Prothomalo:
2025-08-01@21:56:17 GMT

৪৭ বছর আগের বিয়ের ঝাঁপি

Published: 8th, April 2025 GMT

রাজশাহী অঞ্চলে একটা প্রবাদ রয়েছে, ‘বাড়ি বলে ভেঙে দেখ, বিয়ে বলে জুড়ায় দেখ’। অর্থাৎ একটা বাড়ি ভেঙে গড়তে যেমন ঝক্কিঝামেলা পোহাতে হয়, তেমনি বিয়ের আয়োজনেও কত–কী যে জোগাড় করতে হয়, তারও ইয়ত্তা নেই। বিয়েবাড়ির শত আয়োজনের সেই রকম একটি হচ্ছে ‘বিয়ের ঝাঁপি’।

যদিও ইদানীং ঝাঁপি ছাড়াই বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। কিন্তু অতীতে গ্রামে গ্রামে আলাদা করে বিয়ের ঝাঁপি তৈরি করে নেওয়া হতো। বেতশিল্পীরা নান্দনিক এই ঝাঁপি তৈরি করে দিতেন। ৪৭ বছর আগের বিয়ের এই রকম একটা ঝাঁপি যত্ন করে তুলে রেখেছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর মহল্লার এক কনে।

তখনকার দিনে বিয়ের রেওয়াজ অনুযায়ী, কনের সঙ্গে এই ঝাঁপি দেওয়া হতো। এতে থাকত মুড়ি-মুড়কি, সন্দেশজাতীয় মিষ্টান্ন। যাঁরা অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের লোক অথবা শৌখিন মানুষ, তাঁরা মেয়ের জন্য বেতশিল্পীদের কাছ থেকে সুন্দর করে ঝাঁপি তৈরি করে নিতেন।

কয়েক দিন আগে তিনি পরিষ্কার করার জন্য সেই বিয়ের ঝাঁপি বের করেন। লাল-কালো রং দিয়ে উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের বেতশিল্পী রমণী দাস এই ঝাঁপি তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে এই ঝাঁপির দাম নিয়েছিলেন ২৫ টাকা।

এই ঝাঁপি ধরে কনের সঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার জন্য আলাদা লোক থাকত। তাঁকেই বলা হতো ঝাঁপিধরা। সত্যি সত্যিই তাঁকে শক্ত করে এই ঝাঁপি ধরে রাখতে হতো, কেননা বরযাত্রীর ভেতরে এমন লোক থাকতেন, যাঁরা ফেরার পথে ঝাঁপি খালি করে ফেলতেন। এ জন্য ঝাঁপির আবার তালা–চাবিও বানিয়ে নেওয়া হতো।

লালপুরের এই কনের নাম মমতাজ বেগম। তাঁর বয়স এখন ষাটের ওপরে। তাঁর বাবার বাড়ি একই উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামে। ১৯৭৭ সালে তাঁর বিয়ে হয় উপজেলার ভূঁইয়াপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাজদার রহমানের সঙ্গে। তিনি নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের সিআইসি পদে চাকরি করতেন।

আলাপকালে মমতাজ বেগম স্মরণ করতে পারেন, সুগার মিলের ট্রাকে চড়ে বরযাত্রী নিয়ে গিয়েছিলেন। বিয়ের দিনে বৃষ্টি হলো। তখনকার দিনে সবই কাঁচা রাস্তা। কাদায় পড়ে গাড়ি আর উঠতে পারল না। পথিমধ্যে লালপুরের রামপাড়া গ্রামে বরযাত্রীসহ রাত যাপন করতে হয়েছিল। সেই বিয়ের ঝাঁপি। এটি বড় স্মৃতিময় জিনিস। তাঁর বিয়েতে ঝাঁপি ধরে এসেছিলেন ছোট ভাই জাহাঙ্গীর আলম সরকার। বিয়ের পর কুড়ি বছর পর্যন্ত তাঁরা ভূঁইয়াপাড়া গ্রামেই ছিলেন। এরপর তাঁরা বাড়ি ভেঙে লালপুরের গোপালপুর পৌর এলাকার মধুবাড়ি মহল্লায় নতুন বাড়িতে আসেন। সেই বাড়ি স্থানান্তরের সময়ও সেই ঝাঁপি তিনি হারাননি।

