বিরোধীদের দমনের জন্যই নতুন ‘টাস্কফোর্স’ গঠন করেছেন তুলসী গ্যাবার্ড
Published: 11th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাট দলের সিনেটর মার্ক ওয়ার্নার অভিযোগ করেছেন, বিরোধীদের শায়েস্তা করার জন্যই জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড নতুন টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। তাঁর শঙ্কা, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরোধীদের কোণঠাসা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গোয়েন্দা কমিটির সদস্য সিনেটের মার্ক ওয়ার্নার এসব অভিযোগ করেন।
ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্য থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেটিক পার্টির এই সিনেটর বলেন, ‘জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অধীনে ডিরেক্টরস ইনিশিয়েটিভ গ্রুপ (ডিগ) নামের একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। কিন্তু এটা সম্পর্কে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। অথচ জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তাঁর পূর্বসূরিরা এ রকম কোনো কিছু করার আগে আমাকে জানাতেন।’
মার্ক ওয়ার্নার বলেন, ‘নতুন টাস্কফোর্সকে আমার কাছে বিরোধীদের শায়েস্তা করার অনুমতিপত্র বলে মনে হচ্ছে। তবে এটার প্রভাব আরও সুদূরপ্রসারী হবে। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
তুলসী গ্যাবার্ডের মুখপাত্র অলিভিয়া কোলম্যান আগের দিন বুধবার বলেছেন, ডিগ সম্পর্কে সবকিছু ‘স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ’ করেছেন গ্যাবার্ড। এটা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জনসম্মুখে তুলে ধরেছেন। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাস্কফোর্সের ঘোষণা দিয়েছেন। পরে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও তিনি এই বিষয়ে কথা বলেছেন।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, তুলসী গ্যাবার্ড মঙ্গলবার ডিগের ঘোষণা দিলেও তিনি যেসব প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন, সেগুলো জানুয়ারি মাসের শুরুর দিক থেকে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।
মঙ্গলবার ফক্স নিউজকে তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, ট্রাম্পের আদেশ অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি’ নিশ্চিত করাই ডিগের উদ্দেশ্য।
তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কাজ করছেন কি না, তা তদন্ত করছে টাস্কফোর্স। এ ছাড়া গভীরভাবে জেঁকে বসা রাজনীতিকরণের মূলোৎপাটন করছে, গোপন গোয়েন্দা তথ্যের অননুমোদিত প্রকাশ সামনে আনছে এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রকাশ করছে।
তুলসী গ্যাবার্ড দাবি করেন, কিছু মেধাবী গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়ে ডিগ গঠন করা হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে ঢেলে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি ‘নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার’ কথা জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, এসব গোয়েন্দা সংস্থাকে তাঁর বিরুদ্ধে ‘অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিগ এরই মধ্যে কী কী কাজ করেছে, সেগুলোর কিছু উদাহরণ দিয়েছেন তুলসী গ্যাবার্ড। এসব কাজের মধ্যে করোনার উৎপত্তি এবং প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড নিয়ে গোপন নথি প্রকাশ অন্যতম। এর মধ্যে করোনাসংক্রান্ত নথি প্রকাশ করা হয়েছে জানুয়ারির শেষের দিকে। আর জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ডের নথি প্রকাশ করা হয়েছে মার্চ মাসের মাঝামাঝি।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে গ্যাবার্ড জানান, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এবং সিনেটর রবার্ট এফ কেনেডি হত্যাকাণ্ডের নথি প্রকাশের প্রস্তুত চলছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।