Prothomalo:
2025-12-13@19:07:15 GMT

দাদাভাইকে মনে পড়ে

Published: 9th, April 2025 GMT

১৯৭৯ সালে আমি ঢাকায় এসে চারুকলায় ভর্তি হই। তখন দেশের বড় সংবাদপত্র ইত্তেফাক। কুমিল্লার মানুষ শিল্পী আইনুল হক এই পত্রিকার সাহিত্য বিভাগের শিল্পী এবং শিশুসংগঠন ‘কচি–কাঁচার মেলা’র সাধারণ সম্পাদক। এলাকার মানুষ হিসেবে মাঝেমধ্যেই ইত্তেফাক–এ তাঁর সঙ্গে দেখা করি। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ইত্তেফাক–এর ফিচার সম্পাদক ও কচি–কাঁচার মেলার পরিচালক। পাশেই সাহিত্য বিভাগ দেখেন কবি আল মুজাহিদী। দাদাভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেন আইনুল হক ভাই।

‘বাকবাকুম পায়রা মাথায় দিয়ে টায়রা’ ও ‘গাধার কান’ রোকনুজ্জামান খান দাদাভাইয়ের দুটি ছড়া পাঠ্যবইয়ে পড়ে এসেছি। মানুষটাকে সামনাসামনি দেখে রোমাঞ্চিত হই। দাদাভাই আমাকে ডাকতে শুরু করেন ‘শ্রীমান’ বলে। একসময় ‘কচি–কাঁচার আসর’ ও ‘মহিলা অঙ্গন’ ক্রোড়পত্রের কিছু ইলাস্ট্রেশন করতে দেন আমাকে। মহিলা অঙ্গন পাতার সম্পাদক ছিলেন বেবী মওদুদ। ইত্তেফাক–এ গেলে আইনুল হক ভাই ও বেবী আপা আমাকে খাওয়াতেন ঐতিহ্যবাহী দেশবন্ধু হোটেলের রুটি-ভাজি।

সারা দেশে কচি–কাঁচার মেলার শাখা আসরের সংখ্যা তিন শতাধিক। সংগঠনের কাজে প্রচুর সময় দিতে হয় দাদাভাইকে। শাখা আসরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজ তো আছেই। তখন ইত্তেফাক–এর প্রচারসংখ্যা শীর্ষে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১টা–১২টা পর্যন্ত দাদাভাইয়ের কচি-কাঁচার মেলার অফিসে কাটে। ৫৮/১এ পুরানা পল্টনে ক্রীড়া নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের উত্তর পাশে কচি–কাঁচার মেলার অফিস। এখানে বসে ইত্তেফাক–এর বিশেষ সংখ্যা ও বেগম–এর চূড়ান্ত সম্পাদনার কাজটি করেন। দাদাভাইয়ের স্ত্রী নূরজাহান বেগম বিখ্যাত বেগম পত্রিকার সম্পাদক, শ্বশুর সওগাত সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন।

১৯৮৮ সালের দিকে আমি তখন দৈনিক বাংলা ভবনের সাপ্তাহিক বিচিত্রার আর্টিস্ট। দাদাভাই মাঝেমধ্যে তখন হুট করে বিচিত্রা অফিসে চলে আসতেন।

এক রুমের বিচিত্রার অফিস। গাদাগাদি করে বসতে হয়। দাদাভাইয়ের বগলে পাণ্ডুলিপির ফাইল। আমাকে ইত্তেফাক–এর ঈদসংখ্যার গল্পের ইলাস্ট্রেশন করতে দিয়ে যেতেন। দাদাভাই অফিসে এলেই সম্পাদক শাহাদত চৌধুরী, শাহরিয়ার কবির, মঈনুল আহসান সাবের—দাদাভাইকে ঘিরে দাঁড়াতেন। শাহাদত ভাইসহ অনেকেই ছিলেন কচি–কাঁচার মেলার সাবেক কর্মী। দাদাভাই চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলে চলে যেতেন অথবা বলতেন, ‘শ্রীমান, সন্ধ্যায় মেলার অফিসে এসো।’

