ভারতে ওয়াক্ফ আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই থানায় ডাকছে পুলিশ
Published: 7th, April 2025 GMT
ভারতে ওয়াক্ফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা রুজু হলেও সুপ্রিম কোর্ট জরুরি ভিত্তিতে তা শুনতে অস্বীকার করলেন।
আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাসে মামলার দ্রুত শুনানির অনুরোধ জানান আইনজীবী কপিল সিবাল।
জামায়াত–ই–উলেমা হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানির রুজু করা মামলার আইনজীবী কপিল সিবাল প্রধান বিচারপতিকে বলেন, এই আইনের বিরোধিতা করে বহু মামলা দায়ের হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান বিচারপতি যেন দ্রুত তা লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন ও সওয়াল শোনেন।
প্রধান বিচারপতি অনুরোধের জবাবে বলেন, আদালতের একটা ব্যবস্থা আছে। সেই ব্যবস্থা অনুযায়ী আদালত চলবে। সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুপুরে তাঁর কাছে পেশ করা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ওয়াক্ফ আইন চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা সুপ্রিম কোর্টে রুজু হয়েছে। জামায়াত–ই–উলামা হিন্দ ছাড়াও মামলা করেছেন এআইএমআইএম নেতা ও সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি, কংগ্রেসদলীয় সংসদ সদস্য মহম্মদ জাভেদ, আম আদমি পার্টির নেতা আমানুল্লা খান। বিহারের বিরোধী দল আরজেডির পক্ষেও সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে চলেছেন সংসদ মনোজ ঝা ও সংগঠনের নেতা ফয়াজ আহমেদ।
বিজেপি সরকারের করা ওয়াক্ফ আইনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আজ সোমবার জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভায় শাসক জোটের সদস্যরা তুমুল বিক্ষোভ দেখান। ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) পক্ষ থেকে আইনের বিরোধিতা করে এক প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা জানানো হলে স্পিকার আবদুল রহিম রাথের বলেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে এখন মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব নয়।
স্পিকারের এই রুলিংয়ের পর সভায় স্লোগান শুরু হয়। বিরোধী নেতা বিজেপির সুনীল শর্মা বলেন, পার্লামেন্ট বিল পাস করেছে। রাষ্ট্রপতি বিলে সই করার পর তা আইন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। এই অবস্থায় বিধানসভার কোনো এখতিয়ারই নেই ওই আইন নিয়ে আলোচনা করার। প্রস্তাব গ্রহণের।
শাসক দলের ভূমিকায় অখুশি পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, রাজ্য সরকারের উচিত তামিলনাড়ু সরকারের কাছে থেকে শিক্ষা নেওয়া। ওয়াক্ফ আইনের বিরুদ্ধে তামিলনাড়ু সরকার যে দৃঢ় মনোভাব গ্রহণ করেছে, তেমনই মনোভাব নেওয়া উচিত রাজ্য সরকারের। মনে রাখতে হবে, জম্মু কাশ্মীর দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একমাত্র রাজ্য।
পিডিপির পক্ষে বলা হয়, ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও সিএএ মামলা সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় বিধানসভায় প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। অথচ এবার স্পিকার তা হতে দিলেন না।
ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে উত্তর প্রদেশের মুজফফরনগরে গত শুক্রবার নামাজে অংশ গ্রহণকারীরা হাতে কালো কাপড়ের ব্যাজ বেঁধেছিলেন। সেটা ছিল তাঁদের নিরুচ্চার প্রতিবাদ। জেলা পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৩০০ মুসল্লিকে শনাক্ত করেছে। তাঁদের থানায় হাজির হওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
জেলা পুলিশের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে শহরের ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কাশ্যপ ওই ব্যক্তিদের ১৬ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেককে ২ লাখ রুপির বন্ড জমা দিতে বলা হয়েছে। ওয়াক্ফ নিয়ে তাঁরা এমন কিছু করবেন না, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়, এই মর্মে তাঁদের মুচলেকা দিতে বলা হচ্ছে।
আইন নিয়ে পাল্টা প্রচার শুরু করেছে বিজেপিও। তাদের প্রচারের অভিমুখ দুটি। প্রথমত তারা বলছে, এই আইন মুসলমানদের ধর্মাচরণে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। ওয়াক্ফ সম্পত্তি পরিচালনার ক্ষেত্রে যে অনিয়ম, বৈষম্য ও দুর্নীতি চলছে, এই আইন তা দূর করবে।
বিজেপির দ্বিতীয় যুক্তি, ওয়াক্ফের নামে মুসলিমরা দেশে ‘ভূমি জিহাদ’ চালাচ্ছে। ওয়াক্ফ বোর্ড লাগিয়ে যেকোনো জমি জবরদখল করা হচ্ছে। নতুন আইন এই প্রবণতা রুখবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব গ আইন র ব র সরক র র ব গ রহণ ফ আইন র
এছাড়াও পড়ুন:
এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়
