বর্তমানে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। সেই সঙ্গে প্রতিনিয়ত বাড়ছে উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও মানসিক চাপে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও। মেডিটেশন একসময় শুধু আধ্যাত্মিক বা ঐতিহ্যগত অনুশীলন হিসেবে বিবেচিত হতো। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ও গবেষণা প্রমাণ করেছে, বৈজ্ঞানিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে এটি।

 

মেডিটেশন ও মস্তিষ্কের বৈজ্ঞানিক পরিবর্তন

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত মেডিটেশন মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, যা স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষণায় দেখা গেছে, মেডিটেশন মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা (যা উদ্বেগ ও ভয় নিয়ন্ত্রণ করে) কম সক্রিয় করে। ফলে চাপ ও দুশ্চিন্তা কমে।

কোন মানসিক সমস্যায় মেডিটেশন কার্যকর

বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যাতেই মেডিটেশন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

উদ্বেগ ও স্ট্রেস: মেডিটেশন কর্টিসল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

বিষণ্নতা: নিয়মিত মেডিটেশন সেরোটোনিন ও ডোপামিনের নিঃসরণ বাড়িয়ে মনোবল বৃদ্ধি করে এবং নেতিবাচক চিন্তা কমায়।

এডিএইচডি: মেডিটেশন শিশুদের মনোযোগ ও সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে, যা এডিএইচডিতে বিশেষ কার্যকর।

পিটিএসডি ও ট্রমা: মেডিটেশন ট্রমার স্মৃতিগুলোর নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

ঘুমের সমস্যা: মেডিটেশন শরীর-মনে গভীর শিথিলতা সৃষ্টি করে, যা ভালো ঘুমের জন্য সহায়ক।

মেডিটেশন শুধু মানসিক রোগের উপসর্গ কমানো নয়; বরং দৈনন্দিন জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, কর্মজীবী ও মানসিক চাপগ্রস্ত ব্যক্তিরা যখন নিয়মিত মেডিটেশন করেন, তখন তাঁরা উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ, আবেগের স্থিতিশীলতা ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখেন।

নিয়মিত মেডিটেশন মস্তিষ্কের গ্রে ম্যাটারের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে, যা স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

মেডিটেশন শুরু করবেন কীভাবে

ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ: গভীর শ্বাস নিন, ৪ সেকেন্ড ধরে রাখুন, ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এটি মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ায় এবং স্নায়ুকে শিথিল করে।

মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন: চোখ বন্ধ করে বসুন এবং আপনার শ্বাসপ্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ দিন। কোনো ভাবনা এলে সেটি এড়িয়ে না গিয়ে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করুন। বর্তমান মুহূর্তের ওপর মনোযোগ দিতে শিখুন।

বডি স্ক্যান মেডিটেশন: ধীরে ধীরে নিজের শরীরের প্রতিটি অংশ অনুভব করুন। কোন অংশে টান বা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে, সেটি পর্যবেক্ষণ ও শিথিল করুন।

গাইডেড মেডিটেশন: অডিও বা ভিডিওর মাধ্যমে কোনো প্রশিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণ করুন। এটি নতুনদের জন্য খুবই কার্যকর।

শেষ কথা

মেডিটেশন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত একটি কার্যকর মানসিক সুস্থতার কৌশল। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও ঘুমের সমস্যা কমানোর পাশাপাশি এটি মস্তিষ্কের গঠনগত পরিবর্তন এনে আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আবেগ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করে। সুস্থ ও সুন্দর আত্মনিয়ন্ত্রণের জন্য আপনার প্রতিদিনের অভ্যাসের অংশ করে নিতে পারেন মেডিটেশনকে।

ডা.

টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র যকর মন য গ সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা

জাপানে পড়াশোনা করার আগ্রহ থাকতে পারে অনেকের। এ আগ্রহে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ এক সুযোগ নিয়ে এসেছে দেশটির হোনজো ফাউন্ডেশন। এ ফাউন্ডেশনের হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ ২০২৬-এ আবেদন শুরু হয়েছে। এই মর্যাদাপূর্ণ জাপানি বৃত্তির মাধ্যমে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স ও পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়া যাবে। এতে রয়েছে আংশিক অর্থায়নের বৃত্তির পাশাপাশি মাসিক ভাতা, যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দিতে সাহায্য করবে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই আন্তর্জাতিক বৃত্তি মূলত তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষার্থীদের সাহায্য করার লক্ষ্যেই প্রদান করা হয়। পাশাপাশি এটি জাপান এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদার করতে সাহায্য করবে।

হোনজো ফাউন্ডেশন স্কলারশিপের উদ্দেশ্য—

১৯৯৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর জাপানের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে হোনজো ফাউন্ডেশনকে আন্তর্জাতিক বৃত্তি সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এটি প্রতিষ্ঠা করেন টাউন লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা মাসানরি হোনজো। তিনি ফাউন্ডেশনের প্রাথমিক মূলধন হিসেবে ২০ কোটি ইয়েন নগদ অর্থ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের ১০ লাখ শেয়ার দান করেন এ বৃত্তির জন্য। হোনজো ফাউন্ডেশন উন্নয়নশীল দেশের সেই সব শিক্ষার্থীকে সাহায্য করে, যাঁরা ভবিষ্যতে নিজেদের দেশকে উন্নয়নের পথে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবেন। পাশাপাশি জাপানি শিক্ষার্থীরাও বিদেশে পড়াশোনার জন্য এ বৃত্তি পেয়ে থাকেন, যা বৈশ্বিক সংযোগ ও আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

আবেদনে যোগ্যতার শর্ত

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের নিচের শর্তগুলো পূরণ করতে হবে—

—জাপান ব্যতীত সব দেশের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন।

—আবেদনকারীকে ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া কোনো গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হবে বা ভর্তির পরিকল্পনা থাকতে হবে।

—বর্তমান শিক্ষার্থী, যাঁরা এখনো ভর্তি হননি বা কর্মরত, তাঁরাও আবেদন করতে পারবেন, যদি তাঁরা এপ্রিল ২০২৬-এ ভর্তি হওয়ার পরিকল্পনা করেন।

—যাঁরা ২০২৫ সালের শরৎকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরাও এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

—প্রফেশনাল গ্র্যাজুয়েট স্কুলে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা সাধারণত যোগ্য নন, তবে বৈধ গবেষণা পরিকল্পনা জমা দিতে পারলে তাঁরা আবেদন করতে পারবেন।

বয়সসীমা

—পিএইচডি প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩৫ বছর।

—মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য সর্বোচ্চ ৩০ বছর।

—পড়াশোনা শেষ করার পর নিজ দেশের উন্নয়নে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার থাকতে হবে।

—আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার প্রতি আগ্রহী হতে হবে এবং ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও অ্যালামনাই নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করতে হবে।

—দৈনন্দিন কথোপকথনের মতো জাপানি ভাষায় কথা বলার দক্ষতা থাকতে হবে, কারণ, সাক্ষাৎকার কেবল জাপানি ভাষায় হবে।

বৃত্তির সুবিধা

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তি শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাপক আর্থিক ও একাডেমিক সহায়তা প্রদান করে:

১। পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ।

২। মাসিক ভাতা।

—১ বা ২ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার ইয়েন।

—৩ বছরের কোর্সের জন্য ২ লাখ ১০ হাজার ইয়েন।

—৪ বা ৫ বছরের কোর্সের জন্য ১ লাখ ৮০ হাজার ইয়েন।

—জাপানে যাওয়ার জন্য ট্রাভেল গ্র্যান্ট দেওয়ার সুযোগ থাকতে পারে।

—আর্থিক দুশ্চিন্তা ছাড়াই পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ।

—জাপানের সংস্কৃতিময় জীবনযাত্রা উপভোগের পাশাপাশি পড়াশোনার সুযোগ।

—বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্লোবাল নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ার সুযোগ।

হোনজো আন্তর্জাতিক বৃত্তিতে শিক্ষার্থীরা পূর্ণ টিউশন ফি মওকুফ পাবেন এবং পাবেন মাসিক ভাতা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাপানে মাস্টার্স ও পিএইচডির সুযোগ, ১-৪ বছর পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা