ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদ রাজ্যে ওয়াক্‌ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ–বিক্ষোভ হয়েছে। আইন বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে আবারো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজ্যেটি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বিক্ষোভ আরও কঠোর রূপ নিয়েছে। 

শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেয় শতাধিক মানুষ। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং শুরু হয় সংঘর্ষ। 

বিক্ষোভকারীদের ইট-পাটকেলে আহত হন একাধিক পুলিশ কর্মী। অগ্নিসংযোগ করা হয় পুলিশের গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সে। এছাড়া ঘটনাস্থলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ট্রাফিক কিয়স্ক, সরকারি বাস এবং রেল অফিসেও হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।সংঘর্ষ চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

সুতির সাজুরমোড়, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান সহ একাধিক এলাকায় বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফ।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে  এবং সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পূর্ব রেল সূত্রে আরও জানা যায়, ধুলিয়ানগঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় এবং অন্তত পাঁচটি ট্রেন আটকে পড়ে।

রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সরকার এই বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।” একইসঙ্গে, গুজব ছড়ানো রুখতে সতর্কবার্তা দিয়েছে রাজ্য পুলিশ।

পুরো ঘটনায় ১০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য এবং একাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত পুলিশ সদস্য এবং আন্দোলনকারীদের মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

এর আগে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে জবরদখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে এক প্রতিবেদনে বলেছে, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের কিছু নেতা এই রাজ্যে ওয়াক্‌ফ সম্পত্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে দখল করে রেখেছেন।

ওয়াক্‌ফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

গত ৩ এপ্রিল গভীর রাতে ওয়াক্‌ফ সংশোধনী বিল পাস হয় দেশটির সংসদে। এই বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি, আর বিপক্ষে ৯৫টি। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়। তারপর থেকেই ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে দেশটির বিভিন্ন গণসংগঠন।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কলক ত আইন ব ত ল র দ ব পর স থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভেবেছিলেন কিশোরী ডুবে গেছে, ১০ দিন পর ফোন করে জানাল সে গাজীপুরে আছে

১০ দিন আগে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল করতে গিয়েছিল কিশোরী সোহানা খাতুন। বাড়িতে ফিরে না আসায় পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নদীতে অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান পায়নি। তবে গত বুধবার রাতে মাকে ফোন করেছে সোহানা; জানিয়েছে সে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

নিখোঁজ হওয়া কিশোরীর নাম সোহানা খাতুন। তার বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ায়। তার বাবা গোলাম মওলা ও মা শিরিনা খাতুন।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯ জুলাই দুপুরে বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে গোসল ও কাপড় ধুতে গিয়েছিল সোহানা। দীর্ঘ সময়েও না ফেরায় তার মা নদীর ধারে যান; দেখেন, সোহানার কাপড় পড়ে আছে। এরপর স্বজন ও এলাকাবাসী তাকে খুঁজতে শুরু করেন। খবর পেয়ে ওই রাতে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল নদীতে উদ্ধার অভিযান চালায়। পরদিন খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ১২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়েও তার সন্ধান না পেয়ে অভিযান স্থগিত করে। ২১ জুলাই এক কবিরাজ এনে নদীতে খোঁজার চেষ্টাও করেন সোহানার বাবা–মা।

এমন অবস্থায় বুধবার রাতে হঠাৎ সোহানা তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে জানায়, সে ঢাকার গাজীপুরে তার প্রাক্তন স্বামীর কাছে রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান সোহানার বাবা গোলাম মওলা। তিনি বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম, মেয়ে নদীতে ডুবে গেছে। সবাই মিলে খোঁজাখুঁজি করেছি। এমনকি কবিরাজও এনেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বুধবার আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানায়, সে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে। আমরা বিষয়টি গতকাল রাতে পুলিশকে জানিয়েছি।’ বিষয়টি বুঝতে না পেরে সবাইকে কষ্ট দেওয়ার জন্য তিনি ক্ষমা চান।

স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দুই বছর আগে খালাতো ভাই কুতুব উদ্দিনের সঙ্গে পালিয়ে যায় সোহানা এবং দুজন বিয়ে করে। তবে বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগে সোহানা তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার ‘নাটক’ করে সে পালিয়ে গেছে।

এ বিষয়ে কুমারখালী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আমিরুল ইসলাম বলেন, শুরুতে পরিবারের লোকজন জানিয়েছিল, নদীতে গোসলে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে সোহানা। গতকাল আবার তার বাবা জানিয়েছে, মেয়ে গাজীপুরে প্রাক্তন স্বামীর কাছে আছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