অপারেশন করার চিকিৎসকের সদন নেই। অপারেশন থিয়েটারেও নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। এছাড়া চিকিৎসকও অন্য বিভাগের। তারপরও অপারেশন করেছেন। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে রাসেল নামে এক রোগীর। 

ঘটনাটি গত ৩০ মার্চ পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন দিবাগত রাতে সোনারগাঁ উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ঐতিহ্যবাহী গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা সোনারগাঁ সরকারি কলেজ সড়কের ডান পাশে জলিল প্লাজায় অবস্থিত “মেডিকেয়ার হাসপাতাল”এ ঘটেছে। 

এ ঘটনার পর হাসপাতাল ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধাঁমাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলেও বিশ^স্ত একটি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। খবরপেয়ে, ঘটনাস্থলে গেলে হাসপাতালের ভিতরে কর্মচারীদের দেখা গেলেও একাধিকবার কলিং বেল বাঁজালে এবং ডাকা-ডাকি করলেও কেউ কোন সাড়া দেয়নি। 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, রাসেল নামে বরিশালের এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে ভাড়ায় বসবাস করতেন উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের গোহাট্টা গ্রামে। তিনি মেঘনা শিল্পাঞ্চলে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। গত ৩০ মার্চ বিকালে রাসেলের হঠাৎ পেটে ব্যাথা শুরু হয়। পরিবারের সদস্যরা তাকে স্থানীয় মেডিকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যায়। 

এদিকে, হাসপাতালে কোন চিকিৎসক না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করেন এবং ফোনে শিশির আহমেদ নামে অর্থোপেডিক বিভাগের এক চিকিৎসক (!) কে ডেকে আনেন। 

ডা.

(!) শিশির রাসেলের লিভারে সমস্যা হয়েছে এবং তাকে দ্রুত অপারেশন করাতে হবে, নয়তো রোগির জীবন নিয়ে সমস্যা হবে বলে রোগীর সাথে থাকা ব্যক্তিদের জানান। তারাও দ্বিগবেদ্বিক না ভেবে অপারেশনের অনুমতি দেন।

সন্ধ্যায় অপারেশনের পর রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। অবস্থা বেগতিক দেখে তাকে রাতেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠায় ডা. (!) শিশির। 

পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিলে সেকানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, রোগী বেশ কিছু আগেই মারাগেছেন। 

এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শারমিন আক্তার তিথি বলেন, রোগী মৃত্যুর ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে যতদূর মনে পরে, আমি সোনারগাঁয়ে যোগদানের পর উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বেশ কিছু অবৈধ হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাই।

তখন মেডিকেয়ার হাসপাতালের কোন অনুমতিপত্র পাইনি। তখন তাদেরকে অনুমতি না নিয়ে মৌখিকভাবে কার্যক্রম না চালানোর জন্য নির্দেশ দিয়ে আসছিলাম। 

আসলে আমাদের ম্যাজেষ্ট্রেসি পাওয়ার না থাকায় অনেক সময় চাইলেও অনেক কিছু করতে পারিনা। এ সকল বিষয়গুলো সিভিল সার্জন অফিসই দেখে। তবে, ভুক্তভোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. এএফএম মশিউর রহমান জানান, মেডিকেয়ার হাসপাতালের হালনাগাদ সনদ আছে কি-না অফিস না খুললে সঠিক বলা যাচ্ছেনা। তবে, স্বাভাবিকভাবে একজন অর্থোপেডিকের চিকিৎসক কেন লিভার অপারেশন করবে ?

