কুয়েটে সংঘর্ষ: তদন্তে বাধা ও অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত করার অপচেষ্টা চলছে—দাবি প্রশাসনের
Published: 12th, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের ঘটনায় তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করতে ও চলমান অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত করতে অপচেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে প্রশাসন জানিয়েছে, কিছু শিক্ষার্থী ও স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
কুয়েটে আগামী ১৫ এপ্রিল দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। তবে এখনই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। এ জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে কাল রোববার ক্যাম্পাসে ফিরে সবাই একসঙ্গে হলে ওঠার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিজ্ঞপ্তি বলা হয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘটিত অনভিপ্রেত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সব আবাসিক হল খালি করে সিলগালা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন সাপেক্ষে দ্রুত আবাসিক হল খুলে দেওয়া এবং শিক্ষা কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার লক্ষ্যে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।
কুয়েট প্রশাসনের দাবি, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত যৌক্তিক দাবিগুলোর প্রতি আন্তরিকভাবে সম্মতি দিয়েছে এবং ইতিমধ্যে অধিকাংশ দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ঘটনার প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করে যথাযথ বিচার নিশ্চিত করতে সিন্ডিকেটে গঠিত তদন্ত কমিটি নিরলসভাবে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন ১৩ এপ্রিলের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনকুয়েটে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দফায় দফায় সংঘর্ষ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫কুয়েটের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) শাহেদুজ্জামান শেখের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কিছু শিক্ষার্থী ও স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ও উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রকৃত অপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে ও চলমান অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত করতেই আইন অমান্য করে ১৩ এপ্রিল হলে প্রবেশ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে সব শিক্ষার্থীকে এ ধরনের অপপ্রচারে প্রভাবিত না হয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ও অনভিপ্রেত কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত না হতে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনায় জড়িত প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের বিচার নিশ্চিতের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধারণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুনকুয়েটে প্রথম হামলা নিয়ে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক মানুষ আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।
আরও পড়ুনকুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের মামলা, আসামি অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনকুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় সময় বাড়িয়েও প্রতিবেদন দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি০৫ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ঘর ষ র ঘটন র ঘটন য় তদন ত ক ত কর র ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. রাব্বি মিয়া (২০) নামের এক তরুণ আহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। গুলির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে আহত রাব্বির মা জোহরা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গুলিবিদ্ধ রাব্বি উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে রাব্বি পরিবারের সঙ্গে নবীনগর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিকাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নবীনগর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমান (৪৮), জাহিদ মিয়া (১৯), জুবায়েদ মুন্সী (১৯), মো. আহসান উল্লাহ (৪৪) ও মো. জসিম উদ্দিন (৪৪)। তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশিদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. সানি (২০) ও একই পাড়ার মো. জিসানের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও তর্ক হয়। একপর্যায়ে ঝগড়ার সময় সানি জিসানকে ছুরিকাঘাত করেন। এ ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ সালিস ডাকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার কালীবাড়ি মোড়ের জমিদারবাড়ির মাঠে সানিসহ তাঁর লোকজন ও জিসানসহ তাঁর লোকজন সালিসে বসেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রাব্বি সানির পক্ষের সমর্থক। তবে সালিসের রায়ে সানি ও তাঁর লোকজন সম্মত হননি। সালিস ছেড়ে ওঠার সময় জিসানসহ তাঁর লোকজন সানির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে জিসান বন্দুক বের করে গুলি করেন। এতে রাব্বি গুলিবিদ্ধ হন এবং প্রতিপক্ষের হামলায় সানি আহত হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাব্বিকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তরুণের বুকের বাঁ পাশের পাঁজরে গুলি লেগেছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গুলির ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।