজুয়েলা ত্যাগের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি।
নরওয়েতে ভেনেজুয়েলার জনসংখ্যা খুবই কম হলেও অসলোতে মাচাদোর উপস্থিতি উপলক্ষে তাঁর দেশের অনেকে তাঁকে দেখতে এসেছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে তিনি যখন গ্র্যান্ড হোটেলের বারান্দায় আসেন, তখন সেখানে জড়ো হওয়া ভেনেজুয়েলার প্রবাসীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। তাঁরা স্প্যানিশ ভাষায় ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘শান্তি’র পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকে ভেনেজুয়েলার জাতীয় সংগীত গাইতে থাকেন।
গত বছর ভেনেজুয়েলায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরপরই মাচাদো আত্মগোপনে চলে যান। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, সরকারের সমন্বিত হুমকি ও বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন সত্ত্বেও নির্বাচনে মাচাদোর সমর্থিত প্রার্থী বিপুল ভোটে জয়ী হন।
অবশ্য নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনিই ক্ষমতায় থেকে যান। একই সঙ্গে তিনি বিরোধীদের ওপর দমন–পীড়ন চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে মাচাদো বলেন, ভেনেজুয়েলার সরকার তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানত না। জানলে তারা তাঁকে নরওয়েতে যেতে বাধা দিত। নরওয়েতে গত বুধবার মাচাদোর পক্ষে তাঁর মেয়ে শান্তি পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন।
ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেয়ো বুধবার কোনো প্রমাণ ছাড়াই দাবি করেন, সরকার তাঁর গতিবিধি সম্পর্কে অবগত ছিল। ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন, মাচাদো দেশ ছাড়লে তাঁকে পলাতক বলে গণ্য করা হবে।
মাচাদো স্বীকার করেন, বর্তমান সরকারের অধীন ভেনেজুয়েলায় ফিরলে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ভেনেজুয়েলায় কবে ফিরতে পারবেন, সে সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত নন।
নিজের নরওয়ে সফর প্রসঙ্গে মাচাদো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করার ঝুঁকি যদিও খুব বেশি ছিল, তবু তা সার্থক হয়েছে। ফিরে যাওয়ার ঝুঁকি সম্ভবত আরও বেশি।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার সরকারের ওপর চাপ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করার পর মাচাদো বিশ্ব মঞ্চে ফিরে এলেন। বুধবার যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির উপকূল থেকে একটি তেলের ট্যাংকার জব্দ করেছে।
মাচাদো ট্যাংকার জব্দ করার বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তবে বৃহস্পতিবার তিনি বারবার মাদুরোর অর্থের উৎস বন্ধ করতে ওয়াশিংটনের উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
নোবেলজয়ী মাচাদো সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা এখন যে অবস্থানে পৌঁছেছি, তাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পদক্ষেপ ভূমিকা রেখেছে। এতে মাদুরোর শাসনব্যবস্থা আগের চেয়ে দুর্বল হয়েছে।’
মাচাদো অবশ্য সাংবাদিকদের সঙ্গে তাঁর পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে কোনো কথা বলেননি। তিনি কেবল এটুকু বলেছেন, প্রাথমিকভাবে তিনি তাঁর তিন সন্তান এবং দলের সঙ্গে আবার সংযোগ স্থাপন এবং নিজের চিকিৎসায় সময় দেবেন।