নেতা–কর্মীদের সতর্ক করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ না থাকি, আমরা যদি সতর্ক না থাকি তাহলে এক-এগারোর মতো ঘটনা ঘটা এখানে অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘ফ্যাসিবাদ থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে আইনজীবীদের ভূমিকা: আলোচনা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এই সতর্কবার্তা দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব।
সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কিন্তু খুব একটা সূক্ষ্ম তারের ওপর দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু চারদিকে আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন, চারদিকে একটু চোখ–কান খোলা রাখেন। দেখবেন কতগুলো ঘটনা ঘটছে, যে ঘটনাগুলোর আলামত ভালো না। এদিকে একটু লক্ষ রাখতে হবে।’
দেশের মানুষ সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন কী, সেটি বোঝে না বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই চাই সংস্কার হোক। সাধারণ মানুষ কিন্তু চায় যে একটা নির্বাচন হোক, সে নির্বাচন থেকে নতুন সরকার আসুক। যে সরকার তারা নির্বাচিত করতে পারবে, যে প্রতিনিধি তারা নির্বাচন করবে। তাদের কথা বলার লোক তারা পার্লামেন্টে (সংসদ) নিতে চায়। এটা খুব সহজ হিসাব।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘এই যে বিষয়গুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এই বিতর্কগুলো তৈরি করা হচ্ছে কেন? এর পেছনে আপনি যদি মনে করেন এমনি এমনি করা হচ্ছে, তা নয়। এর পেছনে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। সেই উদ্দেশ্যটা সেই এক–এগারোতে ফিরে যাবেন, সেই উদ্দেশ্যটা, সেই একেবারে ফিরে চলে যাবেন এরশাদ সাহেবের ক্ষমতা দখল করা পর্যন্ত। এ দেশে গণতন্ত্রকে চলতে দিতে চায় না। একটা মহল আছে যারা বারবার গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরে। এমনকি শেখ মুজিবুর রহমানও এই কাজটা করেছেন একদলীয় শাসনব্যবস্থা (বাকশাল) প্রবর্তন করে।’
বিএনপি লিবারেল ডেমোক্রেসি (উদার গণতন্ত্র) চায় উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা চাই, আমাদের দেশের জনগণ তার ভোটের অধিকার ফিরে পাক। সে ভোট দিক। ভোট দিয়ে তার প্রতিনিধি সে নির্বাচিত করুক। পার্লামেন্ট (সংসদ) তৈরি হোক, সরকার তৈরি হোক। তারা চালাবে পাঁচ বছর। সেই পাঁচ বছরে যদি তারা ব্যর্থ হয়, না পারে, আবার নির্বাচন হবে। নির্বাচনে জনতা তাদের বাদ দিয়ে দেবে, অন্য দলকে দেবে। তাই তো? এই জায়গাটায় যেতে এত তর্ক–বিতর্ক কেন?
নির্বাচনের জন্য আর দেরি করা অধ্যাপক ইউনূসের সরকারের জন্য সঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শুরুতে যে ডেডলাইন (সময়সীমা), এর পরে হলে আপনি যে সম্মান নিয়ে এসেছেন, সমগ্র বিশ্বে আপনার যে সম্মান, সেই সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।’
সভায় প্রধান উপদেষ্টার সমালোচনা করে গণফোরামের সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গত এক বছরে বাংলাদেশের জন–আকাঙ্ক্ষার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন এবং পুরা জিনিসটাই আপনি সংস্কারের নামে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করে এত বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন; শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা আমার ব্যক্তিগত অপিনিয়ন (মতামত), সংস্কারের নামে অপসংস্কার কুসংস্কার তৈরি করে নিয়ে যাবেন। একটু থামেন, আপনার তো এত ম্যান্ডেট নাই। সবকিছু নিয়েই আপনি বসে পড়েছেন। জুলাই সনদ হবে, জুলাই ঘোষণা হবে, সবই ঠিক। আর কত সময় নেবেন?
তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে কিন্তু খুব বেশি সময় নাই। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর কোনো ব্যত্যয় যেন না ঘটে। আইনজীবীসহ সারা দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আবার রাজপথের আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য আমাদেরকে বাধ্য করবেন না।’
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঐকমত্য দেখি না, নির্বাচনের রোডম্যাপ দেখি না। গণতন্ত্রের পথে হাঁটুন, আইনজীবীরা কালো কোট পরে মাঠে নামলে কেউ থাকতে পারে না। নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়ে বিদায়ের চিন্তা করুন।’ সরকারে থাকা দুই তরুণ উপদেষ্টাকে যেন তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেই আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রতি জানান তিনি।
সভার শুরুতেই একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এবং ফোরামের মহাসচিব কায়সার কামালের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম, যুগ্ম মহাসচিব মো. কামাল হোসেন, মোহাম্মদ আলী, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সদস্যসচিব গাজী তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।