বৈরী আবহাওয়ায় চা শিল্পে সংকটের শঙ্কা
Published: 5th, April 2025 GMT
তাপদাহ আর অনাবৃষ্টিতে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে চা শিল্প। চলতি মৌসুমে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু, পাতা উত্তোলন মৌসুমের শুরুতেই বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তাই, চা উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে মরে যাচ্ছে চা গাছ। প্রুনিং (ছাঁটাই) করা ডালে গজাচ্ছে না নতুন কুঁড়ি। দেখা দিচ্ছে নানা রোগ-বালাই। এ নিয়ে হতাশ চা শ্রমিক ও মালিকরা।
মৌলভীবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৪ মিলিমিটার। ২০২৪ সালে একই সময়ে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৪৬ মিলিমিটার।
মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও রাজনগরে আছে ৯২টি চা বাগান। সদর ও শ্রীমঙ্গলের কয়েকটি চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে, প্রুনিং (ছাঁটাই) করা কম বয়সী গাছগুলো অনাবৃষ্টির কারণে মরে যাচ্ছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার প্রেমনগর চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সবুজ পাতা নেই চা গাছে। খরায় মরে গেছে প্রুনিং করা গাছ।
কথা হয় চা শ্রমিক সবিতা, সুমিত্রা, লাভলী, কুনতি ও শিলার সঙ্গে। তারা বলেন, সারা দিনে ৩ থেকে ৪ কেজি পাতা তুলতে পারিনি। গাছে পাতা নেই। পানির অভাবে মরে যাচ্ছে গাছগুলো। পাতা তুলতে না পারায় মজুরিও ঠিকমতো আদায় হয়নি। এক মাস ধরে কষ্টে চলছে সংসার।
প্রেমনগর চা বাগানের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, কাঁচা পাতা সংরক্ষণের স্থান খালি পড়ে আছে।
প্রেমনগর চা বাগানের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) রফিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, প্রচণ্ড খরায় পুড়ছে চা বাগান। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় আছি।
চা বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট অঞ্চলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেছেন, চা শিল্প বৈরী আবহাওয়া ও অনাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা রক্ষা করতে হলে কৃত্রিমভাবে বিন্দু বিন্দু পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। চলতি মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। খরায় বেশিরভাগ বাগানে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গাছ মরে যাচ্ছে। কোনো কোনো বাগানে ইরিগেশন ব্যবস্থা চালু থাকায় খরার কবল থেকে রক্ষা পাচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেছেন, খরায় গাছ মরে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য আমরা বাগান কর্তৃপক্ষকে ছায়াতরু রোপণ, ইয়াং চা গাছে প্রুনিং ও গাছের গোড়ায় কচুরিপানা দিয়ে খরা মোকাবিলার পরামর্শ দিয়েছি। এই পদ্ধতি প্রয়োগ না করলে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে না। খরার কারণে লাল মাকড়ের আক্রমণসহ নানা রোগ-বালাই দেখা দিতে পারে।
মৌলভীবাজার আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন, চলতি বছরে মার্চ মাস পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। চলতি মাসে তাপদাহ ও ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা আছে।
ঢাকা/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।