ভারতে ওয়াক্‌ফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক মামলা রুজু হলেও সুপ্রিম কোর্ট জরুরি ভিত্তিতে তা শুনতে অস্বীকার করলেন।

আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার এজলাসে মামলার দ্রুত শুনানির অনুরোধ জানান আইনজীবী কপিল সিবাল।

জামায়াত–ই–উলেমা হিন্দের সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানির রুজু করা মামলার আইনজীবী কপিল সিবাল প্রধান বিচারপতিকে বলেন, এই আইনের বিরোধিতা করে বহু মামলা দায়ের হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান বিচারপতি যেন দ্রুত তা লিপিবদ্ধ করার নির্দেশ দেন ও সওয়াল শোনেন।

প্রধান বিচারপতি অনুরোধের জবাবে বলেন, আদালতের একটা ব্যবস্থা আছে। সেই ব্যবস্থা অনুযায়ী আদালত চলবে। সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দুপুরে তাঁর কাছে পেশ করা হবে। তারপর প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ওয়াক্‌ফ আইন চ্যালেঞ্জ করে একাধিক মামলা সুপ্রিম কোর্টে রুজু হয়েছে। জামায়াত–ই–উলামা হিন্দ ছাড়াও মামলা করেছেন এআইএমআইএম নেতা ও সংসদ সদস্য আসাউদ্দিন ওয়েইসি, কংগ্রেসদলীয় সংসদ সদস্য মহম্মদ জাভেদ, আম আদমি পার্টির নেতা আমানুল্লা খান। বিহারের বিরোধী দল আরজেডির পক্ষেও সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে চলেছেন সংসদ মনোজ ঝা ও সংগঠনের নেতা ফয়াজ আহমেদ।

বিজেপি সরকারের করা ওয়াক্‌ফ আইনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আজ সোমবার জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভায় শাসক জোটের সদস্যরা তুমুল বিক্ষোভ দেখান। ন্যাশনাল কনফারেন্সের (এনসি) পক্ষ থেকে আইনের বিরোধিতা করে এক প্রস্তাব গ্রহণ করার কথা জানানো হলে স্পিকার আবদুল রহিম রাথের বলেন, বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে এখন মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

স্পিকারের এই রুলিংয়ের পর সভায় স্লোগান শুরু হয়। বিরোধী নেতা বিজেপির সুনীল শর্মা বলেন, পার্লামেন্ট বিল পাস করেছে। রাষ্ট্রপতি বিলে সই করার পর তা আইন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে। এই অবস্থায় বিধানসভার কোনো এখতিয়ারই নেই ওই আইন নিয়ে আলোচনা করার। প্রস্তাব গ্রহণের।

শাসক দলের ভূমিকায় অখুশি পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, রাজ্য সরকারের উচিত তামিলনাড়ু সরকারের কাছে থেকে শিক্ষা নেওয়া। ওয়াক্‌ফ আইনের বিরুদ্ধে তামিলনাড়ু সরকার যে দৃঢ় মনোভাব গ্রহণ করেছে, তেমনই মনোভাব নেওয়া উচিত রাজ্য সরকারের। মনে রাখতে হবে, জম্মু কাশ্মীর দেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একমাত্র রাজ্য।

পিডিপির পক্ষে বলা হয়, ৩৭০ অনুচ্ছেদ ও সিএএ মামলা সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় বিধানসভায় প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। অথচ এবার স্পিকার তা হতে দিলেন না।

ওয়াকফ বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে উত্তর প্রদেশের মুজফফরনগরে গত শুক্রবার নামাজে অংশ গ্রহণকারীরা হাতে কালো কাপড়ের ব্যাজ বেঁধেছিলেন। সেটা ছিল তাঁদের নিরুচ্চার প্রতিবাদ। জেলা পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ৩০০ মুসল্লিকে শনাক্ত করেছে। তাঁদের থানায় হাজির হওয়ার নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

জেলা পুলিশের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে শহরের ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কাশ্যপ ওই ব্যক্তিদের ১৬ এপ্রিলের মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেককে ২ লাখ রুপির বন্ড জমা দিতে বলা হয়েছে। ওয়াক্‌ফ নিয়ে তাঁরা এমন কিছু করবেন না, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়, এই মর্মে তাঁদের মুচলেকা দিতে বলা হচ্ছে।

আইন নিয়ে পাল্টা প্রচার শুরু করেছে বিজেপিও। তাদের প্রচারের অভিমুখ দুটি। প্রথমত তারা বলছে, এই আইন মুসলমানদের ধর্মাচরণে কোনো বাধা সৃষ্টি করবে না। ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি পরিচালনার ক্ষেত্রে যে অনিয়ম, বৈষম্য ও দুর্নীতি চলছে, এই আইন তা দূর করবে।

