ট্রাইব্যুনালের বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ: চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়
Published: 10th, April 2025 GMT
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কার্যক্রম ও বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য বিদেশি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়েছে। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) সমন্বিত ও পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
আজ দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় আজ বৃহস্পতিবার এসব অভিযোগ করেছে। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এই সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তপ্রক্রিয়ার অগ্রগতিবিষয়ক আপডেট’ প্রতিবেদনে এই বিচারপ্রক্রিয়ার ‘চ্যালেঞ্জ’ তুলে ধরার সময় এসব অভিযোগের কথা বলেন প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর অভিযোগ আনার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয়ে যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত আইনজীবী ফার্ম ডাউটি স্ট্রিট চেম্বার্সকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিতভাবে তদন্ত কার্যক্রম ও প্রসিকিউটরদের সম্পর্কে গুজব, ভুল তথ্য, মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে জনমনে, বিশেষ করে জুলাই শহীদ পরিবারদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্টের অপচেষ্টা
বিগত সরকার পতনের পর সেই সরকারের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ করেছে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। তারা বলেছে, থানা, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দলিলপত্র পুড়িয়ে বা লুকিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক স্থাপনার আকার–আকৃতি, দেয়াল ইত্যাদি ভেঙে ও বিকৃত করে প্রমাণ লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এগুলো ট্রেস (সন্ধান) করে পুনরুদ্ধার করতে কাজ করছেন।
বিভিন্ন ডিজিটাল এভিডেন্স (তথ্যপ্রমাণ), যেমন ভিডিও, অডিও, ইন্টারনেট ডেটা ইত্যাদি ডিলিট (মুছে দেওয়া) করা বা ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুছে দেওয়া সব তথ্যপ্রমাণ রিকভারি (উদ্ধার) ও রিস্টোর (স্থাপন) করার কাজ করে চলেছেন বলেও জানায় চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়।
‘বোমা হামলার চেষ্টা’
ট্রাইব্যুনালের মামলায় পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল থেকে পরোয়ানা জারি হওয়ার তথ্য আগেই আসামির কাছে চলে যাওয়ায় আসামি পালিয়ে যাওয়ার মতো কিছু ঘটনা ঘটেছে বলেও জানিয়েছে তারা। তাদের আরও অভিযোগ, প্রশাসনের অভ্যন্তরে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতি অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের অসহযোগিতা সাক্ষ্য–প্রমাণাদি গ্রহণের প্রক্রিয়াকে সময়সাপেক্ষ করে তোলে।
বিদেশে পালিয়ে যাওয়া আসামিদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় জানিয়েছে, এখানে আইনগত এবং কূটনৈতিক—দুটি ধাপেই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিদেশে পলাতক আসামি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারি করার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছে, যা বর্তমানে ইন্টারপোলের নিজস্ব পদ্ধতির মধ্যে প্রক্রিয়াধীন আছে। দ্বিতীয় ধাপে আরও ১০ জন পলাতক আসামির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিগত সরকার পতনের পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করা হয়েছে উল্লেখ করে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় জানায়, তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউশন টিমের ওপরে সরাসরি প্রাণঘাতী বোমা হামলার চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র হয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয় জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধবিষয়ক জটিল তদন্তকাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, দক্ষ ও বিশ্বস্ত তদন্তকারী কর্মকর্তার সংকট ব্যাপক। তাই স্বল্প জনবল দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর র চ ষ ট কর মকর ত সরক র র তদন ত ক ন ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী হতাহতের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার শোক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, “শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ছয়জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরো আটজনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।”
আরো পড়ুন:
সুদানে সন্ত্রাসী হামলায় ৬ বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত: আইএসপিআর
ঢামেক হাসপাতালে নিরাপত্তা জোরদার
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।”
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ।”
তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে বলা হয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল