মধুচন্দ্রিমার চেয়ে আইপিএল বড়, দুই হাতে বোলিং করে উইকেট নিয়ে গড়লেন রেকর্ডও
Published: 4th, April 2025 GMT
কামিন্দু মেন্ডিসকে মেগা নিলামে ৭৫ লাখ রুপিতে কেনে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। আইপিএলের নতুন মৌসুম শুরুর আগে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা নিশনিকে বিয়ে করেন শ্রীলঙ্কান এই স্পিন অলরাউন্ডার। পরিকল্পনা ছিল মধুচন্দ্রিমায় (হানিমুন) দেশের বাইরে যাবেন। কিন্তু আইপিএলের ডাক সেটি আর হতে দেয়নি।
শ্রীলঙ্কার পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শহর হাপুতালেতে সংক্ষিপ্ত আকারেই মধুচন্দ্রিমা সেরে নেন কামিন্দু। তাঁদের বিয়ের পরিকল্পনাকারী পাতুম গুনাবর্ধনার ভাষায়, ‘হাপুতালেতে দুজন সংক্ষিপ্ত মধুচন্দ্রিমা সেরে নিয়েছে। আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে যোগ দেওয়ায় দেশের বাইরে যেতে পারেনি এবং আইপিএলের জন্য সে আগেভাগে অনুশীলন শুরু করবে।’
আরও পড়ুনআইপিএল: ৫ ওভারেই ৪০ ওভারের ম্যাচ জিতে নিল কলকাতা১১ ঘণ্টা আগেআইপিএল এখন মাঠে। গতকালই অভিষেক হলো কামিন্দুর। দল জিততে পারেনি। কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ৮০ রানে হেরেছে হায়দরাবাদ। কিন্তু আইপিএলে ইতিহাস গড়েছেন ২৬ বছর বয়সী কামিন্দু। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলে একই ওভারে বোলিংয়ের হাত পাল্টেছেন। শুধু কি তা–ই! নিয়েছেন উইকেটও। অর্থাৎ আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম দুই হাতেই বোলিং করতে পারা বোলার হিসেবে উইকেট নিয়েছেন কামিন্দু।
একটি ওভারই বোলিং করেছেন। সেটা কলকাতার ইনিংসে ১৩তম ওভারে। ওই ওভারের প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ ডেলিভারিটি করেন বাঁ হাতে এবং বাকি তিনটি ডেলিভারি ডান হাতে। চতুর্থ বলে তাঁকে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন কলকাতার অংকৃষ রঘুবংশী।
আইপিএলে এর আগে লিয়াম লিভিংস্টোনকে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে অফ স্পিন ও ডানহাতির বিপক্ষে লেগ স্পিন করতে দেখা গেছে। কিন্তু সেটা এক হাতে বোলিং করে। কামিন্দুর মতো দুই হাতে বোলিং করে নয়।
শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব–১৯ দল থেকে উঠে আসা এ বোলার অল্প বয়সেই দুই হাতে বোলিং করে আলোচনায় উঠে আসেন। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৬ অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপেও দুই হাতে বোলিং করেছেন। আন্তর্জাতিক ম্যাচেও তাঁকে দুই হাতে বোলিং করতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুনসিরাজের প্রশংসা করতে গিয়ে কোহলিকে একহাত নিলেন শেবাগ১৩ ঘণ্টা আগেপাল্লেকেলেতে গত বছর জুলাইয়ে ভারতের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি ম্যাচে সূর্যকুমার যাদব ও ঋষভ পন্তের বিপক্ষে দুই হাতে বোলিং করেন কামিন্দু। জাতীয় দলের হয়ে এ পর্যন্ত ১২টি টেস্ট, ১৯ ওয়ানডে ও ২৩ টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন কামিন্দু। হায়দরাবাদের জয়ে পাঁচে নেমে ২৭ রানের ইনিংস খেলা এই অলরাউন্ডার টেস্টে ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে যৌথভাবে দ্বিতীয় দ্রুততম (১৩ ইনিংস) হিসেবে এক হাজার রান করেছেন।
কামিন্দুর বাঁহাতি স্পিন ডানহাতি স্পিনের চেয়ে ভালো। সম্ভবত এ কারণেই মাত্র এক ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েছেন। কারণ, রঘুবংশী আউট হওয়ার পর ক্রিজে দুজন বাঁহাতি ভেঙ্কটেশ আইয়ার এবং রিংকু সিং ছিলেন।
ওভারের মধ্যে বোলিংয়ের হাত পাল্টানো বৈধ। তবে আম্পায়ার একটু খুঁতখুঁতে হলে প্রতিবার হাত বদলের সময় বোলারকে তা জানানোর জন্য বাধ্য করতে পারেন। কাল কামিন্দুর ক্ষেত্রে অবশ্য তা দেখা যায়নি। কারণটা সম্ভবত আম্পায়ার জানতেন কামিন্দু কার বিপক্ষে কোন হাতে বোলিং করবেন এবং এই বোলার সাধারণত এটাই করেন—ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে বাঁহাতি স্পিন ও বাঁহাতির বিপক্ষে ডান হাতের স্পিন।
মজার ব্যাপার হলো, কামিন্দু কাল এমন এক দলের বিপক্ষে দুই হাতে বোলিং করলেন, যারা নিজেরাই একসময় দুই হাতে বোলিং করতে পারা বোলার খুঁজেছে। ২০০৯ সালে কলকাতার তখনকার কোচ জন বুকানন এমন দুজন বোলারকে ৪৫ জনের সম্ভাব্য দলে রেখেছিলেন। একজন স্পিনার, অন্যজন ছিলেন পেসার।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কামিন্দুর আগে দুই হাতে বল করা বোলারও শ্রীলঙ্কান—হাশান তিলকরত্নে, ১৯৯৬ বিশ্বকাপে কেনিয়ার বিপক্ষে। বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের সাবেক প্রধান কোচ তিলকরত্নের আগে পাকিস্তান কিংবদন্তি হানিফ মোহাম্মদ দুই হাতে বোলিং করেছেন। এই ডানহাতি ‘পার্ট টাইম’ অফ স্পিনার ১৯৫৮ সালে কিংস্টন টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাঁ হাতেও স্পিন বোলিং করেন। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি গ্যারি সোবার্স সে টেস্টে ৩৬৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। সোবার্সের ৩৬৫তম রান নেওয়ার ডেলিভারিটি বাঁ হাতে করেছিলেন হানিফ মোহাম্মদ। ১৯৯৪ সালে ব্রায়ান লারা ৩৭৫ করার আগে সোবার্সের ইনিংসটিই ছিল টেস্টে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংস।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ য়দর ব দ কর ছ ন কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।