গাজীপুরের শ্রীপুরে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে ইজারার অজুহাত দেখিয়ে একটি বাজারের প্রায় এক বিঘা জমি দখলে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার উপজেলার সাতখামাইর বাজারে তাঁর নেতৃত্বে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানপাট গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এ সময় পুলিশ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 
গতকাল শুক্রবার ওই জমি চাষ করে পাটের বীজ বপন করে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় আলোড়ন দেখা দিয়েছে। 
শুক্রবার বিকেলে সাতমাখাইরে সাপ্তাহিক হাট ছিল। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জায়গা না পেয়ে পাশে সাতখামাইর-দুর্লভপুর জামে মসজিদ সড়কের ওপর বসে পণ্য বিক্রি করেন। বাজারের ইজারাদার রুহুল আমিনের ভাষ্য, হাটের জমি দখলে নেতৃত্ব দেন বরমী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন, তাঁর সৎ ভাই টফি ও সোহরাব হোসেন সোহেল নামে রেলওয়ের এক কর্মী। আফজাল এক বিঘা জমি রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারা নেওয়ার দাবি করেছিলেন। 
এলাকাবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্রীপুর থানার এএসআই কামরুজ্জামান সাতখামাইর বাজারে যান। তিনি সেখানে যাওয়ার পর পরই আফজাল, টফি ও সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বে ২০-২৫ জন ব্যক্তি কোদাল-শাবল দিয়ে ছোট ছোট অর্ধশত দোকান গুঁড়িয়ে দেয়। পরে সেদিন রাতেই ট্রাক্টর দিয়ে জমিটি চষে ফেলা হয়। শুক্রবার সকালে পাটবীজ বপন করে বাঁশের বেষ্টনী দেওয়া হয়েছে। 
স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দিন সরকার বলেন, ওই প্রভাবশালীরা মাস দেড়েক আগেও বাজারের নিরীহ ব্যবসায়ী ফারুকের একটি ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
এ বিষয়ে বিএনপি নেতা আফজাল হোসেনের দাবি, ওই জমিটি তাদের ইজারা নেওয়া। ১০ বছর আগে ইজারা নিয়েছেন। নিজের জায়গায় চাষ করেছেন। এটি বাজারের জায়গা নয়। ইজারার কাগজপত্রও আছে। 
এ বিষয়ে রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, পুলিশের উপস্থিতির বিষয়টি জানা নেই। বিষয়টি জানতে ইউএনও তাঁকে কল দিয়েছিলেন। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন। পুলিশের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে নেওয়া হবে। 
ওই থানার এএসআই কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়েছিলাম, এটি সত্য। ওই রাস্তা দিয়ে কাওরাইদ বাজারে ডিউটি করতে যাওয়ার পথে নেমেছিলাম।’
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, ‘শুনছি আফজাল হোসেন রেলের জায়গা লিজ নিয়েছেন। কিন্তু এভাবে তিনি জায়গা না নিয়ে রেলের লোকজন এসে বুঝিয়ে দিলে ভালো হতো। একজন পুলিশ কর্মকর্তা এতে সহায়তা করেছেন বলে শুনেছি। শনিবার আমি গিয়ে তদন্ত করব। রেলওয়ের সঙ্গেও কথা বলব।’
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দখল র লওয় র আফজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