এখনো সেই ঝাঁপির বেতগুলো অবিকল রয়েছে। লাল-কালো রং অনেকটা ফিকে হয়ে এলেও বোঝা যাচ্ছে যে নতুন অবস্থায় ঝাঁপিটির কেমন জৌলুশ ছিল। তালা দেওয়ার শিকলটিও ঠিক তেমনি রয়েছে।

এরই মধ্যে পরিবারে ঘটে গেছে একটি দুর্ঘটনা। ২০২১ সালের আগস্টে করোনায় আক্রান্ত হয়ে স্বামী মাজদার রহমান মারা যান। তাঁদের তিন ছেলেমেয়ের বিয়ে হয়েছে। বড় মেয়ে থাকেন অস্ট্রেলিয়ায়। ছোটটি রাজশাহীতে। ছেলেও বিয়ে করে রাজশাহী শহরে থিতু হয়েছেন। বাড়িতে বলতে গেলে মমতাজ বেগম একাই থাকেন।

কয়েক দিন আগে তিনি পরিষ্কার করার জন্য সেই বিয়ের ঝাঁপি বের করেন। লাল-কালো রং দিয়ে উপজেলার বিদিরপুর গ্রামের বেতশিল্পী রমণী দাস এই ঝাঁপি তৈরি করে দিয়েছিলেন। সেই সময়ে এই ঝাঁপির দাম নিয়েছিলেন ২৫ টাকা। সেই সঙ্গে বাড়তি পাওনা হিসেবে রমণী খেয়েছিলেন বিয়ের দাওয়াত। এখনো সেই ঝাঁপির বেতগুলো অবিকল রয়েছে। লাল-কালো রং অনেকটা ফিকে হয়ে এলেও বোঝা যাচ্ছে যে নতুন অবস্থায় ঝাঁপিটির কেমন জৌলুশ ছিল। তালা দেওয়ার শিকলটিও ঠিক তেমনি রয়েছে। মমতাজ বেগম বললেন, ঝাঁপির বেতগুলো মজবুত আছে। আবার রং করলে ঠিক আগের মতো হয়ে যাবে। এ জন্য তিনি রংমিস্ত্রিকে খবর দিয়েছেন।

মেয়েপক্ষ থেকেও ঝাঁপি পাঠানো হয়, একইভাবে ছেলেপক্ষ থেকেও ঝাঁপি পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। আসলে বিয়ের ঝাঁপি ছিল দুটি নতুন পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি সেতুবন্ধ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সেই বেতশিল্পী রমণী দাস কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তাঁর ভাই সম্পর্কের একজন বেতশিল্পী বিশ্বনাথ দাস এখনো গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেতের সামগ্রী বিক্রি করে বেড়ান। মুঠোফোনে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। বললেন, আগের লোকজন শখ করে মেয়ের বিয়ের জন্য ফরমাশ দিয়ে ঝাঁপি বানিয়ে নিতেন। এখন বেতের কাজই কমে গেছে। এখন আর কেউ বিয়ের ঝাঁপি তৈরি করে নেন না। সর্বশেষ বিদিরপুর গ্রামের শুকুরউল্লাহ শখ করে তাঁর মেয়ের বিয়েতে ঝাঁপি তৈরি করে নিয়েছিলেন। সেটাও এখন থেকে প্রায় ২০ বছর আগের ঘটনা।

হেরিটেজ রাজশাহীর প্রতিষ্ঠাতা গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী ২০০৬ সালে তাঁর মেয়ের বিয়েতে ঝাঁপি পাঠিয়েছিলেন। তার আগে তাঁর বোনের বিয়ের সময়ও ঝাঁপি পাঠিয়েছিলেন। তাঁর ভাষায়, এ অঞ্চলের বিয়ের সংস্কৃতির একটা বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিভিন্ন জিনিসসহ ঝাঁপি পাঠানো। মেয়েপক্ষ থেকেও ঝাঁপি পাঠানো হয়, একইভাবে ছেলেপক্ষ থেকেও ঝাঁপি পাঠানোর রেওয়াজ ছিল। আসলে বিয়ের ঝাঁপি ছিল দুটি নতুন পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি সেতুবন্ধ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল র পর ব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