ভারী যানবাহন উঠলেই কাঁপাকাঁপি শুরু হয় বেইলি ব্রিজটির। যে কোনো সময় ধসে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। কয়েক বছর আগে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। সেখানে কোনো সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি। এ কারণে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে শত শত যানবহন। এ সেতু পারাপারে ভয় লাগে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
২০০৪ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঢাকা-বাঞ্ছারামপুর-মুরাদনগর সড়কের চরছয়আনি গ্রামে একটি বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রামে যাতায়াতে বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহার হয় সড়কটি। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত বাস, মিনিবাস, মালবাহী ট্রাক ও মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার চলাচল করছে। এ সড়কের বেইলি ব্রিজটি কয়েক বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। কিন্তু সেতুটির দুই পাশে নেই কোনো সতকর্তামূলক সাইনবোর্ড। অতিরিক্ত পণ্যবোঝাই গাড়ি পারাপারের সময় সেতুটি ধসে পড়তে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
চরছয়আনি গ্রামের সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যানবাহন পারাপার হওয়ার সময় কাঁপাকাঁপি করছে সেতুটি। সেতুর অনেক অংশে লোহার শিট দিয়ে ওয়েল্ডিং করে জোড়া দিয়ে রাখা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। কয়েক বছর আগে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য দেড়শ ফুটের মতো। সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের বাধানিষেধ অথবা ঝুঁকিপূর্ণ এ বিষয়টি উল্লেখ করে কোনো সাইনবোর্ড দেওয়া হয়নি। যেকোনো সময় অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন যাতায়াতের কারণে ভেঙে পড়তে পারে বেইলি ব্রিজটি।
ফরদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা সুজন মাহমুদ জানান, কয়েক বছর ধরে বেইলি ব্রিজটির অবস্থা ভালো নয়। বছর দেড়েক ধরে কোনো সংস্কার করা হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেতুর দুই পাশে সড়ক ও জনপথের লোকজন কোনো সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড দেয়নি। প্রতিদিন শত শত ট্রাক, বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করছে। যে কোনো সময় সেতুটি ধসে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মাসুদ মিয়ার ভাষ্য, পারাপার হওয়ার সময় সেতুটি দোল খায়। বছর দেড়েক আগে এটি সংস্কার করা হয়েছিল। এরও আগে কয়েকবার সংস্কার করা হয় সেতুটি। এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে এ সেতু। দুর্ঘটনা ঘটে হতাহত হলে দায় নেবে কে– এমন প্রশ্ন তাঁর।
ট্রাকচালক ফরিদ মিয়া বলেন, ‘বেইলি ব্রিজ দিয়ে পারাপারের সময় ভয়ে থাকি কখন যেন নিচে পড়ে যাই। চলাচলের সময় সেতুটি কাঁপে। বিভিন্ন জায়গায় ওয়েল্ডিং করে জোড়া দিয়ে রাখা হয়েছে।’
উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক গাজী আব্দুল হাই জানান, এ সেতু দিয়ে যাওয়ার সময় ভয় লাগে। ভারী কোনো গাড়ি উঠলে কাঁপতে
থাকে সেতুটি। এভাবে চলতে থাকলে যে কোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে। জরুরি
ভিত্তিতে নড়বড়ে বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে সেখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজামুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, দ্রুত সময়ের মধ্যে বেইলি ব্রিজটির দুই পাশে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগানো হবে। ওই জায়গায় পাকা সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অনেক সময় নাটবল্টু চুরি হয়ে যাওয়ার কারণে সেতুর মধ্যে ঝাঁকুনি হতে পারে। বিষয়গুলো দেখার জন্য লোক পাঠানো হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক ও জনপথ স স ক র কর ব র জট র সময ক বছর
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?