বিজেপির দ্বিতীয় যুক্তি, ওয়াক্‌ফের নামে মুসলিমরা দেশে ‘ভূমি জিহাদ’ চালাচ্ছে। ওয়াক্‌ফ বোর্ড লাগিয়ে যেকোনো জমি জবরদখল করা হচ্ছে। নতুন আইন এই প্রবণতা রুখবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব গ আইন র ব র সরক র র ব গ রহণ ফ আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা ২৮ জুন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের সুবিধার জন্য লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির পরামর্শ প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ পঞ্চম পর্বে থাকছে বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ বিষয়ে প্রস্তুতির পরামর্শ। পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা জজকোর্টের আইনজীবী রিয়াজুর রহমান।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২ মূলত আইনজীবীদের পেশাজীবনের অনুসরণীয় বিধিমালা। এ আইন থেকে আইনজীবী তালিকাভুক্তি লিখিত পরীক্ষায় দুটি প্রশ্ন আসবে। উত্তর দিতে হবে একটি। নম্বর থাকবে ১০।

প্রশ্নপত্রের মানবণ্টন দেখেই বোঝা যাচ্ছে আইনটি কেমন হতে পারে। মূলত বার কাউন্সিলের গঠন, আইনজীবী হওয়ার যোগ্যতা এবং একজন আইনজীবী হিসেবে সমাজের প্রতি, মক্কেলের প্রতি, সহকর্মীদের প্রতি যেসব দায়িত্ব পালন করতে হবে, তা এ আইনে বলা হয়েছে। বাস্তবধর্মী ও পেশাজীবনে অতি চর্চিত একটি আইন হলো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা ১৯৭২। এ আইন থেকে বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা করলে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব।

যেমন বার কাউন্সিল কীভাবে গঠিত হয়, বার কাউন্সিলের কার্যবালি কী, সদস্যরা কীভাবে নির্বাচিত হন, কতগুলো কমিটি রয়েছে, কমিটির কাজ কী কী—এগুলো পড়তে হবে। অনেকেই আছে বার কাউন্সিল ও বার অ্যাসোশিয়েশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না। এটি ভালো করে রপ্ত করতে হবে। এমন প্রশ্ন হরহামেশা পরীক্ষায় আসে।

এ ছাড়া বার ট্রাইব্যুনালের গঠন ও কার্যাবলি, আইনজীবীদের পেশাগত অসদাচরণের জন্য কী কী ধরনের শাস্তি রয়েছে, বার কাউন্সিল কি আইনজীবীদের বিরুদ্ধে সুয়োমোটো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে—বিষয়গুলো কোনোভাবেই বাদ দেওয়া যাবে না। অনুচ্ছেদ ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩২ এবং বিধি ৪১, ৪১ক ও ৫০–এ এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। সেগুলো ভালো করে পড়তে হবে। অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা, একজন আইনজীবী হিসেবে আরেক আইনজীবীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তর জানতে হবে। এসব বিষয় থেকে নিয়মিত প্রশ্ন আসে।

পেশাগত বিধি অংশে রচনামূলক প্রশ্ন আসতে পারে। যেমন পেশাগত বিধি এবং নীতিমালার আলোকে আদালতের প্রতি, মক্কেলের প্রতিসহ আইনজীবীদের প্রতি ও জনসাধারণের প্রতি একজন আইনজীবীর দায়িত্ব ও কর্তব্য পর্যালোচনা করতে বলা হয়। বর্তমান ঢাকা বারসহ বেশ কয়েকটি বার অ্যাসোশিয়েশনে এডহক কমিটি রয়েছে। এডহক বার কাউন্সিলের গঠন ও ফাংশনস সম্পর্কে প্রশ্ন আসতে পারে। এগুলো ভালো করে পড়তে হবে।

অনেক সময়ে আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরসংক্রান্ত মুসাবিদা করতে দেওয়া হয়। তাই এই মুসাবিদা নিয়মিত অনুশীলন করবেন। মনে রাখবেন, মামলার মুসাবিদা ও আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মুসাবিদার ধরন কিন্তু এক নয়। তাই যেকোনো ভালো একটি বই থেকে ফরমেটটি দেখে নেবেন এবং অনুশীলন করবেন। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরের প্রশ্ন সমাধান করবেন। এ আইন থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন রিপিটও হয়।

একটি বিষয় মনে রাখবেন, আইনটি সহজ বলে অবহেলা করার সুযোগ নেই। কারণ, কৃতকার্য হওয়ার জন্য এই ১০ নম্বর অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বার কাউন্সিল আদেশ ও বিধিমালা যেভাবে পড়বেন
  • দণ্ডাদেশ বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ১০ আসামির আপিল ও লিভ টু আপিল
  • যে ‘ধর্মীয় অনুপ্রেরণায়’ ইরানে এই হামলা চালাল ইসরায়েল
  • দক্ষিণ ভারতের নিষ্পেষিত মুসলিম নারীদের কণ্ঠস্বর