আসলে পারলে কিন্তু কোন সমস্যা নাই, না পারলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। যিনি অপারেশন করেছেন তিনি পারেন না বিধায় সমস্যা হয়েছে। পারলেতো সমস্যা হতো না। 

তবে, ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে আইননানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ চ ক ৎসক পর ব র স ন রগ উপজ ল সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

অনশনের পর ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পেলেন ছয় সমন্বয়ক

নিরাপত্তার অজুহাতে গোয়েন্দা (ডিবি) কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ককে। আটক থাকার এক পর্যায়ে তাঁরা অনশন শুরু করেন। ৩২ ঘণ্টা অনশনের পর ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) দুপুরে ছয় সমন্বয়ককে ডিবি কার্যালয় থেকে কালো রঙের দুটি গাড়িতে করে যাঁর যাঁর ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।

সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারকে ছয় দিন; সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে পাঁচ দিন এবং নুসরাত তাবাসসুমকে চার দিন ডিবি কার্যালয়ে তখন আটক রাখা হয়েছিল। এই ছয় সমন্বয়কের মধ্যে নাহিদ এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক। আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। সারজিস, হাসনাত ও নুসরাত এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। আবু বাকের এখন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের আহ্বায়ক।

ডিবি কার্যালয় থেকে ছাড়া পাওয়ার সেই ঘটনা সম্পর্কে সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি আমার বোনের বাসার লোকেশন (ঠিকানা) দিয়েছিলাম ডিবিকে। ১ আগস্ট (২০২৪ সাল) ডিবি তাদের তত্ত্বাবধানেই আমাদের ছয়জনকে যার যার গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। বোনের বাসায় পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পর আমি প্রথমে আসিফ ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে মানিকনগরের একটা জায়গায় দেখা করি। আমরা পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। কীভাবে এক দফার (সরকার পতনের) ঘোষণায় যাওয়া যায়, সে বিষয়েও সেদিন আমরা চিন্তা করি।’

সেদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে ‘রিমেম্বারিং আওয়ার হিরোজ’ কর্মসূচি পালিত হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গণসংগীত, পথনাটক, দেয়াললিখন, স্মৃতিচারণা ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয় রাজধানী ঢাকাসহ অন্তত ১৬টি জেলা ও মহানগরে। এসব কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু জায়গায় শিক্ষক ও আইনজীবীরা অংশ নেন। তবে কোথাও কোথাও কর্মসূচিতে বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। অনেক জায়গায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আটক করা হয়।

প্রতিবাদ, বিক্ষোভ

সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উদ্যোগে পৃথক সমাবেশ-মানববন্ধন ও মিছিল করা হয়। পাশাপাশি সেদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র-জনতা।

‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের কঠোর দমনপ্রক্রিয়া ও গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যা’র প্রতিবাদে ১ আগস্ট বেলা ১১টায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে সমাবেশের কর্মসূচি ছিল শিল্পী ও কলাকুশলীদের। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে তাঁরা প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ–সংলগ্ন ইন্দিরা রোডের প্রান্তে সমবেত হন। সেদিন সকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিল্পীরা ব্যানার-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন।

পরে শিল্পীরা ইন্দিরা রোড দিয়ে শোভাযাত্রা করে ফার্মগেটে আনন্দ সিনেমা হলের কাছে সমবেত হন। প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই তাঁরা সেখানে সড়কের পাশে ব্যানার-পোস্টার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। শিল্পী, নির্মাতা ও কলাকুশলীরা ছাত্র-জনতার হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, যে বর্বর পন্থায় শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে দমন করা হচ্ছে, তা কোনো গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে ঘটতে পারে না।

দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পীদের সমাবেশ থেকে সেদিন শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানানো হয়। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের বিচার, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও হয়রানি বন্ধের দাবি করা হয়। সমাবেশ থেকে আরও জানানো হয়, শিল্পীরা তাঁদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন।

সেদিন বিকেলে ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ের সামনে ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে মানববন্ধন করেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মানববন্ধনে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, গুলি করে শিশুসহ নির্বিচার মানুষ হত্যার তদন্ত জাতিসংঘের অধীনে করতে হবে।

সেই মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বলেন, হত্যার বিচার করতে হবে। হুকুমদাতাদেরও বিচার করতে হবে।

কূটনীতিকদের ‘ব্রিফ’

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করে ১ আগস্ট বিকেলে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করা হয়। সেই ব্রিফিংয়ে বিদেশি কূটনীতিকেরা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্বাসযোগ্য তদন্তের দাবি জানান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