ধর্মপাশায় যৌতুক না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগ, স্বামী গ্রেপ্তার
Published: 2nd, April 2025 GMT
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় টেলিভিশন ও আসবাব কিনতে শ্বশুরের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা এনে না দেওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূকে রশি দিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে উপজেলার সেলবরষ ইউনিয়নের খয়েরদিরচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহবধূ প্রিমা বেগম (২০) বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ চারজনের নাম উল্লেখ আজ বুধবার দুপুরে থানায় মামলা করেছেন। মামলার পরপরই বিকেলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বাড়ি থেকে তাঁর স্বামী শাওন মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।
পুলিশ, মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, খয়েরদিরচর গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে শাওন মিয়ার সঙ্গে একই গ্রামের বকুল মিয়ার মেয়ে প্রিমা বেগমের প্রেমের সম্পর্কের জেরে দুই বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শ্বশুরের কাছ থেকে স্ত্রীকে টাকা এনে দিতে চাপ দিতেন শাওন। স্ত্রীও সাধ্যমতো বাবার কাছ থেকে টাকা এনে দিতেন। মাসখানেক আগে শাওন শ্বশুরের কাছে টিভি, আসবাবপত্র কিনতে দেড় লাখ টাকা চান। টাকা দিতে না চাইলে শাওনের পরিবারের লোকজন রশি দিয়ে প্রিমার হাত-পা বেঁধে মারধর করেন। একপর্যায়ে শাওন লোহার একটি কাঁচি দিয়ে তাঁর পিঠে গরম ছ্যাঁকা দেন বলে অভিযোগ। গতকাল মঙ্গলবার রাতে স্ত্রীকে আবার শ্বশুরের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা এনে দিতে চাপ দেন শাওন। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে প্রিমাকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। পরে স্বামীর অগোচরে রাতেই বাবার বাড়িতে গিয়ে ঘটনা খুলে বলেন ওই গৃহবধূ।
আজ বেলা ১১টার দিকে গৃহবধূ পরিবারের লোকজনকে নিয়ে ধর্মপাশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। চিকিৎসা শেষে দুপুরে থানায় গিয়ে স্বামীসহ চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে খয়েরদিরচর গ্রামের বাড়ি থেকে তাঁর স্বামী শাওনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গৃহবধূর বাবা বলেন, ‘আমি একটি স মিলে শ্রমিক হিসেবে কাজ করি। মেয়ের সুখের জন্য সাধ্যমতো অর্থ দিয়েছি। আমার কাছে দেড় লাখ টাকা চেয়ে না পাওয়ায় আমার মেয়েকে যারা নির্যাতন করেছে, আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
শাওনের বাবা ধান ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ‘প্রেম করে বিয়ে করায় আমরা পারিবারিকভাবে এখনো পুত্রবধূকে গ্রহণ করিনি। দেড় লাখ টাকা চাওয়া ও মারধরের ঘটনা সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। পরিকল্পিত ঘটনা সাজিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’
ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এনামুল হক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে তাঁর স্বামীসহ চারজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে থানায় মামলা করেছেন। ওই গৃহবধূর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ হবধ
এছাড়াও পড়ুন:
মঙ্গলবার কুয়াকাটায় রাস উৎসব, গঙ্গা স্নান বুধবার
প্রায় ২০০ বছর ধরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার মদনমোহন সেবাশ্রম মন্দির ও কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরে পৃথক আয়োজনে রাস উৎসব পালন করে আসছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এবছরও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে হবে এ উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ায় বসছে ৫ দিনব্যাপী মেলা।
কলাপাড়ায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, শেষ সময়ে প্রস্তুত করা হচ্ছে মন্দিরের আঙ্গিনাসহ রাধা ও কৃষ্ণের ১৭ জোড়া প্রতিমা।
মঙ্গলবার পূর্ণিমা তিথিতে রাত ৯টা ২২ মিনিটে অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে রাস পূজার আনুষ্ঠানিকতা। পরের দিন বুধবার সন্ধ্যা ৭টা ৬ মিনিটে এ তিথি শেষ হবে। সেদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে কুয়াকাটা সৈকতে গঙ্গা স্নান করবেন পুণ্যার্থীরা। এর পর মন্দিরের আঙ্গিনায় রাধা-কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবেন তারা। তাই, দুই মন্দিরেই ১৭ জোড়া প্রতিমা বানানো হয়েছে। প্যান্ডেল সাজানোর কাজ শেষ। চলছে লাইটিং ও সাজসজ্জার কাজ।
এ উৎসব উপলক্ষে কলাপাড়ার মন্দির প্রাঙ্গণ, কুয়াকাটার মন্দির প্রাঙ্গণ ও সৈকতে অস্থায়ীভাবে বসছে শতাধিক পোশাক, প্রসাধনী, খেলনা ও গৃহস্থালী সামগ্রীর দোকান। কুয়াকাটায় তিন দিনব্যাপী উৎসব হলেও কলাপাড়ায় এ উৎসব চলবে পাঁচ দিন। এসব দোকানে অন্তত ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রির আশা করছেন আয়োজকরা।
কলাপাড়ার শ্রী শ্রী মদনমোহন সেবাশ্রমের রাস উদযাপন কমিটির সভাপতি দিলীপ কুমার হাওলাদার বলেছেন, আজকের মধ্যেই আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের এ উৎসব হলেও এখানে ৫ দিনব্যাপী মেলায় সব ধর্মের মানুষের আগমন ঘটে। আমাদের মন্দির প্রাঙ্গণে অন্তত ৭০টি দোকান বসেছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে রাস উৎসব সম্পন্ন হবে।
কুয়াকাটার রাধা-কৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক নীহার রঞ্জন মন্ডল বলেছেন, আগামীকাল রাতভর মন্দির প্রাঙ্গণে ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলবে। পরদিন সকালে গঙ্গা স্নান হবে। লাখো পুণ্যার্থীর আগমনের আশা করছি আমরা। বুধবারও গঙ্গা স্নান হবে। উৎসব উপলক্ষে আমাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউসার হামিদ বলেছেন, রাস উৎসব উপলক্ষে কুয়াকাটায় ১ লাখ পুণ্যার্থী সমাগমের আশা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, শান্তিপূর্ণভাবে এ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হবে।
ঢাকা/ইমরান/রফিক