সন্ধ্যায় মেলার অফিসে গিয়ে দেখি, দাদাভাইয়ের সামনে ঘিরে বসে আছেন কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান, শওকত আলী, বিজ্ঞানলেখক আবদুল্লাহ আল–মুতী শরফুদ্দিন, শিল্পী হাশেম খান, প্রাণেশ মণ্ডল, আবুল বার্‌ক্‌ আলভী প্রমুখ। পান খেয়ে ঠোঁট টুকটুকে লাল করে বসে আছেন কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমান। দাদাভাই বসে আছেন, তাঁর টেবিলের ওপর চিঠিপত্র, ছড়া-কবিতার স্তূপ। পেপারওয়েট দিয়ে চাপা দেওয়া। এত পেপারওয়েট কোথায় পাবেন, ছোট ছোট পাথর দিয়ে চাপা দেওয়া আছে চিঠিপত্র। সময়টা আশির দশকের মাঝামাঝি, তখনো চুয়াত্তর-পঁচাত্তরে আসা অনেক চিঠির খাম খোলা হয়নি।

আমরা শিল্পীরা বসে আছি এক এক করে গল্পের পাণ্ডুলিপি হাতে নিয়ে। তোতলাতে তোতলাতে গল্পটা সিরিয়াসলি বলে যাচ্ছেন দাদাভাই। আমরা শুনছি। কোন জায়গাটা আঁকতে হবে, তা আন্ডারলাইন করে বলে দিতেন। ইত্তেফাক–এর পর বেগম–এর ঈদসংখ্যার লেখা।

দৌড় দিয়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছা হতো, পুরো গল্পটা দাদাভাই মুখে বলতেন। চা–শিঙাড়া খাচ্ছি। দাদাভাইয়ের ডান পাশে স্ট্যান্ডের ওপর সাদা–কালো টেলিভিশন। এটা চলত প্রায়ই ঝিরঝির করে। ভেতরের মানুষগুলো এঁকেবেঁকে যাচ্ছে। দাদাভাই সেটাই মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। মাঝেমধ্যে টিভিতে চাঁটি মারছেন।

ঢাকায় পড়তে এসে আমার ঠিকানা হয় খেলাঘর অফিসে—৮২ নয়াপল্টনে। একবার ঢাকায় ভীষণ শীত পড়েছে। আমার জামাকাপড় বিশেষ কিছু নেই। একদিন সন্ধ্যায় কচি–কাঁচার অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, দাদাভাই অফিস থেকে বেরিয়ে যেতে আইনুল হক ভাইকে কী যেন বলে গেলেন। কিছুক্ষণ পর এসে একটি প্যাকেট হাতে দিয়ে বললেন, ‘খুব শীত পড়েছে, সোয়েটারটা গায়ে লাগে কি না, দেখ। না হলে পাল্টে আনা যাবে।’

কচি–কাঁচার অফিসে তিনতলায় বাচ্চাদের ক্লাস হয়। সেখানে দেয়ালজুড়ে স্থায়ী একটা প্রদর্শনীর গ্যালারি করবেন। দেয়ালে বোর্ড লাগানো হয়েছে। রং করতে হবে। রংমিস্ত্রি পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের ছুটিতে কাজটা করাতে চান দাদাভাই। তখন টাকাপয়সার অভাবে আর চলতে পারছি না। আইনুল হক ভাইকে বললাম রং করার কাজটা আমাকে দিতে। আইনুল হক ভাই দাদাভাইকে এ কথা জানালে তিনি বলেন, ‘এটা রংমিস্ত্রির কাজ। ও কেন করবে?’

আইনুল হক ভাই দাদাভাইকে রাজি করান।

আমি টুলের ওপর দাঁড়িয়ে দেয়ালে সিরিশ ঘষছি, সারা শরীরে দেয়ালের চুনকালি। খাবারের সময় দাদাভাই দেশবন্ধুর রুটি–ভাজি, শিঙাড়া নিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে থাকতেন, আমার খুব মনে পড়ে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ল র অফ স

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ছয়জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরো আটজনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।”

আরো পড়ুন:

সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত: আইএসপিআর

ঢামেক হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার

তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে  জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।”

বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ।”

তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।

নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