ঈদে কেনাকাটা নিয়ে কোন্দল, পরে মিলল অন্তঃসত্ত্বার লাশ
Published: 3rd, April 2025 GMT
ঈদের কেনাকাটা নিয়ে কোন্দলের জেরে দিনাজপুরে স্বামীর নির্যাতনে অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার ঈদের দিন দিনাজপুর শহরের পুলহাট মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরদিন দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেন গৃহবধূর বাবা। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যার শিকার হয়েছেন আরও ছয়জন।
দিনাজপুরে মৃত তানজিলা আক্তার তানিয়া (২০) তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাঁর বাবা আবু তালেব বলেন, গত সোমবার শ্বশুরবাড়ি থেকে কল করে জানানো হয়, তাঁর মেয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে গিয়ে দেখেন, তানজিলার মরদেহে আঁচড়সহ আঘাতের চিহ্ন এবং মুখে ফেনা। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজন জানায়, ঈদের কেনাকাটা নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডার পর তানজিলা আত্মহত্যা করেছে। তিনি অভিযোগ করেন, তানজিলার স্বামী রুবেল মাদকাসক্ত। আগেও সে মেয়েকে নির্যাতন করেছে।
তানজিলার মা আরজিনা বেগম বলেন, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেনি। তার গলায় ফাঁসের চিহ্ন নেই। তবে শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
এ ছাড়া হবিগঞ্জের মাধবপুরে ঈদের দিন আঙ্গুরা নামের এক নারীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় স্বামী নাজমুল মিয়াকে গতকাল বুধবার ভোরে নোয়াখালীর সুধারামপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নাজমুলের বাড়ি মাধবপুরের হারিয়া গ্রামে।
আঙ্গুরার বাবা মোহাম্মদ আলীর অভিযোগ, নেশার টাকার জন্য নাজমুল প্রায়ই আঙ্গুরাকে মারধর করত। গত সোমবার সকালে নাজমুলের স্বজন তাদের কল করে জানায়, আঙ্গুরা অসুস্থ। এর পর তারা গিয়ে দেখেন, আঙ্গুরাকে খুন করে নাজমুল পালিয়েছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার হাউলি জয়পুর গ্রামে সালমা বেগম (২৫) নামের এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার সকালে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সালমা ওই গ্রামের সৌদিপ্রবাসী আজাদ মল্লিকের স্ত্রী। তাঁর সাত বছরের ছেলে ও পাঁচ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। হত্যার সময় তারা মায়ের ঘরেই ছিল।
সালমার শাশুড়ি লতা বেগম জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে সালমা দুই সন্তানকে নিয়ে নিজ ঘরে ঘুমাতে যান। সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি সালমার ছেলে সাদিককে ডাক দেন। ওই সময় সাদিক ঘরের ভেতর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ বলে জানায়। পরে তিনি দরজা খুলে খাটের ওপর সালমার লাশ পান। এ সময় সালমার গলায় শক্ত করে ওড়না পেঁচানো ছিল।
সালমার ছেলে জানিয়েছে, রাতে তাদের ঘরে তিনজন লোক ঢুকেছিল। তারা তার মাকে হত্যা করেছে। ওই তিনজনের মধ্যে হেমায়েত নামে একজনকে সে চিনতে পেরেছে। এর বেশি আর কিছু সে জানাতে পারেনি।
সাভারে ঈদের রাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে এক নৈশপ্রহরীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাভার পৌর এলাকার বাঁশপট্টি মহল্লায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। নিহত রুবেল মিয়া বরিশালের মোহাম্মদ খলিফার ছেলে। তিনি সাভারের বাঁশপট্টি মহল্লায় স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
নিহতের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, তাঁর স্বামী দুই মাস আগে বাঁশপট্টি এলাকায় নৈশপ্রহরীর কাজ শুরু করেন। সোমবার রাত ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে কল আসার পর রুবেল বাসা থেকে বের হন। এর কিছুক্ষণ পর বাসায় খবর আসে, রুবেলকে গুলি করা হয়েছে। পরে তারা এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক রুবেলকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় গোমতী নদীর গৌরীপুর-জিয়ারকান্দি সেতু এলাকা থেকে খোকন মিয়া (২৭) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার বিকেলে লাশটি উদ্ধার করা হয়। খোকনের বাড়ি তিতাস উপজেলার নাগেরচর দুর্গাপুর গ্রামে। তিনি ঠিকাদার ছিলেন।
নওগাঁর মান্দায় আবদুল জব্বার (৫০) নামে এক ব্যক্তির অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ১টার দিকে উপজেলার ভোলাগাড়ি গ্রামে তালপুকুড়িয়া বিলের ধানক্ষেত থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। জব্বার পার্শ্ববর্তী এলাঙ্গা গ্রামের প্রয়াত ফজর আলীর ছেলে।
জব্বারের ছোট ভাই আজহারুল ইসলাম জানান, তাঁর ভাই গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ভোলাগাড়ি গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে বুলবুলের কাছে পাওনা ৫০ হাজার টাকা নিতে বাড়ি থেকে বের হয়। এর পর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। ওই টাকার জন্যই তাঁর ভাইকে হত্যা করা হতে পারে।
এদিকে, সাতক্ষীরায় ধানক্ষেতে পানি দেওয়াকে কেন্দ্র করে বাগ্বিতণ্ডার এক পর্যায়ে আনারুল (৫৭) নামের এক চা বিক্রেতাকে কাঁচি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে সদর উপজেলার ধুলিহর সানাপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। আটক দু’জন হলেন বালুইগাছা পালপাড়ার লক্ষ্মণ পাল (৫০) ও তাঁর স্ত্রী নমিতা পাল (৪০)।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হত য উপজ ল র স মব র মরদ হ এ ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ছয়জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরো আটজনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।”
আরো পড়ুন:
সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত: আইএসপিআর
ঢামেক হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।”
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ।”
তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল